আমতলীর প্রভাবশালী ভুমিহীনদের দখল থেকে রেহাই পায়নি বাসুগী খালও

সাইফুল্লাহ নাসির, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধিঃ বরগুনার আমতলী পৌর শহরের এমন কোন সরকারি সম্পত্তি নেই যা প্রভাবশালী ভুমিহীনরা দখন করেনি।তাদের দখল থেকে মুক্তি পাচ্ছেনা নদী-নালা খালও। এরই ধারাবাহিকতায় পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্হানের বাসুগী খালটি প্রভাবশালী ভুমিহীনদের দখল ও দুষনে মরা খালে পরিনত হয়েছে। এক শ্রেণির প্রভাবশালী ভুমিহীন দখলবাজরা খালটির দুই পাড় দখল করে পাঁকা স্হাপনা নির্মাণ করায় খালটি ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে মরা খালে পরিনত হচ্ছে। খালটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ নতুন বাজারের অবস্হিত হওয়ায় মাছ,কাচাঁ বাজার সহ ফলমূলের পলিথিনসহ নানা ধরনর দুষিত বর্জ্য খালটিতে ফেলার কারনে দুষিত হচ্ছে পানি এবং বাঁধাগ্রস্হ হচ্ছে পানি প্রবাহ।
বাসুগী খালটি পৌরসভার পাঁচ ও সাত নাম্বার ওয়ার্ডের সীমানা ভাগকারী খাল হিসেব পরিচিত। এবং এ এলাকা থেকেই সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন স্হানে যাতায়াত করতে হয়। প্রমত্তা পায়রার সাথে যুক্ত শত বর্ষী এই খালটি। পায়রা নদীর মোহনা থেকে প্রবাহমান হয়ে ৫শ’ মিটার পূর্বে গাজী বাড়ির সামনে থেকে খালটির দু’টি শাখা প্রবাহমান। একটি শাখা দক্ষিণ মুখী হয়ে চলে গেছে বাসুগী, নয়াভাঙ্গুলী, মানিকঝুরি ও লোচা গ্রামের দিকে। আরেকটি শাখা পূর্বমুখী নতুন বাজার মাছবাজার হয়ে সংযুক্ত হয়েছে চাওড়া খালের সাথে। খালটির আনুমানিক প্রস্ত ৪৫-৫০ মিটার। খালটিতে গাজী বাড়ীর সামনে অবস্থিত একটি লোহার সেতুর অংশ থেকে প্রায় সাড় ৩শ’ মিটার জুড়ে দুইশত পঞ্চাশ শতাংশ জায়গা দখল হয়েছে। সেতু সংলগ্ন খালের উত্তর পাড়ের অর্ধেক খাল দখল করে তলদেশ থেকে রড,ইটের গাথুনি দিয়ে মোশাররফ হাওলাদার, রুবেল হাওলাদার,সজল তালুকদার, কশাই শাহজাহান,মহিবুল্লাহ,আবু ছালেহ, শাহ আলম এবং সাইফুল ইসলামসহ অর্ধশতাধিক ব্যাক্তি পাকা ভবন নির্মাণ করে ব্যবসা বানিজ্যসহ আবাসিক ভবন তৈরী করে বসবাস করছে। সাইফুল ইসলাম নামক একজন বরফ কলও তৈরি করেছেন। এই খালের সাথে আমতলী নতুন বাজার চৌরাস্তার মোড়ে মহাসড়কের তলদেশ দিয়ে পানি নিস্কাসনের জন্য রয়েছে একটি কালভার্ট। প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে কালভার্টটির মুখ দখল করে পূর্ব প্রান্তে মোশাররফ হাওলাদার,রাজ্জাক মধা,নান্নু হাওলাদার এবং পশ্চিম প্রান্তে নুরুল ইসলাম,গনি হাওলাদার,সগির হাওলাদার ও নুরুল ইসলামসহ অন্তত ৮-১০টি দোকান ঘর তুলে ভাড়া দিয়ে মাসে হাজার হাজার টাকা আয় করছেন।
খালটির দক্ষিণ দিকেরও একই অবস্হা। উপজেলা স্বাস্থ্য  কমপ্লক্সের পিছনের অংশ থেকে শুরু করে কামাল তালুকদারের বাসা পর্যন্ত খালের অর্ধেক দখল করে পূর্ব পাড়ে হারুন হাওলাদার,সজিব প্যাদা এবং পশ্চিম পাড়ে কালাম মৃধা ও কালাম হাওলাদারসহ ২০-২৫ পরিবার দুই পাড়ে শতাধিক পাঁকা স্হাপনা, গোসলের ঘাটলা,গাছগেড়ে মাটি  এবং ইটের ভাংঙ্গা অংশ ফেলে দেড়শ’ শতাংশ জমি  ভরাট করে দখল করেছে। খালটির দুই পাড়ে এভাবে দখল করায় খালটি মৃত্যু পুরিতে পরিনত হয়েছে।খালের এই অংশ দিয়ে বর্ষা মৌসুমে বাসুগী, নয়াভাঙ্গুলী,মানিকঝুরি ও লোচাসহ ৪-৫টি বিলের পানি ওঠা নামা করে। অবৈধভাবে এভাবে খাল দখল করায় এখন পানি প্রবাহ বাঁধগ্রস্হ হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে সঠিক ভাবে পানি নামতে না পারায় অধিকাংশ সময় উল্লেখিত গ্রামগুলোত জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
এছাড়াও দুই পাড়ের দখলদার এবং মাছবাজার ও ফল পট্টির পলিথিনসহ নানা ধরনের বর্জ্য প্রদিদিন ফেলা হচ্ছে বাসুগী খালে।মাছ বাজারের পূর্ব পাশে রয়েছে একটি গণশৌচাগার। এই শৌচাগারের মলমূত্র পাইপের মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয় বাসুগী খালে ফলে প্রতিনিয়ত দুষিত হচ্ছে এ খালটি। এই  খালের উত্তর পারে মাছ এবং সবজি বিক্রেতাদের জন্য একটি টিনসেড বাজার রেয়েছ এই বাজারের ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন পলিথিনসহ নানা ধরনের বর্জ্য বাসুগী খালে ফেলছে।
৯ই নভেম্বর শনিবার সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় বাসুগী খালের মাছ বাজারের অংশ এবং চাওড়া খালের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র কালভার্টের উপর এবং হাসপাতালের পিছনেসহ ১ কিলোমিটার জুড়ে খাল দখল করে শতাধিক পাঁকা স্হাপনা তৈরী করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বরফকল এবং আধাঁপাকা আবাসিক ভবনসহ একাধিক স্হাপনা তৈরী করায় বাসুগী খালটি এখন সংকুচিত হয়ে গেছে। এবং প্রতিদিন পলিথিনসহ নানা ধরনের বর্জ্য খালে ফালানোর কারনে পলিথিন জমে তলদশে ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন পানি প্রবাহ অনেকটা বাঁধা গ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে দুষিত এসকল বর্জ্য পানিতে মিশে প্রতিনিয়ত দুষিত হচ্ছে বাসুগী খালর পানি।
অভিযুক্ত দখলদারদের মধ্যে মোঃ নুরুল ইসলাম বলন,ব্যবসার জন্য আমাদের কোন জায়গা না থাকায় সরকারী জমিতে ঘর তুলে ব্যবসা করছি। সরকার যদি না থাকতে দেয় তাহলে আমরা চলে যাবা।
আরেক অভিযুক্ত বরফ কলের মালিক মোঃ সাইফুল ইসলাম মোল্লা খাস জমিতে বরফ কল নির্মাণের কথা স্বীকার করে বলেন, জায়গা খালি থাকায় এবং মাছ ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে বরফ কল বসিয়েছি। সরকার না চাইলে বরফ কল অন্যত্র সরিয়ে নিব।
বাসুগী গ্রামের কৃষক গফফার প্যাদা বলেন, বাসুগী খাল দখলের ফলে পানি প্রবাহ সঠিক ভাবে না থাকায় বর্ষা মৌসুমে এই গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে অনেক সময় বাড়ি ঘরও তলিয়ে যায়। ফসল বিনষ্ট হয়।
নয়াভাঙ্গুলী গ্রামের কৃষক শামীম চাপরাসী বলেন, বাসুগী খাল দখলের ফলে আউষ আমন সঠিক ভাবো চাষ করা যায় না। পানি জমে থাকার কারনে জলবদ্ধতায় ফসল পচেঁ নষ্ট হয়ে যায়।
ব্যবসায়ী নেতা এবং স্হানীয় বাসিদা কামরুজ্জামান হিরু মৃধা বলেন, নতুন বাজার চৌরাস্তায় অবস্হিত কালভার্ট থেকে সামসুল হক গাজী বাড়ী পর্যন্ত বাসুগী খাল যেভাবে দখল হয়েছে তাতে একদিন খালটির অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। খালটি দখল মুক্ত করা প্রয়োজন।
নাম প্রকাশে অনিছুক কয়েকজন স্হানীয় বাসিদা বলেন, যেভাবে বাসুগী খাল দখল এবং দুষন হচ্ছে তাতে মনে হয় অল্প সময়োর মধ্যে খালটির অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে।
মাছ বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সম্পাদক মোঃ বারেক প্যাদা বাসুগী খালে ময়লা আবর্জনা এবং মাছ পরিবহনের বর্জ্য ফালানোর কথা স্বীকার করে বলেন, পৌরসভা ময়লা ফালানোর জন্য নির্দিষ্ট স্হানের ব্যবস্হা করলে আমরা সেখানে ময়লা ফালাবো।
আমতলী উপজলা পানি উনয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, পানি উনয়ন বোর্ডের খাস জমি শনাক্ত করে অবৈধ দখলদারদর উচ্ছেদ করা হবে।
আমতলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারেক হাসান বলেন,সরজমিনে তহশীলদার পাঠিয়ে তদন্ত করা হবে। অবৈধ দখলদারদর  চিহ্নিত করে তাদের উচ্ছেদ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.