কালাইয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্যালাইন সংকটে রোগীরা চরম বিপাকে

মোঃ মোকাররম হোসাইন, জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ৫০শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চলতি বছরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গত জুলাই থেকে রোগীদের জন্য ব্যবহৃত নরমাল স্যালাইনের ও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

হাসপাতালে ও স্যালাইনের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে ।দীর্ঘ দিন যাবত হাসপাতালে এ স্যালাইন না থাকায় কোনোও দুর্ঘটনা পেটব্যথা,আমাশয়, রক্তক্ষরণ, উচ্চরক্তচাপ, শারীরিক দুর্বলতা কিংবা অপারেশনের রোগীর জন্য স্যালাইন স্বজনরা বাহিরের ফার্মেসীতে গিয়ে ছুটাছুটি করতে দেখা যায়।চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় প্রতিদিন এমন দুর্ভোগে পড়ছেন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার শত শত রোগী ও তাদের স্বজনরা। বিড়ম্বনার শিকার হয়ে চড়া মূল্যে স্যালাইন কিনেত হচ্ছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সুত্রে জানা গিয়েছে যে সরকারিভাবে চাহিদামতো হাসপাতালে নরমাল স্যালাইন সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না।ফলে জীবন রক্ষাকারী এই পণ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।ভর্তি হলে চিকিৎসা সেবার শুরুতেই বেশির ভাগ রোগীকে ধরন অনুযায়ী ডিএনএস, সিএস, এইচএস, ডিএ ৫%, ডিএ ১০% স্যালাইনগুলো পুশ করা হয়।কলেরা স্যালাইনের তেমন সংকট না থাকলেও অন্যান্য স্যালাইন গুলোর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।গত কয়েক মাস ধরে এই সংকট চলছে।রোগীর স্বজনদের বাইরে থেকে স্যালাইন আনতে বললে হাসপাতালের স্লিপ দেখলেই ফার্মেসী থেকে স্যালাইন নাই বলে রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

জিন্দারপুর ইউনিয়নের রোগীর স্বজন আমজাদ হোসেন বলেন,বিভিন্ন দোকান ঘুরে স্যালাইন বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে ।এমনিতেই হাসপাতালে অনেক খরচ,তার মধ্যে স্যালাইন দেয় না আবার বাইরে থেকে বেশি দামে কিনতে‌ হয়।এই স্যালাইন সংকট নিরসন করা খুবই জরুরী প্রয়োজন।

শাওন ফার্মেসীর মালিক মোঃ শাহারুল আলম বলেন, অনেকদিন ধরেই স্যালাইনের সংকট চলছে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কম রয়েছে স্যালাইনের।কোম্পানীর কাছে যে পরিমাণ অর্ডার দেওয়া হয় তা তারা সরবরাহ করতে পারে না।

কালাই পৌর সদরের ঔষুধ ফার্মেসীর মালিক মোঃ ইউনুস আলী বলেন, গত এক মাস থেকে স্যালাইনের খুবই সংকট, রোগীরা চাইলেও দিতে পারছি না।কোম্পানীরা কিছু স্যালাইন দিলেও তা শেষ হয়ে যায়।তাদের কাছে চাইলে তারা বলে সাপ্লাই নেই।তাই যে দু-চারটা স্যালাইন দেয় তা একঘণ্টাও দোকানে থাকে না।দিনভর রোগীর স্বজনরা দোকানে এসে ফেরত যান।

কালাই উপজেলায় নিযুক্ত বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর রিপ্রেজেনটেটিভদের কাছে স্যালাইন না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন,‘উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদামত স্যালাইন সরবরাহ করছে না।১শো স্যালাইন চাওয়া হলে দিচ্ছে মাত্র ০৮ থেকে ১০টি।ডেঙ্গু রোগীর পরিস্থিতি ঊর্ধ্বমুখীর পর থেকেই নরমাল স্যালাইনেরও একদম সরবরাহ নেই বললেই চলে।পর্যাপ্ত উৎপাদন না থাকার কারণেই এমন সংকট সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানী গুলো।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা.জুয়েল বলেন,বহুদিন ধরেই নরমাল স্যালাইনের খুবই সংকট চলছ।এমন পরিস্থিতি থাকলে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে তাদেরকে চরম হিমশিম খেতে হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.ফয়সল নাহিদ বলেন,‘স্যালাইনের সংকট চলছে।আমরা হিমশিম খাচ্ছি ,যেসব কোম্পানী স্যালাইন বানায়,তারা যদি দেয়,তাহলে সংকট থাকবে না।যে পরিমাণ স্যালাইন তারা দিয়েছে,তার চেয়ে চাহিদা বেশি।সে কারণে সংকট দেখা দিয়েছে।

কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাত আরা তিথি বলেন,স্যালাইন মজুদ রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরির কোনো সুযোগ নেই।কেউ যদি করে থাকে,আমরা যদি জানতে পারি তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.