কালাইয়ে কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা   

মোঃ মোকাররম হোসাইন কালাই জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ জয়পুরহাটে কালাই উপজেলায় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন হাট-বাজারে টুং টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে কামার পাড়াগুলো। বেড়ে যায় কারিগরদের ব্যস্ততা।

এরই ধারাবাহিকতায় হাতুড়ি পেটা শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে কালাই কামারপাড়া। সারাদিন তপ্ত ইস্পাত গলিয়ে চলছে পশু জবাই ও মাংস কাটার জন্য ছুরি, চাপাতি, দা, বঁটিসহ নানাবিধ সরঞ্জাম তৈরির কাজ। দম ফেলারও সময় নেই কামারদের। নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করছেন তারা। কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, কালাই  কামারপাড়া  কেউ ভারি হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছেন আগুনরঙা লোহার খণ্ড। কেউ পুরনো দা-ছুরিতে শাণ দিচ্ছেন। কেউবা হাপর টানছেন। কেউ আবার কয়লার আগুনে বাতাস দিচ্ছেন। বিভিন্ন কামারের দোকান ঘুরে দেখা যায় দা, ছুরি, চাকু ও বঁটির বেচাকেনা বেড়েছে। দামও সন্তোষজনক। এ উপজেলার কামারপাড়ার কারিগররা অভিযোগ করেন, তাদের পরিশ্রমের তুলনায় মজুরি অনেক কম। সারাদিন আগুনের পাশে বসে থাকতে হয়।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সারা দেশেই কমে যাচ্ছে কামার সম্প্রদায়। বাধ্য হয়ে পৈত্রিক পেশা পরিবর্তন করছেন অনেকে। কয়েকজন ক্রেতা জানান, কোরবানি ঈদের বেশ কিছুদিন বাকি । তাই আগেই পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম কেনার কাজটি সেরে ফেলছেন।

তবে অন্য বছরের চেয়ে এবার ছুরি, চাকু, বঁটির দাম একটু বেশি বলে জানান তারা। কামাররা জানান, ঈদ এলে লোহার দাম না বাড়লেও কয়লার দাম বেড়ে যায়। ফলে তাদের ব্যবসা চালাতে বেশ বেগ পেতে হয়। কামার শিল্পীদের দাবি, সরকার যেন এ শিল্পে ভর্তুকি দিয়ে তাদের বেঁচে থাকার একটা সুব্যবস্থা করে দেয়। কামার একটি প্রাচীন পেশা যার কাজ লোহার জিনিসপত্র তৈরি করা। পেশাগতভাবে গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার্য লৌহজাত সামগ্রী তৈরি করেন। অতি প্রাচীনকাল থেকেই হিন্দু সমাজের শূদ্র সস্প্রদায় গ্রামাঞ্চলে কামার পেশায় জড়িত।

কৃষিকাজ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বঙ্গভূমিতে কামার পেশার উৎপত্তি ঘটে। হিন্দু সমাজের শূদ্র সস্প্রদায়ের মধ্যে লোহার কারিগর তথা কর্মকার শ্রেণির আবির্ভাব ঘটে। প্রচলিত লোককাহিনী মতে কোনো এক শূদ্র মহিলার সঙ্গে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার প্রণয় থেকে কর্মকার বা কামারের জন্ম হয়।

বছরের অন্যান্য দিন গুলোতে তেমন কাজ না থাকায় অলস সময় কাটাতে হলেও কোরবানির ঈদের সময়টাতে তাদের কর্ম ব্যস্ততা বেড়ে যায়। এ সময়টাতে তাই প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করতে হয় তাদের। প্রতিবছর কোরবানির ঈদে তাদের জিনিসপত্রের কেনা-বেচা বেড়ে যায়। এ থেকে অর্জিত টাকায় সারা বছরের খোরাক জোগাড় করেন।

কালাই উপজেলার  ব্যবসায়ী শ্রী গৌরাঙ্গ   বলেন, বর্তমানে প্রতিটি জিনিস পত্র  বিক্রি হচ্ছে  প্রকারভেদে মজুরি নেওয়া হচ্ছে , “৭০০টাকা কেজি দরে দা-কুড়াল, হাসুয়া-বটি ২৫০-৩০০ টাকা ও ছুড়ি ১৬০-১৫০ দা

২০০-৪০০ টাকা , বড় ছুড়ি বিক্রি  হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত । সব জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। দা, বটি, ছোরা, চাকুর পাশাপাশি মাংস বানানোর কাজের জন্য গাছের গুঁড়ির চাহিদাও বেড়েছে ব্যাপক।

কালাই পৌরসভার সুজন মহন্ত  কর্মকার জানায়, এখন ব্যবসায় মন্দা চলছে। কোরবানী ব্যতিত বছরের অনান্য মাসগুলোতে আমারা কোনমতে দিন পার করছি। বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নেওয়ায় ঋণ পরিশোধে আমাদের হিমশিত খেতে হচ্ছে। একারণে অনেকেই পেশা বদলিয়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.