কালাইয়ে বিএনপির কমিটি গঠন কেন্দ্র করে দুইপক্ষের চরম উত্তেজনা

মোঃ মোকাররম হোসাইন জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি:  গত শনিবার জয়পুরহাট সদর থানা বিএনপি ও পৌর কমিটি ঘোষণায় কালাই উপজেলায় পক্ষে-বিপক্ষে আনন্দ ও প্রতিবাদ মিছিলকে কেন্দ্র করে বিএনপির বিবদমান দুই গ্রুপের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয় ।
গতকাল রবিবার বিকেলে জেলার কালাই বাস স্ট্যান্ড এলাকায় এ উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে।
আনন্দ মিছিলের পক্ষে নেতৃত্ব দেন কালাই থানা বিএনপির আহবায়ক ইব্রাহিম হোসেন। তিনি জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলজার হোসেন গ্রুপের সমর্থক। আর প্রতিবাদ মিছিলের নেতৃত্ব দেন জেলা বিএনপির সদস্য আনিসুর রহমান তালুকদার। তিনি জয়পুরহাট শহর বিএনপির আহবায়ক মতিয়র রহমান গ্রুপের সমর্থক।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা আক্তার জাহান, পুলিশ এবং সেনা সদস্যের নিয়ে উদ্ভূত ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। তবে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে উপজেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ১ নভেম্বর (শুক্রবার) রাতে সদর উপজেলা ও পৌর বিএনপির ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলের  ভোট হয়। এর আগে শুক্রবার শহরের নতুন হাটের গোহাটীতে সদর উপজেলা ও শহর শাখা বিএনপির সম্মেলন আয়োজনের ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু দলের একটি পক্ষের নেতাকর্মীদের সম্মেলনে রাখা হয়নি বলে অভিযোগ তুলে তারা বুধবার সন্ধ্যায় এবং বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কের বিরুদ্ধে শহরে মশাল ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে তারা শুক্রবার নতুন হাটে পাল্টা সম্মেলনের আহ্বান করেন।
একই স্থানে একই সময়ে পাল্টাপাল্টি সম্মেলনের ঘোষণায় বিএনপির দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় বৃহস্পতিবার বিকেলে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শুক্রবার সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত নতুনহাট এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে বিজ্ঞপ্তি দেন।
এরপর শুক্রবার রাতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেনের বাসায় ভোট নেওয়া হয়। এতে জয়পুরহাট সদর উপজেলা শাখার সভাপতি পদে হেনা কবির ও সাধারণ সম্পাদক পদে আবু বক্কর সিদ্দিক নির্বাচিত হন। আর শহর বিএনপির সভাপতি পদে অধ্যাপক আমিনুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক পদে আবু রায়হান উজ্জল প্রধান নির্বাচিত হন। এ ছাড়াও একই সাথে সদর উপজেলা ও শহর শাখার দুজন করে মোট চারজন সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন।
তবে দলটির মতিয়র রহমান পক্ষের নেতাদের কাউকে কাউন্সিলে রাখা হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। এরই প্রতিবাদে দলটির ওই পক্ষের নেতা-কর্মীরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে এর বিপক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শনিবার বিকেলে জেলার কালাই বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আনিসুর রহমান তালুকদারের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল করেন মতিয়র রহমান পক্ষের কর্মী-সমর্থকরা। একই উদ্দেশ্যে আজ রোববার সন্ধ্যায় মশাল মিছিল করার জন্য বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মতিয়র রহমান পক্ষের কর্মী-সমর্থকরা জড়ো হচ্ছিল।
অন্যদিকে, কালাই বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরত্বে সদর উপজেলা ও পৌর বিএনপির ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে বিজয়ীদের সমর্থনে আনন্দ মিছিলের জন্য জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলজার হোসেন গ্রুপের  সমর্থকরা জড়ো হতে থাকে।
এতে দুই গ্রুপের পক্ষে বিপক্ষে মিছিলকে কেন্দ্র করে একপর্যায়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং একপর্যায়ে উভয়পক্ষ মারমুখির প্রস্তুতি নিতে থাকে। খবর পেয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহাহতায় পরিস্থিতি নিযন্ত্রণ আনেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কালাই উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ইব্রাহিম হোসেন আনন্দ মিছিলের প্রস্তুতির কথা অস্বীকার করে জানান, রোববার দুপুরে বরাবরের মতো কালাই তুলাপট্টি এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন তিনি। তাঁর সাথে দেখা করতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-মহল্লা থেকে নেতাকর্মীরা সেখানে জড়ো হতে থাকে। এর বেশি কিছু নয়।
জেলা বিএনপির সদস্য আনিসুর রহমান তালুকদার জানান, জয়পুরহাট সদর থানা ও পৌর বিএনপির একতরফা নতুন কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে আজ রোববার সন্ধ্যায় তাদের মশাল মিছিল হওয়ার কথা ছিল। সে জন্য কালাই বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা সেখানে জড়ো হচ্ছিল। কিন্তু তাঁদের সেই কর্মসূচি বানচাল করতে, ইব্রাহিম হোসেন তাঁর লোকজনকে তুলাপট্টি লাঠি সোটা নিয়ে জড়ো হতে থাকে । এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
এ বিষয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও শামীমা আক্তার জাহান বলেন, আজ দুপুরে ওসির মাধ্যমে বিএনপির দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার কথা জানতে পারি। এরপর দুপক্ষের নেতাদের সাথে কথা বলি। এরপর আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহাহাতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.