কালাইয়ে বৃদ্ধের সরিষা ক্ষেত কর্তন করতে না দেওয়ার অভিযোগ

মোঃ মোকাররম হোসাইন, কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধিঃ জয়পুরহাটের কালাইয়ে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে বৃদ্ধ আফতাব আলীর পাকা সরিষা ক্ষেত কাটতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে। ফলে জমিতে ঝড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে পাকা সরিষা। জমি দখল নিয়ে মারপিটের ঘটনায় উভয় পক্ষের আদালতে মামলাও চলমান রয়েছে। ক্ষেত থেকে পাকা সরিষা কাটার জন্য বৃদ্ধ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না।
মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষেতে পাকা সরিষার গাছ বিবর্ণ রং ধারণ করে ঝরে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। ক্ষেতের সরিষা আরো সপ্তাহ খানেক আগে সংগ্রহ করা উচিত ছিল। জমির মালিক বৃদ্ধ আফতাব আলী প্রভাবশালীদের বাধার কারণে ফসল কাটতে পারছেন না। প্রাণনাশের হুমকি থাকায় তিনি ফসলের ক্ষেতে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না।
স্থানীয়রা জানায়, ৫০ বছরের অধিক সময় ধরে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের বানিহারা গ্রামের মাঠে পাঁচ বিঘা জমি নিজ দখলে রেখে চাষাবাদ করে আসছেন বৃদ্ধ আফতাব আলী মন্ডল। হঠাৎ করে সেই জমি একই গ্রামের বাসিন্দা আবু তাহের, তাঁর ভাই আতাউর রহমান ও আশরাফ মিলে নিজেদের বলে দাবি করেন। তাঁরা ওই জমিগুলোতে বৃদ্ধের রোপণকরা পাকা সরিষা কাটতে দিচ্ছেন না। ফলে সরিষা পেকে জমিতেই ঝড়ে যাচ্ছে।
বৃদ্ধের শ্রমিকরা জমিতে ফসল কাটতে গেলেই প্রতিপক্ষরা বাঁধা দিচ্ছে। বৃদ্ধ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলী আকবরসহ প্রশাসনের কাছে বিচার চেয়েও সুরাহা পাচ্ছেন না। এর আগে সরিষা রোপণের সময় বৃদ্ধের ছেলে আব্দুল আলিমকে প্রভাবশালীরা মারপিটও করেছে। ওই ঘটনায় উভয় পক্ষের দায়ের করা মামলা আদালতে বিচারাধীন।
কৃষক আফতাব আলী অভিযোগ করেন, জমির দলিলপত্র সঠিক থাকার পরও কেন প্রতিপক্ষরা আমাকে এতো নির্যাতন করছে।
আর কেন তাঁরা পাকা ফসল কাটতে গেলে বাধা দিচ্ছে। জমি যদি তাদেরই হয়, তাহলে আদালত রয়েছে, তাঁরা জমি নিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। আদালত যে রায় দিবে সেটা মেনে নেব।
তিনি আরো বলেন, ‘আজ আমার জনবল নেই বলে পাকা ফসল কাটতে পারছি না। একমাত্র ছেলেকে তাঁরা বেধম মারপিট করেছে। আমি প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।’
বানিহারা গ্রামের বাসিন্দা মাহফুজার রহমান বলেন, আফতাব আলী দীর্ঘদিন ধরে ওই জমিগুলোতে চাষাবাদ করছেন। হঠাৎ করে ২/৩ মাস থেকে আবু তাহের ও তাঁর ভাইয়েরা এই জমিগুলো তাদের বলে দাবি করছে। গ্রামে শালিশ বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু তাঁরা কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। কী মূলে তাঁরা এই জমিগুলো নিজেদের দাবি করছে তা স্পষ্ট নয়। এ নিয়ে জমিতে মারামারিও হয়েছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের মামলাও চলমান।
আফতাব আলীর প্রতিবেশী আমজাদ হোসেন বলেন, ‘দলিলপত্রে জমির মালিক আফতাব আলী। দখলেও তিনি। কেন যে তাঁরা জমির ফসল কাটতে দিচ্ছে না তা বুঝতে পারছি না। আসলে গায়ের জোরে সবকিছু হয় না। আবু তাহেররা যা করছে তা আফতাব আলীর সাথে অন্যায় করছে। এ ঘটনা গ্রামের অন্য কারো সাথে হলে ঠিকই তাঁরা বুঝতে পারতো।’
অভিযুক্ত আবু তাহের বলেন, ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আফতাব আলী এই জমিগুলো জোর করে নিজ নামে খতিয়ানভুক্ত করে নিয়েছে। খতিয়ান সংশোধনের মামলাও করেছি। আইনজীবী বলেছেন জমিগুলো দখলে নিতে হবে, তাই জমি দখলে নিতে ফসল কাটতে দিচ্ছি না। যা করার সে করবে কিন্তু দখল ছাড়ব না।’
স্থানীয় আহম্মেদাবাদ ইউনিয়ন (ইউপি) পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আকবর বলেন, ‘আমার পরিষদে এ নিয়ে শালিশও হয়েছে। আফতাব আলীর নামে জমির সব কাগজপত্র সঠিক রয়েছে। আমি তাদের নিষেধও করেছি। খতিয়ান সংশোধন ও মারপিটের ঘটনায় মামলাও চলমান রয়েছে। আবার নতুন করে এই ঘটনা তাঁরা ঘটিয়েছে।’
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াসিম আল বারি বলেন, ফসল নষ্টের বিষয়ে শুনেছি, তবে এ বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.