কালাইয়ে যাত্রীছাউনি বিদ্যমান থাকার পরেও যাত্রীবাহী বাস থামেনা

মোঃ মোকাররম হোসাইন কালাই জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ ২\৫\২৩ গণপরিবহনের যাত্রী ওঠা-নামার জন্য বাস স্টপেজের জন্য নির্ধারিত স্থান চিহ্নিত করা থাকলেও কোনো বাসই সেখানে থামছে না।
রাস্তার মাঝে কিংবা পাশেই কোলাহল ও জন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে গিয়ে থামছে। ফলে ঠেলাঠেলি করেই ওঠা-নামা করছেন যাত্রীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জয়পুরহাট-বগুড়া আঞ্চলিক মহাসড়কে যাত্রী সাধারণের চলাচলের উপকার্থে ১৯৮৬ সালে জয়পুরহাট জেলা পরিষদের অর্থায়নে কালাই সদর রাস্তার উত্তর পার্শ্বে যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হয়। ২০১৬/১৭ অর্থ বছরে কালাই পৌরসভার উদ্যোগে বর্তমান যাত্রী ছাউনিটি আধুনিক মানের যাত্রী ছাউনি হিসাবে গড়ে তোলা হয়।এর সাথে পৌর এলাকায় আরও দুটি যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা থাকলেও নির্ধারিত স্থানে বাসগুলো না থেমে সড়কের যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী তুলছে পরিবহন শ্রমিকরা। নির্দিষ্ট স্টপেজ গুলোতে যাত্রীদের  অপেক্ষা করতে আর দেখা যায় না।এলোমেলোভাবে তাড়াহুড়ো করে বাসে চড়তে দেখা যায় যাত্রীদের। ফলে সড়কে বিশৃঙ্খলা থেকেই যাচ্ছে।
রাস্তায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট আর যানজট থেকেই ঘটছে ভ্যান, ভটভটি,ইজিবাইক,সিএনজি ও মোটরসাইকেলের সাথে সংঘর্ষে মারাত্মক দুর্ঘটনা।এ-ই দুর্ঘটনায় প্রায়ই অনেকেই মারাত্মক জখম হন বা কেউ মৃত্যুর মুখে পতিত হন। পৌরসভার তদারকির অভাবে দিন দিন যাত্রী ছাউনির রাস্তাটি মিনি ভ্রাম্যমাণ মার্কেটে পরিণত হচ্ছে।
জানা গেছে, যাত্রী ছাউনির রাস্তায় মাছের দোকান, ভ্রাম্যমান কাপড়ের দোকান, জুতার দোকান, কখনোবা মটরসাইকেল ও সিএনজি গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়েছে। মাঝে মাঝে ভবঘুরে, মাদকাসক্তদের আড্ডা আবার কখনও মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে।যাত্রী ছাউনির সামনে যাত্রীবাহী বাস না থামানোর কারণে ছাউনির একটি কক্ষে খোলা বাজারের চাল-আটা বিক্রি করতে দেখা গেছে।অন্য কক্ষে বাস-মালিক সমিতির সদস্যরা দখলে নিয়ে আছে।
নির্ধারিত স্থানে না দাঁড়িয়ে যেখানে সেখানে যাত্রী তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে চালক জিয়া উদ্দিন বলেন,যাত্রী ছাউনিতে যাওয়ার রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ মাছের দোকান,তরমুজের দোকান,যত্রতত্র মোটরসাইকেল,সিএনজি রাখার কারণে আমরা নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে বাস থামাতে পারি না। এজন্য যাত্রী ছাউনিতে না দাঁড়িয়ে রাস্তার মোড়ে বাস থামাতে হয়, যাতে করে যাত্রীরা বাসে উঠতে পারে।তাই বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়েই গাড়িতে যাত্রী উঠাতে হয়।
যেখানে সেখানে যাত্রী তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে আরেক চালক রেজাউল হক বলেন, পাঁচশিরা মোড় থেকে বাস স্টপেজ একটু দূরে তৈরি করা হয়েছে। বাস স্টপেজে যাত্রী না দাঁড়িয়ে এই পাঁচশিরার তিনমাথা মোড়েই যাত্রীরা বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে বাধ্য হয়েই রাস্তা থেকে যাত্রীদের তুলে নিতে হয়।
নির্ধারিত স্থান ছাড়া কেন গাড়িতে উঠছেন জানতে চাইলে যাত্রীরা বলেন,বাস যাত্রী ছাউনির নির্ধারিত স্থানে দাঁড়ায় না বলেই যাত্রীরাও বাস স্টপেজে না দাঁড়িয়ে, মহাসড়কের মোড়ে বাস আসতেই ঝুঁকি নিয়ে আমরা বাসে উঠে পড়ি। যাত্রীছাউনি বা স্টপেজে বাস না থামার জন্য চালকদের দোষারোপ করেছেন যাত্রীরা।
এদিকে যাত্রীরা বলছেন, ‘দেখেন, বাসগুলো যাত্রী ছাউনিতে না দাঁড়িয়ে মোড় থেকেই যাত্রী উঠিয়ে নেয়। বাস স্টপেজে দাঁড়ানোর আগ্রহ তাদের নেই। সে কারণে কোনও যাত্রী বাস স্টপেজে দাঁড়ায় না। আমরা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। বাসগুলো এখানে আসছে না। বাসগুলো যেখান-সেখানে যাত্রী না নিলে সব যাত্রী যাত্রী ছাউনিতেই আসতে বাধ্য হবে।’
এদিকে যাত্রী ছাউনিতে যাত্রীবাহী বাস না দাঁড়ানোর বিষয়ে কালাইয়ের সচেতন মহল মনে করছেন, যাত্রী ছাউনিতে দাঁড়ানো নিয়ে আইনের কোনো ধরাবাঁধা নিয়মের প্রয়োগ না থাকার কারণে যেখানে সেখানে বাস থামিয়ে লোক উঠানো ও নামানো করা পরিবহন চালকদের একটা অতি সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে। আর এই যাত্রীরা গাড়িতে উঠার জন্য রীতিমতো রাস্তার অর্ধেক দখল করে থাকে। যাত্রীবাহী বাস আসলে, চলে প্রতিযোগিতা,কে আগে উঠবে!!আর সেই প্রতিযোগিতা না করেও তো উপায় নেই।নির্দিষ্ট  গন্তব্যে পৌঁছার জন্য এই প্রতিযোগিতা একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাতে বাদ যায় না মহিলা যাত্রীরাও। এই তাড়াহুড়োতে কারো নজর থাকে না, যে পেছন থেকে কোনো গাড়ি আসছে কিনা! পেছনের ড্রাইভার যদি একটু অসতর্ক হয়, দুর্ঘটনা ঘটা তখন সময়ের ব্যাপার। আর এর মধ্যে তো গাড়ির ড্রাইভারদের ওভারটেক করার একটা প্রতিযোগিতা বা প্রবণতা আছেই। মটর বাইকের বা ইজি বাইকের যাত্রীরা সাধারণত রাস্তার পাশ দিয়েই চলে। তারাও ঠিক কখন যে হুট করে চলে আসে তার ঠিক নেই। এই যে চিত্র সেটা সবারই পরিচিত।
বগুড়াগামী বাসের যাত্রী ওয়াকিল হোসেন বলেন,স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন কখনও বাসগুলো নির্দিষ্ট স্টপেজে দাঁড়াবে,সেই বিষয়েও কোনো ভূমিকা নিতে দেখিনি এবং কালাইতে ছাত্রী ছাউনী ও তার রাস্তা পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত পৌরসভার কর্তাব্যক্তিদের।নিয়ম ভেঙ্গে কোনো বাস যদি স্টপেজে না দাঁড়ায় তাহলে পুলিশ এমনটা দেখলে শুধু ড্রাইভার নয়, তাৎক্ষনিকভাবে যাত্রীরা স্টপেজে না দাঁড়িয়ে যত্রতত্র দাঁড়িয়ে থাকলে যাত্রীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তাছাড়া নিজের ইচ্ছেমতো চলন্ত গাড়ি থামিয়ে রাস্তা পাড় হওয়ার অভ্যাস তো আছেই আমাদের যাত্রীদের। যা অনেক সময়ই বিপদ ডেকে আনে।
যাত্রী ছাউনিতে বাস দাঁড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে কালাই থানার অফিসার ইনচার্জ এস এম মঈনুদ্দিন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী বাস যাত্রী ছাউনিতেই দাঁড়াবে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা বন্ধ করতে হবে। তাহলে জ্যামও যেমন কমবে,বিপদও কমবে। বাস স্টপেজগুলো ইন্টারসেকশন হতে একটু দূরে সুবিধাজনক স্থানে হবে। যেটা কালাই যাত্রী ছাউনিতে আছে।কতটুকু এলাকার মধ্যে বাস স্টপেজ হবে তা বাস স্টপেজ শুরু এবং বাস স্টপেজের শেষ সাইন বোর্ড দিয়ে চিহ্নিত করতে হবে। বাস স্টপেজ শুরু ও শেষের সাইনবোর্ডের মাঝে ফুটপাত ঘেঁষে কতটি বাস দাঁড়াতে পারবে তা ব্লক আকারে রোড মার্কিং করে চিহ্নিত করতে হবে। তাহলে অচিরেই সড়কের ভয়াবহ রুপ কিছুটা হলেও কমবে বলে এই কর্মকর্তা মনে করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.