কেশবপুরে ক্রিস্টাল ডায়াগনস্টিক এন্ড হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের পর প্রসূতির মৃত্যু

শামীম আখতার, বিভাগী (খুলনা) : কেশবপুরে বেসরকারি ক্রিস্টাল ডায়াগনস্টিক এন্ড হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের পর সম্পা খাতুন (৩২) নামের এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। স্বজনদের দাবি ডাক্তারের ভুল অপারেশনের কারণে রোগীর মৃত্যু ঘটেছে। গত ৩১ জানুয়ারি (বুধবার) রাতে ওই প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে ক্রিস্টাল ডায়াগনস্টিক এন্ড হাসপাতাল পরিদর্শন করাসহ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার সিলগালা করে দিয়েছে। এছাড়াও তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে সিজারিয়ান অপারেশনে মায়ের মৃত্যু হলেও নবজাতক পুত্র শিশুটি জীবিত আছে। নিহত পাশ্ববর্তী মনিরামপুর উপজেলার হাসাডাঙ্গা গ্রামের শহিদুল ইসলামের স্ত্রী।

 

পরিবার, হাসপাতাল ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, গত বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে মনিরামপুর উপজেলার হাসাডাঙ্গা গ্রামের শহিদুল ইসলামের স্ত্রী সম্পা খাতুনকে তার মা সুফিয়া বেগম সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য কেশবপুর পৌর শহরের বেসরকারি ক্রিস্টাল ডায়াগনস্টিক এন্ড হাসপাতালে ভর্তি করেন।সন্ধ্যার পর কেশবপুর সরকারি হাসপাতালের ডা: নাজিয়া নওরীম জিসান প্রসূতি সম্পার সিজারিয়ান অপারেশনের পর একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। সিজারের পর রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ওই রাতেই সম্পাকে খুলনা রেফার্ড করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে খুলনা যাওয়ার পথে রোগী মারা যায়। নবজাতক শিশুটি সুস্থ্য থাকলেও ডাক্তারের ভুল অপারেশনের কারণে সম্পা খাতুনের মৃত্যুতে স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। ওই সময় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রোগীর স্বজনদের ম্যানেজ করে তড়িঘড়ির মধ্যে দিয়ে মৃত রোগীর ছাড়পত্র দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সযোগে দ্রুত বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। খবর পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আলমগীর এবং আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: আহসানুল মিজান রুমী বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারী) সকাল ১১টার দিকে ক্রিস্টাল ডায়াগনস্টিক এন্ড হাসপাতাল পরিদর্শন করাসহ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার সিলগালা করে বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়াও হাসপাতালের গাইনী ডা: আয়েশা আক্তারকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। 

নিহতের স্বামী মনিরামপুর উপজেলার হাসাডাঙ্গা গ্রামের শহিদুল ইসলাম জানান, ডাক্তারের ভুল অপারেশনের কারণে হয়তো আমার স্ত্রী মারা গেছে।

 

প্রসূতির মৃত্যুর বিষয়ে ক্রিস্টাল ডায়াগনস্টিক এন্ড হাসপাতালের মেডিকেল ব্যাবস্থাপক রেজাউল ইসলাম এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ওই রোগীর অবস্থা ভর্তির আগে থেকেই খারাপ ছিলো। সরকারি হাসপাতালের ডা: নাজিয়া নওরীম জিসান সিজারিয়ান অপারেশন করেছেন এবং এ্যানেস্থেসিয়া ডা: অঞ্জলি রায় দ্বারা অজ্ঞান করা হয়েছিলো। অপারেশনের পর রোগীর প্রেসার বেড়ে গিয়ে খিচুনি শুরু হয়। রোগির অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে খুলনা রেফার্ড করা হয়। পরবর্তীতে খুলনায় যাওয়ার পথে রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

 

সিজারিয়ান অপারেশনের পর রোগীর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানার বিষয়ে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা: নাজিয়া নওরীম জিসানের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি।

 

এ ব্যাপারে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আলমগীর বলেন, সিজারিয়ান অপারেশনের পর রোগী মারা যাওয়ার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বেসরকারি ক্রিস্টাল ডায়াগনস্টিক এন্ড হাসপাতাল পরিদর্শন করাসহ অপারেশন থিয়েটার সিলগালা করা হয়েছে। এছাড়াও গাইনী ডা: আয়েশা আক্তারকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের পর আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published.