শামীম আখতার (নিজস্ব প্রতিবেদক) : যশোরের কেশবপুরে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের সাথে থানা পুলিশের সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেশবপুর থানা পুলিশের উদ্যোগে গত বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সাথে ওই সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতামূলক বক্তব্য রাখেন কেশবপুর থানার পুলিশ উপপরিদর্শক লিটন দাস।
তিনি বক্তব্যে বলেন, বাল্যবিয়ে একটি সামাজিক ব্যাধি। সকলকে বাল্যবিবাহকে না বলতে হবে এবং সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। বাল্যবিবাহ মেয়েদের শৈশব কেড়ে নেয় এবং শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা ঝুঁকির মুখে ফেলে। যে মেয়েরা ১৮ বছরের আগে বিয়ে করে তাদের জীবনের ঝুঁকির আশঙ্কা সব থেকে বেশি। বেশির ভাগই নারী স্বামী দ্বারা সহিংসতার শিকার হয়। বাল্যবিয়ে হয়ে যদি কোন কিশোরী সন্তানের মা হয়, তার গর্ভাবস্থা এবং প্রসবকালীন ঝুঁকি অনেকটা বেড়ে যায়। এছাড়াও সন্তানটি ভূমিষ্টের পর স্বাস্থ্যগত ও মানসিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বাল্যবিয়ের শিকার কিশোরী মেয়েটির সঙ্গে তার সমবয়সী স্কুল পড়ুয়া বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে তুলনা করলে দেখা যায়, তার বন্ধুরা স্কুলে যাচ্ছে, খেলছে, লেখাপড়ার মাধ্যমে অনেক বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করছে। অথচ বাল্যবিয়ের শিকার হওয়া মেয়েটি সংসারের নানা কাজকর্ম বা সন্তান লালন পালন করছে। লেখাপড়া থেকে দূরে থাকার ফলে সে সাধারণ জীবন যাপনের জন্য যে জ্ঞান দরকার, সেটা থেকে সে বঞ্চিত। তাকে সবসময় নির্ভর হয়ে থাকতে হচ্ছে তার স্বামীর ওপর। শুধু তা-ই নয়, বঞ্চিত হতে হচ্ছে শিক্ষা ও কর্মের সুযোগ থেকে। তাই এখন সময় হলো নিজেকে তৈরি করার। ভালোভাবে পড়াশুনা করে নিজেকে স্বাবলম্বী করতে হবে। অনার্স বা ডিগ্রি পাশ করা না পর্যন্ত কোন শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোন ব্যবহার না করাটাই ভাল। সেক্ষেত্রে অভিভাবকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। এছাড়াও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে অভিভাবক এবং শিক্ষকদের অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাল্যবিবাহ দন্ডনীয় অপরাধ। সরকার বাল্যবিবাহ বন্ধে আইন প্রণয়ন করেছে। দেশে প্রচলিত আইনানুযায়ী নারীর জন্য ১৮ বছর এবং পুরুষের ক্ষেত্রে ২১ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ করা যাবে না। আইন অনুযায়ী, বাল্যবিবাহ যে করবে, যে অভিভাবকরা বাল্যবিবাহ দিবে এবং তাদের সহযোগী তিন পক্ষের জন্য আইনে সাজার বিধান রয়েছে। যে কাজি বাল্যবিবাহ নিবন্ধন করবেন, তিনিও শাস্তির আওতায় আসবে এমনকি তার লাইসেন্স বাতিল করার কথাও আইন রয়েছে। তবে, বাংলাদেশে বেশির ভাগ বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে দেখা যায়, অভিভাবকরা বয়সের মিথ্যা তথ্য দিয়ে ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিচ্ছেন। কাজিরা বিয়ের ক্ষেত্রে আইনে নির্ধারিত বয়স প্রমাণের নিয়মগুলো মানছেন না। ব্যবহৃত হচ্ছে ভুয়া জন্মনিবন্ধন, শিক্ষা বা জাতীয় পরিচয়পত্রের জাল সনদ। আইনে শাস্তির বিধান থাকলেও সচেতনতার অভাবে আইন অমান্য করছে বেশির ভাগ মানুষ। তাই বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কিশোর-কিশোরী, মা-বাবা ও অভিভাবক এবং সমাজে বসবাসরত সবার মাঝে আইনি সচেতনতা বাড়াতে হবে। নিজেদের নেতৃত্ববোধ ও দায়িত্ববোধ গড়ে উঠলে এবং সকলেই প্রতিবাদের সাহসী ভূমিকা পালন করলে সমাজের বাল্যবিবাহ অনেকটা কমে যাবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, ন্যাশনাল প্রেস সোসাইটি, গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থা কেশবপুর উপজেলা শাখার সভাপতি শামীম আখতার মুকুল, কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রবীর দত্ত, সহকারি শিক্ষক খায়রুল বাশার, মোঃ সালাউদ্দিন প্রমূখ।