কেশবপুর পৌরশহর সিএনজি, ইজিবাইক ও হকারদের দখলে:পথচারীরা চরম বিপাকে

শামীম আখতার (নিজস্ব প্রতিবেদক) কেশবপুর পৌর শহরের ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলো সিএনজি, ইজিবাইক, ইঞ্জিনচালিত ভ্যান ও হকারদের অবৈধ দখলে। যার ফলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের চলাচলে নানান সমস্যা এবং দূর্ভোগ চরমে। যশোর-চুকনগর মহাসড়ক এবং সড়কের দু’পাশ অবৈধভাবে দখল করে সিএনজি ও ইজিবাইক স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। হকারেরা পৌরশহরের সকল ফুটপাত অবৈধভাবে দখল করে বিভিন্ন দোকানপাট বসিয়ে ক্রেতা ও পথচারীদের জীবনের ঝুকির মধ্যে ফেলে চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসা। যেকোন মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা। মহাসড়ক ও ফুটপাতের উপর থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা এবং দোকানপাট উচ্ছেদ করার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষের নিকট জোরালো দাবি জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহলের অনেকেই।

বাংলাদেশ সড়ক ও মহাসড়ক আইন অনুযায়ী, কোন সড়ক বা মহাসড়ক অবৈধভাবে দখল করে কোন প্রকার স্থাপনা নির্মাণ এবং পথচারীদের চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করা যাবে না। অথচ আইনের তোয়াক্কা না করে স্থানীয় শ্রমিক ইউনিয়নের কতিপয় নেতারা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে কেশবপুর পৌরশহরের থানার মোড়ে মহাসড়ক, ত্রিমোহিনী মোড়, হাসপাতাল মোড়ে সড়ক ও জনপথ দখল করে অবৈধভাবে সিএনজি ও ইজিবাইক স্ট্যান্ড গড়ে তুলেছে। চালকেরা মহাসড়ক ও সড়কের উপর যন্ত্রতন্ত্র গাড়ি পার্কিং এবং যাত্রী উঠানামা করানোর জন্য যানজটের সৃষ্টি দৃশ্যমান। যেকোন সময় মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কা বিরাজ করছে সচেতন মহল। শুধু তাই নয়! হকারেরা মহাসড়ক ও পৌরশহরের সকল ফুটপাত দখল করে পান, বিড়ি, সিগারেটের দোকান, ভাজাপোড়ার দোকান, চায়ের দোকান, চটপটির, পিঠার দোকান, জামাকাপড়ের দোকান বসিয়ে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব দোকানগুলোতে বেচাকেনা এবং ক্রেতাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের আড্ডা দেওয়ায় বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের চলাচলে নানাবিধ সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে পৌর শহরের ফুটপাত ও সড়ক অবৈধ দখলবাজদের রিরুদ্ধে পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসনের তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় জনমনে নানা গুঞ্জন। তবে, যানজট ও জনদূর্ভোগের বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সাথে কথা হলে, কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এবং খর্নিয়া হাইওয়ে পুলিশ বলছে, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দখলবাজদের সকল স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

কেশবপুর পৌর শহরের থানার মোড় একটি গুরুত্বপূর্ণ ও জনসমাগমের ব্যস্ততম পয়েন্ট। পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামের মানুষদের পৌর শহরের প্রবেশ মুখ হচ্ছে থানার মোড়। পার্শ্ববর্তী সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন যানবাহনে থানার মোড় হয়ে যশোর-চুকনগর মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে থাকে। এমন একটি ব্যস্ততম মহাসড়ক ও দু’পাশের ফুটপাত দখলের কারণে সাধারণ মানুষের যাতায়াতে নানাবিধ সমস্যা হচ্ছে। যানবাহন ও সাধারণ মানুষের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখেও যেন না দেখার ভান করছে। পথচারীদের স্বাভাবিক চলাচলের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ ফুটপাত করে দিলেও সেটিও দখল করে নিয়েছে সিএনজি, ইজিবাইক চালক ও স্থানীয় এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা। 

সরেজমিনে থানার মোড়ে গিয়ে একাধিক সিএনজি চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চুকনগর, হাসানপুর, বগা ও সাগরদাঁড়ী রুটের প্রায় দুই শতাধিক গাড়ি প্রতিদিনই চলাচল করে থাকে। এর মধ্যে মহাসড়কের উপরেই অধিকাংশ সময়ই ৩০/৪০টি গাড়ি পার্কিং করে রেখেছে। এছাড়াও পাশে আটন্ডা শ্রীফলা, ভান্ডারখোলা রুটের আরও প্রায় শতাধিক গাড়ি চলাচল করে। দুটি স্থানের সকল গাড়ি প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সিরিয়ালের জন্য যশোর-চুকনগর মহাসড়ক এবং শহরের কাঁচা বাজারে প্রবেশ সড়কের উপরে পার্কিং করে রাখা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে অসংখ্য ইঞ্জিনচালিত ভ্যান এবং ফুটপাতে হরেক রকমের দোকানপাট। কেউ-বা সড়ক দখল করে আবার কেউ-বা ফুটপাত দখল করে। এ দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে, এ যেন মহাসড়ক ও ফুটপাত দখলের চলছে মহোৎসব।

সড়ক ও ফুটপাত দখলের বিষয়ে কেশবপুর সরকারি ডিগ্রী কলেজ ছাত্রদলের আহবায়ক রাহাদুল হাসান সুজনসহ একাধিক শিক্ষার্থীরা বলেন, ফুটপাত দখল করায় প্রতিদিন কলেজে যাওয়া আসা করতে আমাদের কলেজের শিক্ষার্থীদের খুবই সমস্যা হয়। অনেক সময় সিএনজি ও ইজিবাইকে যাত্রী উঠানামা করার সময় যাত্রীদের সাথে শিক্ষার্থীদের সাথে ধাক্কা লাগে। ফুটপাত দখলমুক্ত ও শহরের যানজটের নিরসনে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, শহরের দু’পাশের ফুটপাত দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা করার কারণে আমাদের চলাচলে নানা সমস্যা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুটপাত দখলমুক্ত করলে আমরা স্বাভাবিকভাবে স্কুলে যাতায়াত করতে পারবো।

পথচারী উপজেলার বাগদা গ্রামের জাহিদ হাসান টিকুল বলেন, থানার মোড়ে প্রতিদিন শতশত সিএনজি, ইজিবাইক, ইঞ্জিনচালিত ভ্যান সড়কের উপর দাঁড়িয়ে থাকায় পথচারীদের চলাচলে অনেকটা সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অবৈধভাবে গড়ে তোলা সিএনজি স্ট্যান্ড ও ফুটপাতের সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করার প্রয়োজন বলে আমি মনে করছি। 

বুড়িহাটি গ্রামের প্রাণী চিকিৎসক আব্দুস সালাম মুর্শিদী বলেন, মা-বোন ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চলাচলে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে। এমনকি ফুটপাতে অবৈধ পান বিড়ির দোকানে বকাটেরা আড্ডায় মেতে ওঠেন, তাতে করে ছাত্রীদের নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এবিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

আলতাপোল গ্রামের পথচারী ইউপি সদস্য শাহানাজ পারভীন বলেন, ফুটপাত দখল করে রাখায় আমার মেয়েকে প্রতিনিয়ত স্কুলে যাওয়া আসা করতে খুবই কষ্ট হয়। ইজিবাইক, সিএনজি চালক ও অবৈধ ব্যবসায়ীদের ফুটপাত দখলে থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কে নেমে চলাচলা করতে হয়। তাতে করে সড়ক দুর্ঘটনার সম্ভাবনা অনেকটা বেশি।

এ ব্যাপারে পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলেন, পৌর শহরের যানজট নিরসনে মহাসড়কের উপর যন্ত্রতন্ত্র গাড়ী পার্কিং ও ফুটপাতের দু’পাশের অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করাসহ সকল স্থাপনা অপসারণ করা হবে। ব্যবসায়ীরা নিজ উদ্যোগে ফুটপাত থেকে তাদের অবৈধ স্থাপনা বা দোকানপাট সরিয়ে না নিলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেকসোনা খাতুন বলেন, পৌরশহরের ফুটপাত দখল করে ব্যবসা পরিচালনা করা আইনগত অপরাধ। শহরের যানজট নিরসন ও ফুটপাত দখলমুক্ত করার লক্ষে উপজেলা প্রশাসন বদ্ধপরিকর। অবৈধ দখলবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

খর্নিয়া হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ ফজলুল করিম বলেন, সড়ক দূর্ঘটনা এড়াতে এবং যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ সবসময় তৎপর রয়েছে। অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে খুব শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে। যারা অবৈধভাবে মহাসড়ক দখল করে সিএনজি, ইজিবাইক স্ট্যান্ড এবং সড়কের উপর দোকান বসিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *