কোটি কোটি টাকার নকল ওষুধ ছড়িয়ে পড়ছে দেশজুড়ে

মোহাম্মদ আককাস আলী, প্রতিবেদক : কোটি কোটি টাকার নকল ওষুধ ছড়িয়ে পড়ছে দেশজুড়ে। দেশের একদল সঙ্গবদ্ধ চক্র বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল ওষুধ তৈরি করে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মোড়কে বাজারজাত করছে। ওই চক্রটি প্রথমে খোলাবাজার থেকে ৫ থেকে ১০ টাকায় টিটেনাস, এট্রোপিন সালফেট, ডায়াজিপাম ও জেশন গ্রুপের অ্যাট্রোপিন কিনে মোড়ক পরিবর্তন করে হেপাবিগ, ভিটামিন ডি৩, ক্লোপিকজল ও ফ্লুয়ানজল ডিপোর্ট ইনজেকশন, রেসোগামা পি ও হিউম্যান অ্যান্টি ডির মতো জটিল ওষুধ বলে বিক্রি করছে। দেশের ১৫টি চক্র বছরে অন্তত ১০ কোটি টাকার নকল ওষুধ বাজারজাত করছে। গত বছর নকল ওষুধ সরবরাহের অভিযোগে ১৫টি মামলা করেছে পুলিশ। এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে হয়েছে আরো চার মামলা। এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় ৩০ জনকে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকার মোহাম্মদপুর, মতিঝিল, বারিধারা, বাড্ডা, উত্তরা ও পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক শতাধিক নকল ওষুধ তৈরি কারখানা ও ফার্মেসিকে ডিবি শনাক্ত করেছে। এ ছাড়া সম্প্রতি নিবন্ধনহীন ‘প্রেগন্যান্সি স্ট্রিপ’ এবং ‘কনডম রি-প্যাকিং’-এর একটি কারখানায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও ডিবি অভিযান চালায়। সেখান থেকে নকল ওষুধ প্রস্তুতকারক কারখানার এক মালিককে আটক করে পুলিশ। সূত্র জানায়, ঘুমের ইনজেকশন ‘জি-ডায়াজিপাম’ দিয়ে বানানো হচ্ছে চেতনানাশক ‘জি-পেথিডিন’। এই চক্রটি মিটফোর্ডের বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে ৮ টাকা পিস হিসাবে জি-ডায়াজিপাম কিনে জি-পেথিডিন নামে বিক্রি করেন ৬০০ টাকা দামে। তাছাড়া ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিককে নকল টিকা ও ইনজেকশন সরবরাহ করছে অসাধু চক্র। চক্রটি ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানির অন্তত ৯টি ওষুধ দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ডেনমার্কের ওষুধ প্রস্তুত প্রতিষ্ঠানের মোড়ক লাগিয়ে বাজারে ছাড়ে। কুমিল্লা, বরিশাল ও ময়মনসিংহের বেসরকারি ক্লিনিকে এগুলো সরবরাহ করা হয়। ওসব নকল ওষুধ রাখা তিন শহরের বেশ কিছু ফার্মাসিকে শনাক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সম্প্রতি তাদের কাছ থেকে কোটি টাকা মূল্যের নকল ওষুধও জব্দ করেছে ডিবি। পাশাপাশি নকল অ্যান্টিবায়োটিক প্রস্তুতকারক এবং সরবরাহকারী চক্রও রয়েছে। চক্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়া বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালসের ১১ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট নকল করে বাজারজাত করে। এক্মি ফার্মাসিউটিক্যালস ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ওষুধও নকল করা হচ্ছে। তাছাড়া নকল ওরস্যালাইন তৈরিতে সক্রিয় একটি চক্র। তারা এসএমসি এন্টারপ্রাইজের মোড়কে লবণ ও চিনি মিশিয়ে ওরস্যালাইন বানিয়ে বাজারজাত করছে। এদিকে এ বিষয়ে ডিবির মতিঝিল বিভাগের সহকারী কমিশনার এরশাদুর রহমান জানান, নকল ওষুধ ও টিকা সরবরাহ চক্রের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযান চলছে। সম্প্রতি চারটি অভিযানে জব্দ করা হয়েছে প্রায় ৬ কোটি টাকার নকল ওষুধ।  অন্যদিকে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র আশরাফ হোসেন জানান, নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে ওষুধ প্রশাসন। প্রতিনিয়ত টিম বাজার তদারকি করছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত বছরও বিভিন্ন ফার্মেসিকে ৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে সাত প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.