চলাচলের রাস্তা বন্ধে রেলওয়ের প্রতিবন্ধকতায় ঢুকতে পারেনি এম্বুলেন্স সীতাকুণ্ডে হাসপাতালে নিতে না পারায় অসুস্থ গৃহবধূর মৃত্যু

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে রাস্তায় ঘুটি দিতে গর্ত করে যান চলাচল বন্ধের কারণে গ্রামে এম্বুলেন্স ঢুকতে না পারায় চিকিৎসার অভাবে রোজিনা আক্তার (৪৫) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

আজ ২৭ ফেব্রুযারী সোমবার সকালে উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের ভায়েরখীল আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত গৃহবধূ একি এলাকার দিনমজুর খোরশেদ আলমের স্ত্রী। তার ফারজানা ও মিনা নামে দুই কন্যা সন্তান রয়েছে।

এদিকে চিকিৎসার অভাবে গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসীর মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।

এসময় উত্তেজিত এলাকার নারী-পুরুষ বিক্ষোভ করতে মহাসড়কে বেরিয়ে আসতে চান। তবে স্থানীয় ইউপি সদস্যর অনুরোধে তারা বাড়িতে ফিরে যান।

স্থানীয় এলাকাবাসী রফিক উদ্দিন সিদ্দিকী,জাহাঙ্গীর আলম,নুরুল আলম ও খুরশিদ আলম জানান,অরক্ষিত রেলক্রসিং বন্ধের অজুহাত দেখিয়ে তিন এলাকার ৭-৮ হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ করে দেয় রেলওয়ে। এতে রোগীর পাশাপাশি নিত্যপণ্য আনা-নেওয়া চরম বিপাকে পড়েন তারা। তারা রাস্তাটি এলাকাবাসীর চলাচলে উন্মুক্ত রাখতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অনুরোধ জানালেও তারা কাজ চলমান রেখেছে।

রাস্তাটির চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখতে তারা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন।

পাশাপাশি উপজেলা চেয়ারম্যান,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,সীতাকুণ্ড মডেল থানা ও সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবেও তার অনুলিপি জমা দিয়েছেন।

তারা আরো জানান,রোববার সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া গৃহবধূ রোজিনা হাসপাতালে নিতে তার স্বামী অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসেন। কিন্তু রাস্তা খুঁড়ে রাখার কারনে রেললাইনে এসে অ্যাম্বুলেন্সটি আটকা পড়ে যায়। পরে প্রায় দেড় কিলোমিটার ভেতর থেকে পাজা কোলে করে তাকে আনার চেষ্টা করেন তার স্বামী। কিছুদূর আনার পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।

চলাচলের পথ বন্ধে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে না পারায় রোজিনার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি তোলেন তারা। আর এ মৃত্যুর জন্য তারা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতাকে দায়ী করেন।
নিহত নারীর স্বামী অশ্রুসিক্ত কন্ঠে প্রতিনিধি কে জানান,তারা আশ্রয়ন প্রকল্প সংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করেন।

সকালে তিনি চায়ের দোকানে কাজ করছিলেন। হঠাৎ তার মুঠোফোনে মেয়ে ফোন করে তার স্ত্রীর অসুস্থতার কথা জানায়। তিনি তাৎক্ষণিক পল্লী চিকিৎসককে ফোন করে বাড়িতে পাঠান। কিন্তু তার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হওয়াই তিনি অ্যাম্বলেন্স নিয়ে বাড়ির দিকে ছুটে যান। তবে রেলওয়ে চলাচলের পথ খুঁড়ে দেওয়ার কারনে গাড়ি গ্রামে ঢুকতে পারেনি। যার কারনে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন তার স্ত্রী।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্ল্যাহ মিয়াজী বলেন,রেলওয়ের চলাচলের রাস্তা বন্ধে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে না পারায় চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি এলাকাবাসীর মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক। তিনি রাস্তাটি এলাকাবাসীর চলাচলে উন্মুক্ত রাখতে সহায়তা চেয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম রেলওয়ে বিভাগীয় প্রকৌশলী আবু হানিফের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি মুঠোফোন রিসিভ না করায় কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে রেলওয়ে লাইনম্যান সাইফুল ইসলাম রাজু গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটনাটি শুনে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি প্রতিনিধি কে বলেন,সরকারীভাবে অরক্ষিত রেলক্রসিং বন্ধে কাজ চলছে। এতে তাদের কিছুই করার নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published.