ছেলে বউকে কেন্দ্র করে গালিগালাজ প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রাণ গেল শশুরের, ঘাতক গ্রেফতার

মোঃ মোকাররম হোসাইন জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি:
জয়পুরহাটের কালাইয়ে ছেলের বউকে কেন্দ্র করে গালিগালাজের প্রতিবাদ করতে গিয়ে শশুর জাহাঙ্গীর হোসেন (৪৫) নামে এক ব্যাক্তিকে কোদালের কোপ মেরে মাটিতে ফেলে পা দিয়ে বুকে গুড়িয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ আহসান নবী (৩৬) নামে এক যুবক। এ সময় বাবাকে বাঁচাতে ছেলে সবুজ মিয়া ওই ঘাতকের উপর ঝাপিয়ে পড়ে মারপিট করতে থাকে। তার মারপিটে সেও আহত হয়। এ ঘটনায় আজ শনিবার (৪ জানুয়ারী) বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার জিন্দারপুর ইউনিয়নের বেলগড়িয়া গ্রামে ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘাতক আহসান নবীকে গ্রেফতার করে চিকিৎসার জন্য পুলিশি পাহাড়ায় কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। আর মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জয়পুরহাট আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
নিহত জাহাঙ্গীন হোসেন উপজেলার বেলগড়িয়া গ্রামের মৃত মোজাম মন্ডলের ছেলে। আর ঘাতক আহসান নবী একই গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে।
স্থানীয়, পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে আহসান নবী নিহত জাহাঙ্গীরের ছেলে সবুজ মিয়ার স্ত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছেন। এরই জেরে আজ শনিবার সকালে বাড়িতে জাহাঙ্গীর তার ছেলে, ছেলের মা ও ছেলে বউকে গালিগালাজ করে মাঠে আলুর কাজ করতে যায়। পরে ছেলে সবুজও মাঠে গিয়ে বাবার সাথে কাজ করেন। এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে বাবা-ছেলে বাড়িতে আসার জন্য রওনা দেন। গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করতে রাস্তায় তাদের সাথে দেখা হয় প্রতিবেশী আহসান নবীর। এ সময় আহসান নবী অযাচিত তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। একপর্যায়ে জাহাঙ্গীর তাকে গালিগালাজ করলে উত্তেজিত হয়ে আহসান নবীর হাতে থাকা কোদাল দিয়ে তার পিঠ ও ঘাড়ে কোপ মারে। এসময় জাহাঙ্গীর মাটিতে পড়ে গেলে সে পা দিয়ে বুকে গুড়াতে থাকে। তখন ছেলে সবুজ মিয়া তাঁর বাবাকে বাঁচাতে আহসান নবীর উপর ঝাপিয়ে পড়ে মারপিট করতে থাকে। একপর্যায়ে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে জাহাঙ্গীরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে বাখরা নামক স্থানে তিনি মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জয়পুরহাট জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। আর ঘাতক আহসান নবীকে আহত অবস্থায় গ্রেফতার করে পুলিশি পাহাড়ায় কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
নিহত জাহাঙ্গীরের ছেলে সবুজ মিয়া বলেন, আমার স্ত্রীকে কেন্দ্র করে বাবাকে রাস্তায় অযাচিত গালিগালাজ করছিল আহসান নবী। গালাগালিজের একপর্যায়ে আহসান নবী আমার বাবাকে কোদাল দিয়ে কোপ মারে। তখন বাবা মাটিতে পড়ে যায়। এরপর সে আবারও বাবার বুকে পা দিয়ে গুড়ি মারতে থাকে। তখন আমি ওকে মারপিট করতে থাকি। আমার চখের সামনে আহসান নবী আমার বাবাকে হত্যা করেছে। আমি বাবা হত্যার বিচার চাই।
বাখড়া গ্রামের আব্দুস সবুর  বলেন, জাহাঙ্গীর আসলেই একজন নীরহ মানুষ। ছোট থেকে বড় হয়েছে, কখনও ওর ঝগড়া- বিবাদ দেখিনি। আজ এভাবে ওর মৃত্যু হবে এটা মেনে নিতেও কষ্ট হয়। আমি ঘাতক আসহান নবীর কঠিন শাস্তির দাবী করছি।
হত্যার বিষয় নিশ্চিত করে কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জয়পুরহাট জেলা সদর  হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহসান নবীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে পুলিশি পাহাড়ায় তাকে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। হত্যার আসল তথ্য উৎঘাটনে পুলিশের একাধীক টিম কাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.