মাগুরা প্রতিনিধি খন্দকার নজরুল ইসলাম মিলন ঃ মাগুরা সদর উপজেলায় জাহিদ নামে এক দিনমজুর হত্যাকাণ্ডের মামলা মিমাংসা করতে ব্যর্থ হওয়ার পর বাদির পরিবার সংশ্লিষ্টদের নামে ১৮টি মামলা দায়েরের ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, নিহতের বৃদ্ধ মা রাবেয়া বেগমকে হত্যা মামলা তুলে নিতে দুই বিঘা জমি দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর মামলা নিষ্পত্তি করে দিতে আসামীরা স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতাকে দিয়েছেন ৩০ লক্ষ টাকা। যার সহযোগিতায় আদালতে এসব মামলা দায়েরের মাধ্যমে নিহত জাহিদের অসহায় পরিবারের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে করে বানোয়াট মামলার জাতাকলে পড়ে ওই গ্রামের অন্তত ৪১ টি কৃষক পরিবারের দেড় শতাধিক মানুষের জীবন এখন জটিল ধাঁধায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সদর উপজেলার রাঘবদাইড় ইউনিয়নের বেঙ্গাবেরইল গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী কুদ্দুস মোল্লার ছেলে জাহিদ। অন্যের বাড়িতে কামলা খেটে চলতো সংসার। অথচ একখণ্ড জমি নিয়ে গ্রামের দুই প্রতিবেশির মধ্যাকার সংঘর্ষের বলি হতে হয়েছে তাকেই।
গত ২০ জুন ওই গ্রামের আনার মোল্যা বিরোধপূর্ণ জমিতে ঘর তোলার উদ্দেশ্যে মাটি ভরাট করতে গেলে বাধা দেয় তারই চাচাতো ভাই আশরাফ মোল্যার পরিবার। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় হট্টগোলের শব্দ পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে উঠোনে নামতেই আশরাফ মোল্যার লোকজন আনার মোল্যার ভাগ্নে সম্পর্কীয় জাহিদকে নির্মমভাবে কুপিয়ে খুন করে। এ ঘটনার পর আনার মোল্যার প্রতিপক্ষের বাড়ি ঘরেও হামলা ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
এই হত্যাকাণ্ড এবং বাড়িঘর ভাংচুরের বিষয় নিয়ে ঘটনার পরদিন নিহত জাহিদের মা রাবেয়া বেগম বাদি হয়ে সদর থানায় ২৬ জনকে আসামী করে হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।
অন্যদিকে প্রতিপক্ষে একই গ্রামের আবু বক্কার মোল্যার ছেলে শরিফুল ইসলাম ২৮ জুন তারিখে সুনির্দিষ্ট ৩২ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
অথচ হত্যা মামলাটি মিমাংসা করতে ব্যর্থ হয়ে জাহিদ হত্যা মামলার বাদি ও পরিবার সংশ্লিষ্টদের নামে ১৮টি মামলার সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগীরা। মামলার নথিতে দেখা যায়, নিহত জাহিদের পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের ৮ হতে ১৫ টি মামলায় আসামী করা হয়েছে।
অপরদিকে হত্যা মামলার পর ২৮ জুন শরিফুল ইসলাম ওই গ্রামের প্রতিপক্ষ ২২ জনকে আসামী করে সদর থানায় মামলা দায়ের করলেও ১৮ সেপ্টেম্বর ছোট ভাই কামরান হোসেনকে দিয়ে আদালতে পূর্বের ঘটনা উল্লেখ করে আবার মামলা করিয়ছেন। এ মামলায় আসামী করা হয়েছে ৪০ জনকে।
একই ঘটনা নিয়ে থানায় মামলা করার পরও আদালতে একাধিক মামলা সৃষ্টির বিষয় নিয়ে মাগুরা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মাহবুবুল আকবর কল্লোল, সাবেক সভাপতি শফিকুল ইসলাম বাবলু, জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শাহেদ হাসান টগর এই ঘটনাকে “এবিউজ অব দি প্রসেস অব দি কোর্ট” এবং আইনজীবীদের “ম্যাল প্রাকটিস” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এ বিষয়ে মাগুরা পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা বলেন, একটি ঘটনা নিয়ে একাধিক মামলা হতে পারে না। কিন্তু মামলাগুলো আদালতে করা হয়েছে বিধায় এটি তদন্তের দায়িত্ব পুলিশকে দেয়া হলে নিরাপরাধ মানুষ যাতে শাস্তি না পায় কিংবা হয়রানির শিকার না হয় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।