জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীর পাহারায় মান্দার রঘুনাথ মন্দিরের

মোহাম্মদ আককাস আলী, প্রতিবেদক : বৈষম্যবিরোধী গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে নওগাঁর মান্দায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রতিনিয়ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। লুট করা হচ্ছে খাল-বিল, পুকুর ও জলাশয়ের মাছ। এরইমধ্যে হামলার শিকার হয়েছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বেশকিছু লোকজন। এ অবস্থায় ঠাকুরমান্দার রঘুনাথ জিউ মন্দিরের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বসিন্দারা। মন্দিরটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত বুধবার থেকে সেখানে পাহারা বসিয়েছে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা।
সরেজমিনে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে মন্দির এলাকায় গিয়ে দেখা যায় জামায়াত শিবিরের ২০ থেকে ২৫জন নেতাকর্মীর একটি টিম সেখানে অবস্থান করছে। গত দুদিন ধরে পালাক্রমে মন্দিরটিকে পাহারা দিচ্ছেন তারা। আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেও এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
এ সময় কথা হয় উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়ন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী রফিক রতনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঠাকুরমান্দার রঘুনাথ জিউ মন্দিরের বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মন্দিরটি ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে এমন চেতনা বোধ থেকে পাহারা বসানো হয়েছে। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের জানমাল রক্ষার্থে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্দেশে মন্দিরটির নিরাপত্তা নিশ্চিতে পাহারা বসিয়ে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা।
রঘুনাথ জিউ মন্দিরের পুরোহিত সমর চন্দ্র বিশি বলেন, গত সোমবার সন্ধ্যার পর মন্দির সংলগ্ন বাজারে আওয়ামী লীগের কার্যালয় পুড়িয়ে দেয় একদল দুর্বৃত্ত। তারা এলাকার কেউ ছিল না। এরপর থেকে এলাকার আশপাশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মন্দিরের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়।
পুরোহিত সমর বিশি আরও বলেন, ‘গত বুধবার থেকে মন্দিরটি পাহারা দিচ্ছেন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। দুঃসময়ে তারা এসে পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখন অনেক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি, শঙ্কাও নেই।’
মন্দিরের দ্বায়িত্বে থাকা সুফল চন্দ্র দাস বলেন, জামায়াত-শিবিরের লোকজন মন্দির পাহারা দিবে এটি কখনো ভাবিনি। আগে জানতাম জামায়াত-শিবির একটি উগ্র মৌলবাদি সংগঠন। তাদের সম্পর্কে আমার আগের সেই ভ্রান্ত ধারণা পাল্টে গেছে। এখন অনেক ভালো লাগছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা জামায়াতের আমির আমিনুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর থেকে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করছে দুর্বৃত্তরা। একই সঙ্গে বসতবাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। লুট করা হচ্ছে পুকুর, জলাশয়ের মাছ।
জামায়াতনেতা আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, এরইমধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বেশকিছু দোকানপাট ভাঙচুর ও লুট করা হয়েছে। এ অবস্থায় রঘুরাথ মন্দিরসহ হিন্দু পল্লির বাসিন্দারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষনিক নজরদারি করছে দলটির নেতাকর্মীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.