টেকনাফে র‌্যাবের পৃথক অভিযানে পৌনে ৩ লাখ ইয়াবা,২ কেজি আইস,৫শ বোতল ফেন্সিডিল,অস্ত্র ও কার্তুজ উদ্ধার,আটক-৪

কে এম নুর মোহাম্মদ, ক্রাইম রিপোর্টার্স, কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি : কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নস্থ রঙ্গীখালির গহীন পাহাড়ী এলাকা থেকে এবং বড় হাবিব পাড়া এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে  ৩ লক্ষ ১৪ হাজার পিস ইয়াবা, ২ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস,২টি ওয়ান শুটার গান, ৪ রাউন্ড কার্তুজ এবং ৫০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে  র‌্যাব-১৫ এর সদস্যরা।
এসময় কুখ্যাত মাদক কারবারী, অবৈধ অস্ত্রধারী এবং পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে মাদক চোরাকারবারির অন্যতম হোতা ও ইয়াবার গডফাদার খ্যাত নবী হোসেনের অন্যতম সহযোগী মোঃ রফিক আহাম্মেদ প্রকাশ বারমাইয়া রফিক ও তার একান্ত সহযোগী ফরিদ আলমসহ তিনজনকে আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন,মাদক চোরাকারবারির অন্যতম হোতা ও ইয়াবার গডফাদার খ্যাত নবী হোসেনের অন্যতম সহযোগী টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড ওয়াব্রাং সুইচপাড়ার আব্দুল কাদেরের ছেলে মোঃ রফিক আহাম্মেদ প্রকাশ বার্মাইয়া রফিক (৪০) তার একান্ত সহযোগী একই ইউনিয়নের মৌলভী বাজার এলাকার নুর আলমের ছেলে ফরিদ আলম (২৮) এবং টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড -বড় হাবিবপাড়ার মৃত অলিচাঁনের দুই ছেলে সৈয়দুর রহমান (৪৯) ও আজিজুর রহমান (৪৪)।
কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও
সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া)
মোঃ আবু সালাম চৌধুরী গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) ভোররাতে
র‌্যাব-১৫, কক্সবাজার এর একটি চৌকষ দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদক পাচারের হাট হিসেবে ব্যবহৃত  টেকনাফ থানাধীন হ্নীলার সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে কুখ্যাত মাদক কারবারী বার্মাইয়া রফিকের মাদক সিন্ডিকেট পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বড় একটি মাদকের চালান নিয়ে রঙ্গীখালীর গহীন পাহাড়ী আস্তানায় অবস্থান করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১৫ এর একটি চৌকষ আভিযানিক দল বর্ণিত স্থানে মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় র‌্যাবের অভিযানের বিষয়টি বুঝতে পেরে মাদক চোরাকারবারীরা দিক-বিদিক দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে মাদক ব্যবসায়ী, অবৈধ অস্ত্রধারী এবং পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে মাদক চোরাকারবারির অন্যতম হোতা ও ইয়াবার গডফাদার খ্যাত নবী হোসেনের অন্যতম সহযোগী মোঃ রফিক আহাম্মেদ প্রকাশ বার্মাইয়া রফিক (৪০) এবং তার একান্ত সহযোগী ফরিদ আলম (২৮) কে আটক করতে সক্ষম হয়। সেখান থেকে বিশেষ কায়দায় লুকায়িত অবস্থা থেকে ৩ লক্ষ ১৪ হাজার পিস ইয়াবা, ২ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস,২টি ওয়ান শুটার গান এবং ৪ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
 প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা পরস্পর যোগসাজসে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে মাদক চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আটককৃত বার্মাইয়া রফিক ছোট বেলায়ই তার পিতা-মাতার সাথে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে এবং টেকনাফ থানার হ্নীলা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ওয়াব্রাং সুইচপাড়া এলাকায় বসবাস শুরু করে। জীবিকার মাধ্যম হিসেবে সে প্রথমে নাফনদীতে মাছ ধরে এবং মাছ ধরার আড়ালে স্থানীয় ও মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ে মাদক ব্যবসার ভয়ংকর একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে। আটককৃত বার্মাইয়া রফিকের চাহিদা মোতাবেক পার্শ্ববর্তী দেশের মাদক ব্যবসায়ীরা মাদকের চালান প্রথমে নবী হোসেনের মাধ্যমে নাফনদী পার করে দেয় এবং সেখান থেকে বার্মাইয়া রফিক তার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাছ ধরার বোটে করে বাংলাদেশে নিয়ে এসে রঙ্গীখালির গহীন পাহাড়ে তাদের আস্তানায় ৬/৭ দিনের জন্য মজুদ করে। এ সময় বার্মাইয়া রফিক’সহ তার সিন্ডিকেটের সহযোগীরা আস্তানায় অবস্থান করতো এবং মজুদকৃত মাদকের চালান স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের নির্ধারিত এজেন্টদের নিকট সুবিধাজনক সময়ে সরবরাহ করতো। মাদকের চালান সরবরাহের পর তারা রঙ্গীখালির পাহাড়ী আস্তানা ত্যাগ করতো। পুনরায় বিপুল পরিমাণ মাদকের চালান বাংলাদেশে নিয়ে এসে রঙ্গীখালির কোন না কোন পাহাড়ী আস্তানায় মজুদ করে সরবরাহ করার এই প্রক্রিয়া অব্যাহতভাবে চলতে থাকতো।
মাদকের টাকা লেনদেনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আটককৃত বার্মাইয়া রফিক জানায় যে, তার নেতৃত্বে পাশ্ববর্তী দেশের মাদক ব্যবসায়ী সিকদারপাড়া এলাকার আইয়াজ এবং নাকফুরা এলাকার সলিম ও জুনায়েদ এর নিকট মাদকের চাহিদা করা হতো। চাহিদা মোতাবেক পাশ্ববর্তী দেশ থেকে অবৈধ পথে নিয়ে আসা মাদক তার নির্ধারিত এজেন্টের নিকট বিক্রয় এবং বিক্রয়লব্ধ অর্থ বার্মাইয়া রফিক তার এক নিকটতম আত্মীয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করতো। একইভাবে ক্রয়কৃত মাদকের মূল্য বাবদ ক্যাশ টাকা তার ঐ নিকটতম আত্মীয়ের মাধ্যমে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিকট প্রেরণ করতো। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা উক্ত টাকা বিভিন্ন কোম্পানীর বিক্রয়কর্মীদের মাধ্যমে টেকনাফস্থ কতিপয় হুন্ডী ব্যবসায়ীদের নিকট পাঠাতো।
এরপর হুন্ডি ব্যবসায়ীরা প্রাপ্ত টাকা টেকনাফস্থ বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এর বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় প্রেরণ করতো। পরবর্তীতে এই টাকা ডলারে রুপান্তর করে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, মায়ানমার’সহ বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করতো, যা পরে বিভিন্ন হাত বদল হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের মাদক ব্যাবসায়ীদের হাতে পৌঁছাতো। গ্রেফতারকৃত বার্মাইয়া রফিক মাদক ব্যবসার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশ এবং বাংলাদেশের মাদক ব্যাবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন ও মূল সমন্বয়কারী হিসেবেও ভূমিকা পালন করতো। রেকর্ডপত্র যাচাইন্তে তার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় হত্যা ও মাদক’সহ ৩টি মামলা রয়েছে।
আটককৃত ফরিদ আলম বার্মাইয়া রফিকের অন্যতম সহযোগী। সে বার্মাইয়া রফিকের নির্দেশে মাদক পাচার সংক্রান্তে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত ফরিদ বার্মাইয়া রফিকের মাছ ধরার বোটের আড়ালে ইয়াবার চালান নাফ নদীতে হস্তান্তর/গ্রহণ এবং বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী তাদের সুবিধাজনক স্থানে পৌঁছে দিতো। সে বার্মাইয়া রফিকের সিন্ডিকেটের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ইয়াবা পাচারকালে প্রশাসনের গতিবিধি এবং প্রতিপক্ষ মাদক কারবারীদের বিভিন্ন তথ্যাদি প্রদান করে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.