তীব্র তাপদাহে পুড়ছে কালাই , বিপাকে খেটে খাওয়া মানুষ

মোঃ মোকাররম হোসাইন, কালাই জয়পুরহাট প্রতিনিধি: তীব্র তাপদাহের কারণে সারা দেশের ন্যায়  জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় বিপর্যস্হ জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ফলে প্রচণ্ড রোদ আরও ভ্যাপসা গরমের সাধারণ ও কর্মজীবী মানুষের ভোগান্তি আর কষ্ট বেড়েছে। তবে সবচেয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। তীব্র রোদের কারণে দিনমজুর, রিকশাচালক ও ভ্যানচালকরা কাজ করতে পারছেন না। এদিকে কাজ না করলে খাবার জুটবে না। তাই পেটের তাড়নায় প্রচণ্ড দাবদাহ উপেক্ষা করে কাজে বেরিয়েছেন অনেকে। গরম উপেক্ষা করে বের হলেও অনেকেই হাঁসফাঁস করছেন।মানুষ প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছে।
তাদের দাবি তাপের তীব্রতায় কাজ করতে না পারায় মহাজনরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। অনেকে আবার খুব সকাল থেকে বেলা ১০-১১টা পর্যন্ত কাজ করছে ন্যুনতম পারিশ্রমিকের বিনিময়ে।
কালাই বাসস্ট্যান্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তীব্র গরমে নাজেহাল অবস্থা প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষের। বিশেষ করে দিনমজুর ও কর্মজীবীদের জীবন যেন বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। তার পরও জীবন-জীবিকার তাগিদে ঘাম ঝরিয়ে ছুটতে হচ্ছে তাদের। কেউবা কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিচ্ছেন ছায়ার নিচে। গরমের কারণে দীর্ঘসময় কাজ করতে না পারায় কমে গেছে তাদের আয়ের পরিমাণও। গরমের কারণে কষ্ট কয়েকগুণ বাড়লেও আয় বাড়েনি।
এ উপজেলার হাতিয়র বাজারে কথা হয় ভ্যানচালক সামছদ্দিন হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে ভ্যানচালাই। এমন গরম আগে কখনো দেখি নাই। এটা তো ধনী-গরিবের জন্য আলাদা হয় না। তার পরও যাদের গাড়ি আছে, তারা এসির মধ্যে শান্তিতে থাকতে পারে, বাড়ি ও অফিসে ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে বসে থাকতে পারে। আর আমাদের মতো গরিবের এই গরমের মধ্যেই কষ্ট করে ভাত জোগাতে হয়। একদিকে গরমের কারণে বেশিক্ষণ ভ্যান যেমন চালানো যায় না, আরেক দিকে যাত্রীও তেমন পাওয়া যায় না। মানুষ গরমের কারণে দিনে বাসা থেকে তেমন বের হয় না।
পাঁচশিরা বাজার এলাকায় আরেক ভ্যানচালক স্বাধীন বলেন,গরমের দাপটে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করা যাচ্ছে না। তীব্র রোদ আর বাতাসের হলকায় রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় চোখ মুখ পুড়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে যাত্রী না থাকায় তাদের আয় রোজগারে ভাটা পড়েছে।
ভ্যানচালক ঝামুটপুর গ্রামের রাশিদুল বলেন, সকালে কিছু সময় ভ্যান চালিয়ে বিকেলের আগে আর বের হতে পারি না। এতো গরমে ঘরেও শান্তি নেই। সারাদিনে অল্প কিছুক্ষণের জন্য ঘরে ফিরলেও লোডশেডিং। আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছি।
কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা.রেজাউল করিম বলেন, হিটস্ট্রোক ও পানিশুন্যতাসহ গরমজনিত রোগে প্রতিদিন আগত শতশত রোগীর চিকিৎসা দিতে যেয়ে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। গরমের তীব্রতার পাশাপাশি গরমজনিত অসুস্থতা থেকে রক্ষা পেতে তারা বার বার ভিজে কাপড়ে শরীর মোছা, বেশি বেশি পান পান, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া শিশুদের স্যালাইন না খাওয়ানোসহ বেলা ১০টা থেকে তিনটা পর্যন্ত ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন,সুপেয় ও নিরাপদ পানির অভাবে এসব রোগ হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, শ্রমজীবী মানুষ যারা উন্মুক্ত জায়গায় কাজ করছে, তারা তো সুপেয় ও নিরাপদ পানি পান না। ফলে তারা বাধ্য হয়ে রাস্তার পাশে অনিরাপদ পানি বা শরবত পান করছেন। এতে নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.