থানচির রেমাক্রি ব্রিজ এলাকার জঙ্গি সংগঠনের ১৭ জন ও পাহাড়ী কেএনএফ-এর ৩ জন গ্রেফতার বান্দরবান

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবানঃ বান্দরবানের থানচির রেমাক্রি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ১৭ জন সদস্য ও পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। র‍্যাবের এ অভিযানে র‍্যবের এই অভিযানে গ্রেফতারকৃতরা হলেন কুমিল্লার সদরে মোহাম্মদ সামির রহমান সাদ(১৯) পিতা মোঃ মাহবুবুর রহমান, মোঃ সোহেল মোল্লা সাইফুল্লাহ(২২), পিতা- মালেক মোল্লা বেতাগী বরগুনা। মোঃ আল-আমিন ফকির মোস্তাক(১৯), পিতা ফোরকান ফকির, সদর, পটুয়াখালী। মোঃ জহিরুল ইসলাম ওমর ফারুক(২৭), পিতা- আব্দুল লতিফ লাঙ্গলকোট, কুমিল্লা। মোঃ মিরাজ শিকদার আশরাফ হোসেন দোলন(২৬),পিতা -আনিস মুসল্লী,মোহাম্মদ ইলিয়াস রহমান তানজিল(৩২),পিতা দুলাল রহমান, মোঃ হাবিবুর রহমান মোড়া(২৩),পিতা আবু ইউসুফ হাওলাদার, মোঃ সাখাওয়াত হোসেন মাবরুর(২১),পিতা মালেক ফরাজী, মোঃ আব্দুস সালাম রাকি(২৮),পিতা- নাসির হাওলাদার কোতোয়ালি, বরিশালের জোবায়ের আহমেদ আইমান(২৯), পিতা- মাওলানা হোসাইন আহমম্মদ, মোহাম্মদ শামীম হোসেন আবু হুরাইরা(২৬),পিতা- মহাবুব মাতাব্বর,তাওয়াবুর রহমান সোহান মিন্টু(২০),পিতা- মৃত কুতুবুর রহমান, মোঃ মাহমুদ ডাকুয়া(২০),পিতা গোলাম মোস্তফা, মোঃ আবু হুরাইরা মিরাজ(২২),পিতা মৃত শামসুর রহমান এবং পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফ এর সদস্য লাল মুনসিয়াম বম, ফ্লাগক্রস বম, রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার মালসম পাংকুয়া(৫২),পিতা- -জলাসুর পাংকুয়া।

র‍্যবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক খন্দকার আল মইন সাংবাদিকদের জানান গ্রেফতারকৃত কেএনএফ সদস্য লাল মোল সিয়াম বোম জঙ্গি অভিযানের পর তা নেতৃত্বেই জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প হতে বিভিন্ন স্থানে সমতলে আত্বগোপন,চাঁদা,রসদ সরবরাহ,এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান সম্পর্কে জঙ্গিদের অবগত করত।

বোমা তৈরির সরঞ্জাম সহ বিপুল পরিমাণ দেশি ও বিদেশি অস্ত্র, , গোলাবারুদ ও নগদ ৭ লক্ষ টাকা উদ্ধার বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন র‍্যাব’র লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
বুধবার (৮ই ফেব্রুয়ারী) সকালে বান্দরবান জেলা পরিষদের কনফারেন্স রুমে অভিযানের বিষয়ে সাংবাদিকদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরেন মঈন।

প্রেস ব্রিফিংকালে র্যাবের কমন্ডার বলেন গত ২৩ শে জানুয়ারি কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার ইয়াহিয়া গার্ডেনের গহীন বনাঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করে জামাতুল আনসার আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র শুরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও বোমা বিশেষজ্ঞ বাশারকে গ্রেফতার করে র‍্যাব।গ্রেফতারকৃতদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পাহাড়ি অঞ্চল সহ বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি পরিচালনা অব্যাহত রাখা হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব জানতে পারে যে,নব্য এই জঙ্গী সংগঠনের বেশ কয়েকজন সদস্য বান্দরবানের থানচির লোয়াংমুয়াল পাড়া হয়ে রেমাক্রি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।এই তথ্যের ভিত্তিতে ৭ই ফেব্রুয়ারী রাতে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব ৭এর যৌথ অভিযানে রেমাক্রি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে।

র‍্যাবের পরিচালিত অভিযানে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ১৭ জন সহ পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ এর ৩ সদস্যকে গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ দেশি ও বিদেশি অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি, উগ্রবাদী বই, কন্টেন্ট, লিফলেট, অস্ত্র ক্রয়ের উদ্দেশ্যে রক্ষিত নগদ সাত লক্ষ টাকা এবং গ্রেফতারকৃতদের ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধার করে র‍্যাব।

প্রেস ব্রিফিংয়ে আরো জানায়, কেএনএফ এর আরেক সদস্য ফ্লাগক্রস বম জঙ্গিদের সাথে কেএনএফ প্রধান নাথান বম এর যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে কাজ করতো,সমতল থেকে পাহাড়ে বিভিন্ন পার্সেল তার নামে আসতো।গ্রেপ্তারকৃত মালসম পাংকুয়া জঙ্গিদের নিকট থেকে প্রাপ্ত নগদ অর্থ নাথান বোম এর কাছে পৌঁছে দেয়া ছিল তার মূল দায়িত্ব।এবং এই অর্থ দিয়ে অবৈধপথে অস্ত্রসহ সাংগঠনিক কাজে বিভিন্ন মালামাল ক্রয় করা হতো।

উল্লেখ্য গতবছরের ২৩শে আগস্ট কুমিল্লায় নিখোঁজ ৮ জন তরুনের উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামক একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় থাকার তথ্য পায় র‍্যাব।এই সংগঠনের সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সহায়তায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে পার্বত্য অঞ্চলে জঙ্গি বিরোধী অভিযান পরিচালনা শুরু করে র‍্যাব। গতবছরের ৩ অক্টোবর থেকে পার্বত্য এলাকায় জঙ্গি বিরোধী অভিযান শুরু করে র‍্যাব।

ইতুমধ্যে বিভিন্ন সময়ে র‍্যাবের পরিচালিত অভিযানে নতুন জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ সর্বমোট ৩৮ জন এবং পাহাড়ে অবস্থান,প্রশিক্ষণ ও কার্যক্রমে জঙ্গিদের সহায়তার জন্য পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফ এর ১৪ জন নেতা ও সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

অভিযানে এ পর্যন্ত জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ৫৫ জন এবং কেএনএফ এর ১৭ জন সদস্যকে আটক করা হয়েছে এবং আটককৃত কেএনএফ সদস্যদের দেয়া তথ্য মতে কেএনএফ এর দুইশ জন সক্রিয় সদস্য আছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

র‍্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয় আটককৃতদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.