দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ মেলা

আশিকুর রহমান (রিয়াদ), চলনবিল প্রতিনিধি: তাড়াশের ঐতিহ্যবাহী বারুহাস মেলা , যা প্রায় দেড়শ বছর আগে জমিদার আমলে গড়ে উঠে‌ছে। বুধবারে(৬এ‌প্রিল) অনুষ্ঠিত হয় এই ঐতিহ্যবাহী মেলা।

প্রতিবছর চৈত্র চন্দ্রিমার ১৩ তারিখে চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলা সদর হতে ১০ কিঃ‌কিঃ প‌শ্চি‌মে জমিদার খ্যাত বারুহাস বাজার চত্বরে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী মুল মেলা অনুষ্ঠিত হলেও মেলা শুরু হ‌য় বুধবার বি‌কেল থেকেই। এ ছাড়া মুল মেলার পরের দিন শুক্রবার ও অনুষ্ঠিত হবে বউ মেলা। এ কারনেই স্থানীয়রা বারুহাস মেলার উৎসব‌কে ৩ দিনের মনে করেন। এসব তথ্য জানা যায় মেলার আয়োজক সুত্রে। মেলার ইজারাদার লিটন চৌধুরী জানান, যে টাকায় মেলা ডে‌কে নিয়ে‌ছি তা ওঠা কষ্ট হ‌বে, মেলার নিজস্ব যায়গা না থাকায় মেলা আ‌গের চে‌য়ে ছোট হ‌য়ে গে‌ছে। এলাকায় ধান ও‌ঠেনি তাই, মেলার এ‌রিয়া ছোট হ‌য়ে গে‌ছে এবং লোক জ‌নের হা‌তেও টাকা আ‌সে‌নি। মেলায় মি‌ষ্টি বি‌ক্রি কর‌তে আসা বিপ্লব ঘোষ(৬১) ডেইলি ঢাকা মেইল কে জানান, ছোট বেলায় বাবার সা‌থে এখা‌নে মি‌ষ্টি বি‌ক্রি কর‌তে আসতাম এখন নি‌জেই বি‌ক্রি ক‌রি। ত‌বে মেলাতে আর আ‌গের ম‌তো জৌলস নেই। বেচা কেনাও আ‌গের ম‌তো হয় না। তার প‌রেও প্রতি বছরই মেলা‌তে আ‌সি মি‌ষ্টি বি‌ক্রি করতে, উত্তর বঙ্গ জুড়ে এ মেলার সুনাম ছিল তাও ৭০ দশক থেকে ৯০ দশকেও। মেলায় আসত অনেক দুর দুরান্তের মানুষ। সিরাজগঞ্জ, নাটোর, বগুড়া, শেরপুর ও পাবনা সহ দুর দুরান্তের জেলা থেকে শৌখিন দর্শনার্থীরা মহিষ ও গরুর গাড়ীর বহর নিয়ে মেলায় আসতেন। মেলায় কেনা কাটা ক‌রে রাখার জন‌্য, এক পাশে তাবু টানিয়ে রাখ‌তেন।
সে সময় বারুহাস মেলা ছিল ২৫ থেক ৩০ গ্রামের মানুষের সব চেয়ে বড় উৎসব। মেলার প্রস্তুতি চল‌তো ১ মাস আগে থেকেই। বাড়িতে জামাই ঝি আনা, লোক কুটুমকে দাওয়াত করা, খৈ মুড়ি ভাজা সহ মেলা বাসিরা ১ মাস আগ থেকেই ব্যস্ত সময় পার কর‌তো।

জামাইদের উপঢোকন বা পরবি দেওয়া ছিল এ মেলার সব চেয়ে বড় ঐতিহ্য। জামাইরা শশুড় বাড়ির পরবি পেয়ে মাছ,মাংস ও রঙিন হাড়িতে মিষ্টি কিনে শশুড় বাড়িতে ফিরতেন।

এ জন্য এক সময় এ মেলা জামাই মেলা নামেও পরিচিত হয়ে উঠেছিল। ২০০০ সালের পর থেকে মেলার জৌলুস ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এখন মেলার জৌলুস একেবারেই কমে গেছে। এখন মেলার উৎসব শুধু বারুহাস গ্রাম কেন্দ্রিক হয়ে গেছে।
মেলার নির্ধারিত জায়গা সংকট, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব সহ নানা কারনে এ মেলার জৌলুস দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে একসসয় দেড়শ বছরের এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখাই কঠিন হয়ে পড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.