দেশে মাদকসেবীরা ৬ থেকে ১০ ধরনের মাদক সেবন করছে

কালের সংবাদ ডেস্কঃ পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দেশে ২৪ ধরনের মাদক থাকলেও মাদকসেবীরা ৬ থেকে ১০ ধরনের মাদক সেবন করছে। ‘গ্যাং কালচার’ কিশোর-তরুণ, পথশিশু, হতাশাগ্রস্ত বিভিন্ন বয়সী শিক্ষার্থীরা কোনো না কোনো ভাবে মাদক গ্রহণ করছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর গত বছরের তথ্য বলছে, শতকরা ৪৪ ভাগ পথশিশু মাদক চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় সাড়ে ৫ লাখ শিশু মাদকাসক্ত এবং তাদের মধ্যে শতকরা ৩০ ভাগ শিশু মাদক গ্রহণের খরচ মেটাতে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে নারী মাদকসেবীর হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। ঢাকা আহছানিয়া মিশন নারী মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৬৪৭ জন নারীকে চিকিৎসা দিয়েছে। তাদের মধ্যে ১২৯ জন পুনরায় চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এসব নারীর মধ্যে ৩৩ শতাংশ ইয়াবা, ২৮ শতাংশ গাঁজা, ১৬ শতাংশ ঘুমের ওষুধ, ১৫ শতাংশ অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের মাদক, ২ শতাংশ মদ, ২ শতাংশ শিরায় মাদক নিয়েছেন। যাদের মধ্যে সিজোফ্রেনিয়া ৩৪ শতাংশ, মুড ডিজঅর্ডার ৩০ শতাংশ, বাইপোলার ১২ শতাংশ, ডিপ্রেশন ১০ শতাংশ, ওসিডি ৬ শতাংশ ও বাকিরা অন্যান্য মানসিক রোগে আক্রান্ত।

বন্ধুদের চাপ, একাকিত্ব, পরিবারের অন্য সদস্য বা বন্ধুবান্ধবের মাদক গ্রহণ, বিষণ্নতা, হতাশা, বাবা-মায়ের অতিরিক্ত প্রশ্রয় বা শাসন, অভিভাবকের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, বিচ্ছেদ, সন্তানকে সময় না দেয়ার প্রবণতা- এর জন্য দায়ী বলে মনে করছেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের হিসাবে দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৩৬ লাখ এবং সবচেয়ে বেশি মাদক ব্যবহারকারী ঢাকা বিভাগে। যদিও বেসরকারি হিসাবে, মাদক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭০ লাখের কাছাকাছি বলে দাবি বিভিন্ন সংস্থার।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক (রেজিস্ট্রার) রাইসুল ইসলাম পরাগ বলেন, পুরুষের তুলনায় খুব কমসংখ্যক মাদকাসক্ত নারী চিকিৎসা নিতে আসেন। এক্ষেত্রে অনেক সময় প্রেমিক- প্রেমিকা, শিক্ষার্থী, স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।
মুক্তি মানসিক হাসপাতাল ও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও মাদকাসক্ত বিশেষজ্ঞ ডা. আলী আসকার কোরেশী বলেন, বর্তমানে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের মধ্যে মাদক গ্রহণের প্রবণতা অনেকটাই বেড়েছে। বন্ধু, প্রতিবেশী, সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তি থেকে মাদক গ্রহণ করে থাকে নারীরা। গণমাধ্যমে মাদকের কুফল নিয়ে অনেক বেশি প্রচার- প্রচারণা, স্কুল-কলেজে বিভিন্ন সময়ে মাদকবিরোধী সেমিনারের আয়োজন করা, সন্তানের প্রতি বাবা-মা’র নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখার মাধ্যমে নারীদের মাদকে আসক্তির ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব বলে জানিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.