নওগাঁয় পৃথক স্থানে নবজাতকসহ ঘরের ভেতর থেকে হাত-পা বাঁধা নারীর লাশ উদ্ধার

আতাউর শাহ্, নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর মহাদেবপুরে কাপড়ে মোড়ানো অজ্ঞাতনামা নবজাতকের সহ ঘরের ভেতর থেকে হাত-পা বাঁধা এক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে কুঞ্জবন মাস্টার পাড়া এলাকা থেকে রীনা পারভীন (৪৩) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ ও শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে উপজেলার হাট চকগৌরী বাজারের পূর্ব পার্শ্বে থেকে এক নবজাতকের লাশ উদ্ধার করেছে নওহাটা ফাঁড়ি পুলিশ।

নওহাটা ফাঁড়ি পুলিশের এস আই জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, ভীমপুর ইউপির চকগৌরী বাজারের অদূরে নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে জনৈক মাসুদ রানার পরিত্যক্ত খলায় কাপড়ে মোড়ানো নবজাতকের লাশ মরদেহটি দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে তারা ফাঁড়ি পুলিশকে সংবাদ দিলে সেই নবজাতকের লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়। 

অপরদিকে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে উপজেলার কুঞ্জবন মাস্টার পাড়া এলাকা থেকে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় তার ঘরের আলমারীর তালা ভাঙ্গা ও জিনিসপত্র এলোমেলো ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার দিনের কোন এক সময় দুকৃতিকারীরা তার মুখ ও হাত-পা বেঁধে হত্যার পর আলমারী ভেঙ্গে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। নিহত রীনা পারভীন ফেরদৌস আলমের স্ত্রী ও মৃত ইয়াদ আলীর মেয়ে।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ২৫ বছর আগে ভালোবেসে উপজেলা সদরের দশকলোনী পাড়ার মৃত লোকমান হোসেনের ছেলে ফেরদৌস আলমের সাথে তার বিয়ে হয়। প্রায় ১৬ বছরের সংসার জীবনে তাদের কোন সন্তান না হওয়ায় তাকে রেখেই তার স্বামী ফেরদৌস গোপনে অন্যত্র আবার দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে তাদের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয় এবং ২০১৬ সালে তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর থেকে ছোটভাই একরামুল হোসেন ও ভাইয়ের স্ত্রীকে নিয়ে মধ্যবাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। কয়েক বছর আগে কুঞ্জবন মাস্টার পাড়ায় তার নিজস্ব জমিতে দুই ইউনিটের একটি বাসা তৈরি করে একটি ইউনিটে তিনি ও অপর ইউনিটে তার ছোট ভাই স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন।প্রতিদিনের ন্যায় ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার সকালেও একরামুল হোসেন ও তার স্ত্রী বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। এরপর বাসায় ফিরে রাত ৮ টার দিকে একরামুলের স্ত্রী ঘরের দরজা খুলে ঘরের মেঝেতে তার ননদ রীনা পারভীনের হাত-পা বাঁধা মরদেহ পরে থাকতে দেখে চেঁচামেচি শুরু করে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

নিহতের ভাই একরামুল হোসেন বলেন, রাত ৮ টার দিকে খবর পেয়ে তিনি বাড়িতে ছুটে আসেন। তার বোনের শ্বাসকষ্টের রোগ ছিল। প্রচন্ড শীতে তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। এজন্য সকাল বেলা তাকে না ডেকেই প্রতিদিনের মত আজও তারা স্বামী স্ত্রী সন্তানসহ বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। বিকেলে তার স্ত্রী বাসায় ফিরে আসে। কিন্তু তার বোনের কোন সাড়া-শব্দ না পেয়ে রাত ৮ টার দিকে ঘরের দরজা খুলে মুখ ও হাত-পা বাঁধা মরদেহ দেখতে পান। 

সত্যতা নিশ্চিত করে মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রুহুল আমিন বলেন, পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করতেই পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.