নড়াইলের পল্লীতে নৌকা তৈরির কারিগররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছে

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল থেকে: নড়াইলে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা প্রতি বছরের মত এসেছে বর্ষা, খাল বিলে পানি বাড়ছে। এসময় নড়াইলের কালিয়ায় ব্যস্ত সময় পার করছে নৌকার কারিগররা। উপজেলায় চলছে নৌকা তৈরির কাজ। চলছে পুরনো নৌকা মেরামতের কাজও।
উজ্জ্বল রায়, নড়াইল থেকে জানান, বর্তমানে শুধু বর্ষাকালে নিম্নাঞ্চল ও বন্যাকবলিত এলাকায় মানুষের পারাপার ও কৃষি কাজে নৌকা ব্যবহার হয়। বর্ষা মৌসুমে নিচু এলাকার বাসিন্দাদের যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে ওঠে নৌকা। চারদিকে বর্ষায় যখন রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়, তখন নৌকা, কলাগাছের ভেলা হয়ে ওঠে পারাপারের ভরসা। এ কারণে বিভিন্ন গ্রামে নৌকা তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে।
দিনরাত হাতুড়ি-বাটালের ঠুকঠুকানিতে মুখর কালিয়ার বড়নাল ও চাচুড়ীসহ বিভিন্ন এলাকা। এক সময় খাল ও বিল অঞ্চলে নৌকা ছিল যোগাযোগের অন্যতম বাহন। বর্ষাকালে বিল অঞ্চলের জনপদ পানিতে থৈ থৈ করে। ডুবে যায় রাস্তাঘাট, নদী-নালা, খাল-বিল। যাতায়াত করতে হয় নৌকায়। বর্ষাকালে মৎস্যজীবীরা মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করেন ছোটবড় নৌকা। তাই বর্ষা মৌসুম আসলেই এ অঞ্চলে বেড়ে যায় নৌকার কদর।
বুধবার (১২ জুলাই) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কালিয়ার বড়নাল গ্রামে কারিগররা নৌকা তৈরিতে এখন বেশ ব্যস্ত। দিনরাত নৌকা তৈরির কাজ করছেন।
কাঠের ব্যাবসায়ী মোক্তার মোল্যা বলেন, আমি পেশায় কাঠ ব্যবসায়ী, আর বর্ষা এলে নৌকা বানায়ে বিক্রি করি। ৯ বছর ধরে এ কাজ করছি। এ সময় আমার কারিগররা দম ফেলার সময় পায় না। আমি নিজেও নৌকা তৈরি করি। জুন মাস থেকে নৌকা তৈরি কাজ শুরু হয় আগস্টু মাসের শেষ পর্যন্ত তৈরি ও বিক্রি হয়। পানি বাড়লে বিক্রি বাড়বে। একটা নৌকা সাত- বারো হাজার টাকায় বিক্রি করি।
আরেক নৌকা ব্যাবসায়ী মিটু মোল্যা বলেন, আমি গাছের ব্যবসা করি, আর বর্ষা এলে নৌকা বানাই। চার বছর ধরে নৌকা তৈরি করে বিক্রি করি। এবার ৮ থেকে ৯ হাত দৈর্ঘ্যের নৌকা সাত-দশ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নৌকা বড় হলে দামও বাড়ে। গত কয়েক দিনে আমি বেশ কয়েকটি নৌকা বিক্রি করেছি।
এ বাজারে নৌকা কিনতে এসেছেন বড়নাল গ্রামের মিন্টু মল্লিক তিনি বলেন, বন্যায় নিচু সড়ক ডুবে যায়। বিলের ধান আনা, পরিবারের সদস্যদের পারাপার করার জন্য ৯ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে নৌকা কিনেছেন তিনি।
নৌকার কারিগর কাঠমিস্ত্রি মিন্টু মল্লিক বলেন, তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রী। কিন্তু বর্ষাকালে ৩ মাস নৌকা তৈরির কাজ করেন। বর্ষায় নৌকা আর বছরের বাকি সময়টা রাজমিস্ত্রীর কাজ করে চলে তার সংসার। একটা নৌকা তৈরি করতে একজনের ২ দিন সময় লাগে। মজুরি পান ২ হাজার ৫শ টাকা। এতে তার ভালোই চলে।
বড়নালের আরেক নৌকা ব্যাবসায়ী কিসলু মোল্যা বলেন, আমি পেশায় গাছ ব্যবসায়ী। আর বর্ষা এলে কারিগর দিয়ে নৌকা বানাই। তিন বছর ধরে নৌকা তৈরি করে বিক্রি করি।
নৌকার কারিগর মো. মুনসুর মোল্যা জানান, তিনি পেশায় কাঠমিস্ত্রী। বর্ষাকালে ৩ মাস নৌকা তৈরির কাজ করেন। বর্ষায় নৌকা আর বছরের বাকি সময়টা কাঠমিস্ত্রীর কাজ করে চলে তার সংসার। একটা নৌকা তৈরি করতে একজনের ২ দিন সময় লাগে। মজুরি পান ৩ হাজার টাকা। বর্ষায় পারাপারে যাতায়াতের জন্য ছোট ছোট নৌকার প্রয়োজন হয়। তাই বড় নৌকা তৈরি হয় না- ছোট নৌকার কদর বেশি।
এ বিষয়ে নড়াইল বিসিক-এর উপব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সোলায়মান হোসেন বলেন, নৌকা তৈরির কারিগরদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে। কারিগরদের দক্ষতা বৃদ্ধিসহ এ শিল্পের উন্নয়নের জন্য যা যা করা দরকার, তা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.