নড়াইল জেলা কালচাল অফিসার হামিদুর রহমানের বদলির আদেশ

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইল জেলা কালচাল অফিসার হামিদুর রহমানের বদলির আদেশ। অবশেষে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত নড়াইল জেলা কালচাল অফিসার মোঃ হামিদুর রহমানের বদলির আদেশ হয়েছে। নতুন কালচারাল অফিসার না আসা পর্যন্ত একজন সহকারী কমিশনার কালচারাল অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ-এর ২৩ সেপ্টেম্বর  স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে। তবে বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাধারণ শাখায় এ সংক্রান্ত আদেশ এসে পৌঁছায়নি।
নড়াইলের সাংস্কৃতিক কর্মী ও শিল্পকলা একাডেমীর শিক্ষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারী জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমান যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন অনিয়ম-দূনর্ীতিতে জড়িয়ে পড়েন। একের পর এক শিল্পকলা একাডেমীর ছোট ছোট শিক্ষাথর্ী ও তাদের অভিভাবকদের সাথে স্বেচ্ছাচারিতা ও দূর্বব্যহার করতে থাকেন। তার বিরুদ্ধে সংস্কৃতিক সংগঠন, শিল্পী, কলাকুশলী, বিচারক, উৎসব সমন্বয়কারীর সম্মানী ও যাতায়াতভাড়া না দেয়া, সাজসজ্জা, ডকুমেন্টেশন ও প্রচার, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা, জেলা শিল্পকলা অডিটোরিয়ামের সাউন্ড, ইলেকট্রিক ও ভবন সংস্কারসহ বিভিন্ন খাত থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকার দূনর্ীতির অভিযোগ ওঠে।
২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর নড়াইল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট জেলা কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ এনে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন। এর প্রেক্ষিতে ২৪ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসন ৫২জন সাংস্কৃতিক কমর্ী, শিক্ষাথরী, অভিভাবক ও ব্যবসায়ীর কাছ থেকে স্বাক্ষ্য গ্রহন করে এবং আনিত অভিযোগের সত্যতা পায়। গত ৬ ফেব্রুয়ারী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী কালচারাল অফিসার হামিদুর রহমানের  বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সংস্কৃতি বিষয়ক সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠায়।
এরই সূত্র ধরে গত ২ এপ্রিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর পক্ষ থেকে একটি তদন্ত দল নড়াইলে আসেন। হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সচিব সালাহউদ্দিন আহাম্মদসহ তিন জন কর্মকর্তা নড়াইল শিল্পকলা একাডেমীর শিক্ষক,শিক্ষাথর্ী, অভিভাবক ও  সাংস্কৃতিক কর্মীদের স্বাক্ষ্য নেন।
এদিকে হামিদুরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমানিত হলেও তিনি বহাল তবিয়তে নড়াইলে ছিলেন। সে প্রশাসন ও নড়াইলের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কাওকে পাত্তাই দেননি। জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে প্রচন্ড নাখোশ থাকলেও হামিদুরকে বদলী এবং দূনর্ীতি-অনিয়মের শাস্তি দেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ হিসেবে জানা গেছে, হামিদুরের খুঁটির জোর ছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকি।
জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সংগীত বিভাগের শিক্ষক আশিষ কুমার স্বপনসহ একাধিক শিক্ষক বলেন, কালচারাল অফিসার আমাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরকার নির্ধারিত সম্মানী না দিয়ে সাদা কাগজে সই করতে বলেছেন। না করলে গালগালাজ করেছেন।
শিক্ষার্থীরী অভিভাবকদের সাথে চরম দুর্বব্যবহার করেছেন। এসব কারণে গত ৫ এপ্রিল থেকে আমরা (শিক্ষক) ক্লাস বর্জন করি। এখন যেহেতু তিনি বদলি হয়েছেন। এখন আমরা ক্লাসে ফিরতে চাই। কারণ তিনি নড়াইলের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করেছেন। শিক্ষার্থীর সংখা চার ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। আমরা অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে এ ক্ষতি পুষিয়ে দিতে চাই।
এসব বিষয়ে জানতে জেলা কালচারাল অফিসার মোঃ হামিদুর রহমানকে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
নবাগত নড়াইল জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান এ প্রতিনিধিকে বলেন, শুনেছি নড়াইল জেলা কালচারাল অফিসারকে বদলি করা হয়েছে। তবে কি কারণে বদলি করা হয়েছে তা বলতে পারব না। তবে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির কথা শুনেছি। কালচারাল অফিসার বদলি হবার পর সহকারী কমিশনার দায়িত্ব পালন করবেন কিনা এটিসহ শিল্পকলার সার্বিক বিষয়ে খোজ-খবর নিচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.