পথে বসার আশংকা কৃষকদের কালাইয়ে নিন্মমানের আলুর বীজে বাজার সয়লাব

মোঃ মোকাররম হোসাইন, জয়পুরহাট জেলা  প্রতিনিধিঃ জয়পুরহাটের কালাইয়ে আর কয়েকদিন পরেই কৃষদের আলু রোপণের সময়। তার আগেই কালাই উপজেলায় সক্রিয় প্রভাবশালী বীজ আলু ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট চক্ররা। এ চক্রের সদস্যরা প্রতিদিন গভীর রাতে কয়েকটি হিমাগারে সংরক্ষণ করা তাঁদের কম দামের লোকাল আলু বস্তাবন্দী করে সেগুলোর ওপর নামসর্বস্ব বিভিন্ন সংস্থার  লোগো ব্যবহার করে বীজ হিসেবে বাজারে ছাড়ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
কিন্তু বস্তার ওপর সাঁটানো লোগোতে দেওয়া ঠিকানার কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। আবার বীজ আলুর বস্তায় সাঁটানো ওইসব সংস্থাকে জয়পুরহাট জেলা বীজ প্রত্যয়ন বিভাগ থেকে প্রত্যয়নও দেওয়া হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে,ওইসব বীজ আলু জমিতে রোপণ করলে, কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল। তাই কৃষকদের দাবি, কৃষকদের স্বার্থে অবিলম্বে জেলার বীজ আলুর ব্যাবসায়ী ও ডিলারদের গোডাউন তল্লাশি করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বীজের মান যাচাই-বাছাই করবেন। সেই সাথে তাঁদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখবেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সরেজমিন জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার এম ইশরাত হিমাগার, সালামিন ফুডস লিমিটেডসহ কয়েকটি হিমাগারে রাতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
অনুসন্ধানের সময় উপজেলার  বালাইট গ্রামে অবস্থিত সালামিন ফুডস্ লিমিটেড নামে হিমাগারে গিয়ে দেখা যায়, বীজ আলুর বস্তার ওপর- মহিববুল্লাহ্ সীড ১২-১৩, ঠাকুরগাঁ সীড, পপুলার সীড, বাদশা সীড, সুবর্ণা সীডসহ বিভিন্ন নামের লোগো সাঁটাচ্ছেন শ্রমিকরা। গভীর রাতেই সেগুলো জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন আলু ব্যাবসায়ীদের গোডাউনে সরবরাহ করা হয়। এসব বীজ আলুর মালিককে-? সেখানে শ্রমিকদের সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে, তাঁরা তাদের ভয়ে নাম প্রকাশের অস্বীকার জানায়।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, প্রভাবশালী ঐসব বীজ আলু ব্যবসায়ীরা স্থানীয় কিছু অর্থলোভী গণমাধ্যম কর্মীদের মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ করে, আর এই ভাবেই প্রতি গভীর রাতে অবাধে এমন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এতে করে লোকসানের ঝুঁকিতে পড়ছেন এলাকার কৃষকেরা। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও কৃষি কর্মকর্তাদের নাকের ডগায় এমন অপকর্ম চালালেও অজ্ঞাত কারণে নিরব থেকেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা।
নাম প্রকাশ না কারার শর্তে এক আলু বীজ ব্যবসায়ী জানান, তারা কয়েকজন মিলিয়ে প্রায় ৩৫ হাজার বস্তা আলু কিনেন। এরপর সেগুলো নিজেদের নামে জয়পুরহাট ও বগুড়া জেলার- সালামিন ফুডস্ লিমিটেড, এম ইসরাত হিমাগার, সুবর্ণা হিমাগার এবং নিউ কাফেলা হিমাগারসহ কয়েকটি হিমাগারে সংরক্ষণ করেন। এ জন্য তাঁদের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও আছে। তাঁর দাবি, টাকা দিয়ে আলু কিনে তো আর অন্য কারো নামে বা কোম্পানির নামে-তা হিমাগার সংরক্ষণ করা যায় না। তাই তাঁরা সেগুলো নিজের নামে নিজের পছন্দের হিমাগার সংরক্ষণ করেছেন। এখন ওই কোম্পানির লোগো ব্যবহার করে সেগুলো বাজারে ছাড়ছেন।
নাম প্রকাশ না কারার শর্তে অন্য এক আলু বীজ ব্যবসায়ী জানান, আলুগুলো তিনি কালাই উপজেলার এম ইশরাত হিমাগারে লোকাল বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করেছিলেন। এখন আলুর রোপণ মৌসুম হওয়ায়, সেগুলো বাদশা সীড ১২-১৩ নাম দিয়ে বস্তাবন্দি করে বাজারে ছাড়ছেন।
কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের আলু চাষী কৃষক জাহাঙ্গীর, সিরাজুল, উদয়পুর ইউনিয়নের ছামছুন, আনিছুর, জিন্দারপুর ইউনিয়নের সাজু, ইয়াসিন, আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের আক্তার হোসেন, আল-আমীন ও কালাই পৌরসভার এনামুল, তাহেরসহ অনেকেই জানান, হিমাগারে লোকালভাবে সংরক্ষণ করা আলুগুলো বিভিন্ন নাম সর্বস্ব সংস্থার লোগো ব্যবহার করে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। এতোমধ্যে অনেক কৃষকেরা বিভিন্ন আলু ব্যাবসায়ীদের গোডাউন থেকে উচ্চদামে আলুর বীজ সংগ্রহ করেছেন আবার অনেকেই সংগ্রহ করবেন।
এসব বীজ ব্যবহার করে, কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়তে পারে বলে তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁদের দাবি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে তদারকি করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
এ বিষয়ে কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুণ চন্দ্র রায় বলেন,এম ইসরাত হিমাগারে রাতে কোন একটি সংস্থার লোগো ব্যবহার করে, লোকাল বীজ আলু বস্তাবন্দী করা হচ্ছে-এমন খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক কৃষি বিভাগ থেকে লোক পাঠানো হয়। সে সময় লোকাল ভাবে সংরক্ষিত বীজ আলু কোন লোগো ব্যবহার না করে- সাদা বস্তায় ভরে বাজারজাত করতে বলা হয়েছে।
জয়পুরহাট জেলা বীজ বিপণন কর্মকর্তা রতন কুমার রায় বলেন, কালাই উপজেলার বিভিন্ন হিমাগারে মানহীন খাবার আলুকে বীজ হিসেবে প্যাকেট জাত করা হচ্ছে- এমন তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে জরুরী মিটিং করাও হয়েছে। এখন ছক অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা মো. শামীম বলেন, মহিববুল্লাহ্ সীড নামে জয়পুরহাটের কোন সংস্থাকে প্রত্যয়ন দেওয়া হয়নি। আমরা এ বিষয়ে ইতোমধ্যে জেনেছি-বীজ নিয়ে অপতৎপরতা চালাচ্ছে একটি চক্র। এ  বিষয়টি  মনিটরিং করা হচ্ছে। খতিয়ে দেখে দ্রæত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা কৃষি সস্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মোছা. রাহেলা পারভীন বলেন, রাতে যাতে করে জেলার কোন হিমাগারে  বীজ আলু বস্তাজাত করা না হয়- সেজন্য সংশ্লিষ্ট  কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নিতে বলবো। তবে নির্দেশনা দেওয়া আছে, মানহীন বীজ যাতে কেউ বা কোন চক্র বাজারজাত করতে পারে-সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে মনিটরিং শুরু করেছেন

Leave a Reply

Your email address will not be published.