ইখতিয়ার উদ্দীন আজাদ, পত্নীতলা (নওগাঁ): নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলায় এক তরুণ ব্যবসায়ীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। নিহত সুমন হোসেন (২৩) নজিপুর বাসস্ট্যান্ডের ফটোকপি ও কম্পিউটার ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন সেবার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলো।
তার গ্রামের বাড়ি জেলার মহাদেবপুর উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের উত্তর বিলছাড়া গ্রামে। নিহত সুমন হোসেন মৃত মঈন উদ্দিন ও শহিদা বেগমের ছেলে।
এ ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার দাবিতে ও রহস্যময় মৃত্যুর সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে সাধারণ ব্যবাসায়ী ও নজিপুর সরকারি কলেজ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে সোমবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে নজিপুর বাসস্ট্যান্ড চৌরাস্তায় পৃথক বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পথসভায় বক্তারা বলেন, ‘অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ঘটনার মূল হোতা বুলবুলের ফাঁসি দাবি জানানো হয়েছে।’
জানা যায়, রোববার (১৭ নভেম্বর) সুমন হোসেন পার্শ্ববর্তী উপজেলার মহাদেবপুর থেকে ঋণ পরিশোধ করার লক্ষে ১০ লাখ টাকা নিয়ে সিএনজি যোগে ফেরার পথে নাদৌড় মোড় এলাকায় ছিনতাইকারীরা ধাওয়া দিয়ে টাকা এবং মোবাইল ছিনতাই করে তাকে গাছে ঝুঁলিয়ে রেখে পালিয়ে যায়।
নিহত সুমন হোসেন নজিপুর বাসস্ট্যান্ড মসজিদ মার্কেটের সুমন কম্পিউটার দোকানের সত্ত্বাধিকারী ও নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর পত্নীতলা উপজেলা শাখার সদস্য। তাঁর রহস্যময় মৃত্যুতে নিসচা কমিটির পক্ষে সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুর শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। নিসচা কমিটির সংবাদ সংগ্রহ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ইখতিয়ার উদ্দীন আজাদ বলেন, কমিটির সদস্য সুমনের মৃত্যুতে আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া মাহফিলের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
ছিনতাইকারীরা যখন ধাওয়া করে তখন সুমন হোসেন তার নিজস্ব ফেসবুক একাউন্ট থেকে ৫.৪৭ মিনিট লাইভ করেন। সেখানে সুমন হোসেন বলেন, ‘আমাকে কেউ বাঁচান! ওরা আমাকে মেরে ফেলল। বুলবুল ভাই! আমি আপনার থেকে কখনই ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেইনি। আমি মহাদেবপুর থেকে আপনাকে দেওয়ার জন্য টাকা নিয়ে আসছিলাম। যেই কথা আপনি ছাড়া আর কেউ জানত না। কিন্তু আপনি আমাকে রাজনীতির ভয় দেখিয়ে অবশেষে মেরে ফেললেন? আমার মাকে কে দেখবে আমার বোনকে কে দেখবে আমার ভাগ্নাকে কে দেখবে?,
নিহত সুমন হোসেন আরো বলেন, ‘আমাকে বুলবুল যেখানে দাঁড়াতে বলেছিল সেখানে আমি দাঁড়াই। কিছুক্ষণ পরে দুর্বৃত্তরা আমাকে ধাওয়া করে। আমি সেখান থেকে পালিয়ে যাই। দুর্বৃত্তরা পরস্পরে আলাপ করছিল যে, ৫ লাখ বুলবুল নিবে আর বাঁকি ৫ লাখ টাকা আমরা ভাগ করে নিব।’
সুমন হোসেনকে ফেসবুকের মাধ্যমে লাইভের সূত্র ধরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে পত্নীতলা উপজেলা সরকারি হাসপাতালে নেয়। পরে রাতেই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে (সুমনকে) মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত সুমনের চাচাতো বোন সিনথিয়া জান্নাত কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ভাইকে যারা হত্যা করছে তাদের আইনের আওতায় এনে ফাঁসি দিতে হবে। যাতে এমন ঘটনা না ঘটে।আর কারো ভাই হত্যার শিকার না হয়।’
পত্নীতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শাহ্ মোঃ এনায়েতুর রহমান জানান, ‘এ ঘটনায় নিহত সুমনের পরিবারের পক্ষে থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। রহস্যময় মৃত্যু হওয়ায় নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য নওগাঁ জেলা মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।’
ওসি আরও বলেন, ‘সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধী সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে পুলিশ কাজ করছে।’
সোমবার বেলা ২ টায় এ প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত উল্লেখিত ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি বলেও ওসি নিশ্চিত করেন।