বগুড়ায় সরকারি শাহ সুলতান কলেজের তিন কর্মচারী আটক

বগুড়া জেলা প্রতিনিধি, সিফাত আল বখতিয়ার:  বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজের কর্মচারীদের প্রতারণার শিকার হয়ে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় শনিবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে জড়িত সন্দেহে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে অভিযুক্ত তিন কর্মচারীকে আটক করেছে র‍্যাব-১২ এবং সদর পুলিশ।

আটকরা হলেন- কলেজে মাস্টার রোলে কর্মরত হারুনুর রশিদ, অফিস সহায়ক আমিনুর রহমান ও আব্দুল হান্নান। এরমধ্যে হারুনুর রশিদ আর আমিনুর রহমানকে র‍্যাব-১২ ও হান্নানকে পুলিশ আটক করে।

এরআগে শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ তদন্ত করতে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের সচিব হুমায়ন কবিরের নেতৃত্বে চার সদস্যর প্রতিনিধি দল কলেজে আসেন। শনিবার সকাল থেকে তারা কলেজে উপস্থিত ভুক্তভোগী চার শিক্ষার্থী রাশেদুল হক, মিলন হাসান, উম্মে হাবীবা ও শারমিন আক্তারের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তাদের কাছ থেকে আলাদা লিখিত জবানবন্দি নেওয়া হয়। পরে কলেজের অভিযুক্ত কর্মচারী হারুন ও হান্নানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় জড়িত হিসেবে আমিনুরের নামও উঠে আসে। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তদন্ত কমিটির সামনে থেকেই র‍্যাব-১২ ও পুলিশ তাদের আটক করে।

ভুক্তভোগীরা জানান, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে অনলাইনে আবেদন করে কোনো কলেজে ভর্তির সুযোগ পাননি তারা। এ সুযোগে তাদের সরকারি শাহ সুলতান কলেজে ভর্তি করানোর প্রলোভন দেখিয়ে টাকা নেন কলেজের দুই অফিস সহায়ক হারুন ও হান্নান। টাকা দেওয়ার পর তাদের প্রত্যেককেই কলেজ প্যাডে দেওয়া হয় ভর্তির রসিদ। এরপর গত দুবছরে কলেজে নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তারা। হারুন মিয়ার কাছে পরিশোধ করেছেন বেতন ও পরীক্ষার ফি। এমনকি এইচএসসির ফরম পূরণ বাবদ তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে হারুন ৫ হাজার টাকা করেও নেন।

হারুন পরীক্ষার আগেই প্রবেশপত্র দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার পরীক্ষা শুরুর আগে ১৫ শিক্ষার্থী কলেজের অফিস রেজিস্ট্রার পরীক্ষা করে জানতে পারেন, তাদের ভর্তি প্রক্রিয়াটাই ছিল ভুয়া।

আটকের আগে অভিযুক্ত হারুনুর রশিদ বলেন, সবকিছু অপরাধ করেছি। এরসঙ্গে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের বিভিন্ন শাখার কয়েকজন জড়িত। ওনারাই বলেছিলেন শিক্ষার্থীদের এ প্রক্রিয়ায় ভর্তি করানো সম্ভব। টাকা আমি একাই খাইনি। তদন্ত হচ্ছে আমি সবই বলবো।

তদন্ত কমিটির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রাশেদুল হক বলেন, স্যাররা আমাদের সব অভিযোগ শুনেছেন। সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা বিশেষ প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ চেয়েছি।

সরকারি শাহ সুলতান কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক রেজাউন নবী বলেন, এরই মধ্যে কলেজেরও আলাদা তদন্ত কমিটি হয়েছে। কমিটিতে প্রধান করা হয়েছে কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল জলিলকে। অন্য দুই সদস্য হলেন- উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম ও দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল করিম। তাদের তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সাথে যারা তদন্ত সাপেক্ষে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।

রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের সচিব হুমায়ুন কবির বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের তরফ তদন্ত কমিটি হয়েছে। এজন্যআশা করি ২১ আগস্ট প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। ভর্তি জালিয়াতির ঘটনায় বোর্ডের বিভিন্ন শাখার স্টাফ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

র‍্যাব-১২ বগুড়ার স্কোয়াড লিডার (সহকারী পুলিশ সুপার) নজরুল ইসলাম বলেন, ছায়া তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে কলেজের তিন কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।।

Leave a Reply

Your email address will not be published.