বগুড়ার ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলার দেশ সেরা আকর্ষণীয় মাছ

বগুড়া জেলা প্রতিনিধি, সিফাত আল বখতিয়ার : মাঘ মাসের শেষ বুধবার ইছামতী নদীর পাড়ে আয়োজিত উত্তরবঙ্গের বৃহত্তম এ মেলা ‘সন্ন্যাস মেলা’ বা ‘জামাই মেলা’ নামেও সুপরিচিত। মেলায় এবারের ৪০ কেজি ওজনের আকর্ষণ ‘পাখি মাছ’।

বগুড়া জেলা শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার পূর্বে গাবতলী উপজেলার মহিষাবান গ্রামে ইছামতির তীরে পোড়াদহ এলাকায় এ মেলা বসে। ফলে মেলাটি সবার কাছে ‘পোড়াদহ’ মেলা নামেই সর্বাধিক পরিচিত।

প্রায় ৪০০ বছর আগে মেলাস্থলে একটি বিশাল বটবৃক্ষ ছিল। সেখানে একদিন হঠাৎ এক সন্ন্যাসী আসেন। পরে সেখানে আশ্রম তৈরি করেন সন্ন্যাসীরা। একপর্যায়ে স্থানটি পুণ্যস্থানে পরিণত হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে। এরপর থেকে প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবার ওই স্থানে সন্ন্যাসী পূজার আয়োজন করেন তারা। কালের আবর্তনে স্থানটিতে লোকজনের উপস্থিতি বাড়তেই থাকে। এতো লোকের সমাগম হওয়ায় বসতে থাকে নানা রকম শৌখিন ও প্রয়োজনীয় পণ্যের পসরা। এভাবে শুরু হয় পোড়াদহ মেলা।

বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মেলায় গিয়ে দেখা যায়, রীতি অনুযায়ী শ্বশুরবাড়িতে সবচেয়ে বড় মাছ কিনে নিয়ে যেতে চলছে জামাইদের নীরব প্রতিযোগিতা। এলাকার জামাই ছাড়াও আশপাশের ২৭ গ্রামের আত্মীয়-স্বজনে ভরে উঠেছে বাড়িগুলো। কেবল এলাকার মানুষ নয়, দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরাও আসেন ঐতিহ্যবাহী মেলাটির অভিজ্ঞতা নিতে। মাছের পাশাপাশি বিশাল আকার মিষ্টি আর নাগরদোলার ঘূর্ণিতে সময়টা উপভোগ করছেন সবাই।

এবারের মেলায় পুকুর-নদী-বিলের তাজা রুই, কাতলা, বিগহেড কার্প, ব্লাডকার্প, বোয়াল, আইড়, পাঙাশ ছাড়াও উঠেছে বিভিন্ন সামুদ্রিক হিমায়িত মাছ। স্বাভাবিকের চেয়ে বড় আকারের এ মাছগুলো সচরাচর বাজারে দেখা যায় না। মেলা উপলক্ষে এসব মাছ বছরের পর বছর যত্ন সহকারে বড় করেন মাছচাষিরা। আয়োজক কমিটি বলছে, মেলায় প্রায় পাঁচ কোটি টাকার মাছ বেচাকেনা হবে।

তবে বাঘাইড় বিলুপ্তপ্রায় মাছ হিসেবে সরকারি নিষেধাজ্ঞায় থাকায় মেলায় বেচাকেনা হয়নি। এতে মেলার মূল আকর্ষণ কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। মেলায় এবার সবচেয়ে বড় মাছ ৪০ কেজি ওজনের গোলপাতা বা পাখি মাছ। টাঙ্গাইল জেলার বাসিন্দা ও সামুদ্রিক মাছের ব্যবসায়ী শরিফ তালুকদার মাছটি বিক্রির জন্য কক্সবাজার থেকে এনেছেন। প্রতিকেজি ১৫০০ টাকা দরে মাছটির দাম ৬০ হাজার টাকা দাবি করছেন এ ব্যবসায়ী।

গাবতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, মেলা সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। গ্রামীণ এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে আগামীতেও প্রশাসন সহযোগিতা দিয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.