বুলবুল আহমেদ বুলু, বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ নওগাঁর বদলগাছী উপজেলাতে আগাম জাতের লিচু বাজারে উঠতে শুরু করেছে। তবে বেশি লাভের আশায় অপরিপক্ব লিচু বাজারে নিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে এসব লিচু। এর ফলে দাম সাধ্যের বাইরে হওয়ায় আগাম জাতের এসব লিচু কিনতে হিমসিম খাচ্ছে ধারণ মানুষ।
জানা গেছে, তীব্র তাপপ্রবাহ ও প্রচণ্ড খরায় বেশির ভাগ গাছের লিচু ঝরে পড়ায় ও ফেটে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। চলতি মৌসুমে গাছে গাছে লিচুর প্রচুর মুকুল এসেছিল। কিন্তু হঠাৎ প্রচন্ড তাপপ্রবাহ অধিকাংশ মুকুল ঝরে যায়। অবশিষ্ট মুকুল থেকে গুটি ও লিচু হয়ে গেলেও কাংখিত সময়ে বৃষ্টির দেখা মেলায় প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ ও খরায় ৪০ শতাংশ লিচু ফেটে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ব্যাপক লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা।
মৌসুমের শুরুতেই হঠাৎ বাজারে লিচু দেখে চোখ আটকে যাচ্ছে ক্রেতাদের। তবে দাম বেশি হওয়ায় কিছু ক্রেতা মৌসুমের প্রথম ফল হিসেবে কিনলেও ফিরে যাচ্ছেন অনেকেই।
সোমবার সকালে সরেজমিনে গোবরচাঁপা বাজার ভান্ডার পুর বাজার কোলা বাজার বদলগাছী সদর সহ বেশকিছু বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের দুই পাশে লিচু বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এই লিচু বছরের প্রথম ফল হিসেবে শখ করে বেশি দাম দিয়েই কিনছেন কেউ কেউ। আবার কেউ দাম শুনেই পিছু হটছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিপক্ব লিচু আসতে এখনো অনেক সময় লাগবে। সাধারণত এসব লিচু পেতে মে মাসের শেষ বা জুনের শুরু পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
ব্যবসায়ী রাসেল বলেন, আগামজাতের কিছু লিচু ইতিমধ্যে গাছ থেকে নামানো শুরু হয়েছে। তবে শুরু থেকেই ফলন কম ছিল। পরে প্রচণ্ড দাবদাহ ও অনাবৃষ্টিতে লিচু ফেটে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে একদিকে লিচুর সংখ্যা কমে গেছে, অন্যদিকে লিচু বাছাই করতে করতেই দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে শ্রমিকও বেশি লাগায় খরচ বেড়ে যাচ্ছে। যে টাকায় বাগান কিনেছিলাম ১০০ লিচু ৩০০ টাকা করে বিক্রি করলেও লাভ হবে না। কিন্তু আমরা ১ হাজার লিচু খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। তারা বেশি দামে বিক্রি করবে।
আগাম লিচু বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ী খাইরুল বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহ ও প্রচণ্ড খরায় বেশির কারণে গাছের লিচু ঝরে পড়ে ফেটে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে বাগান মালিকরা ভয়ে আগেই লিচু নামিয়ে ফেলছেন। তবে দেশি জাতের লিচু একটু আগেই বাজারে আসে। অন্যদিকে অল্প দাম হলেও কিছু টাকা পাচ্ছে বাগান মালিকেরা।
লিচু কিনতে আসা রুনা বেগম জানান, পছন্দের লিচু এখনও বাজারে আসেনি। ছেলে-মেয়েরা লিচু অনেক পছন্দ করে তাই কিনতে এসেছি। কিন্তু এসে দেখি আকারে ছোট এবং আধাপাকা লিচু। স্বাদ কম দামও চড়া।
লিচু কিনতে আসা শরিফুল ইসলাম জানান, দাম অনেক বেশী। ১০০টি লিচু কেনার ইচ্ছা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ৫০টি লিচু কিনেই বাড়ি ফিরছেন তিনি। তবে স্বাদ ও আকারে এখনো লিচু পরিপক্ক হয়নি। কেবলমাত্র বাড়তি মুনাফার আশায় ব্যবসায়ীরা গাছ থেকে লিচু ভাঙছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।