বদলগাছীতে বরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও বাজারে কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় কৃষক হতাশ

আবু সাইদ বদলগাছী ঃ নওগাঁর বদলগাছীতে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষক-কৃষাণীরা মহা খুশি। কিন্তু বাম্পার ফলন হলেও বাজারে গিয়ে ধানের কাঙ্খিত মুল্য না পওয়ায় উপজেলার কৃষককুল চরম হতাশায় পড়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সুত্রে জানা য়ায়, উপজেলায় চলতি মৌসুমে বরো ধান চাষাবাদের লক্ষমাত্রা ছিল ১১ হাজার ৭ শত ৫ হেক্টর জমিতে। লক্ষমাত্রার চাইতে ৩৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ বেশি হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষমাত্রা ছিলো ৫১ হাজার ৭ শত ৮৪ মেঃ টন। চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষমাত্রা দুটই ছাড়িয়ে গিয়েছে।

উপজেলায় এখন ধান কাটা মাড়াই ব্যাস্ত কৃষক কৃষাণীরা। এক মন ধান দিয়ে ২ জন শ্রমিকের মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে তাও হচ্ছে না। কৃষকের বাড়ি থেকে ধানের জমি দুরত্ব বেশি হলে আবার দেড় মোন ধানে ২ জন শ্রমিক মিলছে। তাছাড়া বীজতলা থেকে শুরু করে বরো ধান উৎপাদন খরচ বিঘা প্রতি প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। সেখানে ধানের বিঘা প্রতি ফলন ২০ থেকে ২২ মন। বর্তমান বাজার মুল্যে ধান বিক্রয় করলে কৃষকের তেমন কিছুই লাভ থাকছেনা। কারণ দিনে রাতে ধানের বাজার পরিবর্তন হতেই আছে। মধ্যশর্তভ‚র্গী ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কুষকের খলিয়ান হতে বাজারের দাম থেকে ১ শত থেকে দেড় শত টাকা মন প্রতি কম দামে ধান কিনছে। আবার তার সাথে মন প্রতি ২ কেজি করে ধলতা নিচ্ছে। এমন ব্যবসায়ীরা আবার তাদের ক্রয়কৃত ধান অটো বা সাধারণ বয়লারে গিয়ে উচ্চ মুল্যে বিক্রি করছে। আবার কোন কোন মধ্যেশর্ত ভ‚গী ধান ব্যবসায়ী নওগাঁ জেলার মধ্যে নাম করা প্রধান ধানের হাট বা ক্রয়-বিক্রি করার স্থান বদলগাছী উপজেলার পার্শবর্তী মহাদেবপুর উপজেলার মাতাজি হাটে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাতাজি হাটে প্রায় শতাধিক ধানের আড়ৎদার রয়েছে। তারা ও ভ্রাম্যমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে কেজির পরিবর্তে পূর্বের বাংলা ওজন ৭৮ কেজিতে মন হিসেবে ধান ক্রয় করে থাকেন। সেখানে ও মধ্যশর্ত ভ‚গী ধান ব্যবসায়ীরা গ্রাম থেকে সরাসরি কৃষকের কাছে থেকে কেজি হিসেবে ওজন ও প্রতি মনে ২ কেজি ধলতা হিসেবে ৪২ কেজিতে মন কিনছে। অর্থাৎ মধ্যশর্তভ‚গী ক্ষুদ্র ধান ব্যবসায়ীরা ধান কিনতেই মন প্রতি ২ কেজি ধান ধলতা নিয়ে বিক্রি বা মহাজনদের নিকট পৌঁছানোর আগেই লাভের মুখ দেখছে। অথচ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে প্রখর রোদ্রে যে কৃষক ধান উৎপাদন করলো তাদের লাভের মূখ দেখা দুরহ ব্যাপার হয়ে পড়েছে। কোন কোন কৃষক বলছে, বাড়ির উৎপাদিত ধানের ভাত খেয়ে লুঙ্গীতে হাত মুছে শুকরিয়া আদায় করা ছাড়া কৃষক-কৃষাণীদের আর কিছুই করার নেই।

উপজেলার চাংলা গ্রামের কৃষক রশিদুল ইসলাম জানান, চলতি বরো ধানের আবাদ করেছেন প্রায় ১০ বিঘা। বিঘা প্রতি ধানের ফলন নিয়ে সে বেশ সন্তষ্ট হলে ও দাম নিয়ে চরশ হতাশা প্রকাশ করেছেন। তার সাথে মধ্যেশর্ত ভ‚গী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মন করা ২ কেজি ধলতা নিচ্ছে তা অত্যান্ত দুঃখ জনক বলে জানিয়েছে। ফলে ৪০ কেজিতে মনের স্থানে ৪২ কেজিতে মন নিচ্ছে এইটা এক্ষুনি বন্ধের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারী ও হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

উপজেলার হাপুনিয়া গ্রামের আরেক কৃষক জইম উদ্দীনের ছেলে সবুজ হোসেন জানান, সে ৫ বিঘা জমিতে বরো ধানের চাষা-আবাদ করেছেন। ফলন বেশ ভালই পেয়েছেন। কিন্তু ধানের দাম না থাকায় উৎপাদন খরচ তোলা নিয়ে চরম হতাশায় ভ‚গছেন। কিন্তু মধ্যশর্তভ‚গী ক্ষুদ্র ধান ব্যবসায়ীদের লাভ কৃষকের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানিয়েছে হতাশাগ্রস্ত কৃষকরা।

এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাবাব ফারহানের সাথে যোগাযোগ করা হলে সে জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ধান চাষা-বাদ ও ফলন লক্ষমাত্রা ছড়িয়ে গেছে। বর্তমানে ধানের বাজার মূল্য একটু বেশি হলে কৃষককুল লাভবান হতো। অপর দিকে ধানা কাটা মাড়াইয়ের জন্য যখন শ্রমিক সংকট ঠিক তখন ভ‚র্তুকীতে হারভেস্টার মেশিন সরকার থেকে প্রদান করায় কিছুটা হলে ও কৃষকের ঘরে ধান তুলতে খরচ কম পরেছে। ভবিষৎতে এই উপজেলা কৃষি কাজে ব্যবহিত যান্ত্রিক মেশিন বৃদ্ধি পেলে শ্রমিক সংকট দুর হবে এবং উৎপাদন খরচ ও কমে যাবে।

উপজেলার কৃষক কুলের দাবী তাদের উৎপাদিত ধানের নায্যমুল্য পেতে ও ধলতা প্রথা তুলে দিয়ে কৃষক বাঁচান দেশ বাঁচান এমন আকুতি জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন. এমপি ও খাদ্যমন্ত্রীর নিকট। #

Leave a Reply

Your email address will not be published.