“বদলগাছীতে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারেননি অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা

বুলবুল আহমেদ ( বুলু) বদলগাছী- নওগাঁ প্রতিনিধিঃ আজ ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালি জাতিসত্তার গৌরবোজ্জ্বল ও স্মৃতিবিজড়িত একুশে ফেব্রুয়ারি’র বাহাত্তর বছর পূর্ণ হলো। তবে এবারও নিজের প্রতিষ্ঠানের অঙ্গনে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারেনি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার অধিকাংশ  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
নিজেদের প্রতিষ্ঠানে কোনো শহীদ মিনার না থাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এসব শিক্ষার্থীকে যেতে হয়েছে নিকটবর্তী শহীদ মিনারে।
উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বদলগাছী উপজেলায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা এবং প্রি- ক্যাডেট মোট সংখ্যা ২১২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । এর মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই।
উপজেলার একটি মাদ্রাসাতে শহীদ মিনার নেই। এছাড়া ৪১ ভাগ প্রাথমিক, ৯০ ভাগ মাধ্যমিক ও ৬৫ ভাগ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই।
বদলগাছী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো আমিরুল ইসলাম ইসলাম বলেন, উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৩৩টি, এর মধ্যে মাত্র ৯৮টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার আছে।
এছাড়া উপজেলায় প্রি-ক্যাডেট বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৬ টি। সব মিলিয়ে ১৫৯ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬১ টিতেই কোনো শহীদ মিনার নেই।
উপজেলার একাডেমিক সুপারভাইজার অঞ্জন কুন্ডু বলেন, উপজেলায় ৩৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে বেশীরভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার  নেই। ১৭টি মাদ্রাসার মধ্যে একটিতেও  শহীদ মিনার নেই। ফলে সাধারন শিক্ষার্থীরা ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারেন নি।
তিনি আরও বলেন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেওয়ার পরও তারা নির্মাণে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।”
বদলগাছী উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো রশিদুল ইসলাম বলেন,সরকারিভাবে বরাদ্দ না থাকায় ৩৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। তারপরও সব বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে স্থানীয়ভাবে অর্থ জোগাড় করে শহীদ মিনার নির্মাণে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
উপজেলার ফতেজংগপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুল গাফ্ফার বলেন, অর্থ বরাদ্দ না থাকায় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।
উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের বেশীরভাগ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। ফলে আমরা উপজেলা শহীদ মিনারে ১২:০১ মিনিটে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি।
উপজেলার গোড়শাহী জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষার্থী নিশান হোসেন বলেন, আমাদের স্কুলে শহীদ মিনার নেই। তাই খুব খারাপ লাগে। আমরা কাপড়ের তৈরী শহীদ মিনার বানিয়ে তাতে ফুল দেই। এবার স্কুল বন্ধ তাই বাবার চায়ের দোকানে কাজ করছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৃপ্তি কণা মন্ডল বলেন, শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও কোনো বরাদ্দ নেই। এটি বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ (কমিটি) স্থানীয়ভাবে ফান্ড সংগ্রহ করে নির্মাণ করতে পারেন।
ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারি-বেসরকারিভাবে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.