বাউফলে সেই শ্বশুর বাড়ি আত্মহত্যা রহস্য উদঘাটন,মা’য়ের মামলা।

সাংবাদিক মোঃ আল-আমিন (পটুয়াখালী) : পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের নিমদী-তাতেরকাঠি গ্রামে ঘটে যাওয়া শ্বশুর বাড়ি জামাইয়ের আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় অবশেষে হত্যার রহস্য উদঘাটন সহ অভিযোগ পাওয়া গেছে। এঘটনায় পটুয়াখালী বিজ্ঞ আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের মা আসমা বেগম।নিহত জামাইয়ের নাম মোঃ অলিউল্লাহ (২৮), তিনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ কালাম হাওলাদারের ছেলে।
আর নিহত জামাই অলিউল্লাহর শ্বশুরের নাম মোঃ ইসমাঈল মোল্লা, তিনি নাজিরপুর ইউনিয়নের নিমদী-তাতেরকাঠি গ্রামের বাসিন্দা মোঃ আলী মোল্লার ছেলে।নিহত অলিউল্লাহর মা আসমা বেগম মৃত্যুর রহস্য তুলে ধরে বলেন আমার ২ছেলের মধ্যে অলিউল্লাহ বড়। ছোট থেকেই অলিউল্লাহর শ্বশুর আমার আপন বড় ভাই ইসমাঈল মোল্লার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে বড় হয়। এবং আমার ভাইয়ের বড় মেয়ে রাবেয়ার সাথে সম্পর্কে জরিয়ে পড়ে তাই আমরা উভয় পক্ষই মিলে,আজ থেকে ৬/৭ বছর পূর্বে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিবাহ দেয়া হয়। বিবাহের পর থেকেই সংসার চালাতে চাকরি নেয় অলিউল্লাহ।
এদিকে আমার ভাইজি অলিউল্লাহর স্ত্রী রাবেয়া একাধিক বার পালিয়ে বিভিন্ন জায়গায় চলে যেত। আবার সেখান থেকে খোঁজখবর করে আনা হতো বাড়িতে। এরমধ্যে তাদের ঘরে একটা ছেলে সন্তান হয়। বেশকিছু দিন যাওয়ার পড়ে আবার পুনরায় রাবেয়া স্বামী সন্তান রেখে পালিয়ে চট্টগ্রাম গিয়ে গার্মেন্টস চাকুরী নেয়। সেই খবর পেয়ে সেখান থেকে আবার পুনরায় আনা হয়।কিন্তু এব্যাপারে আমার ভাইয়ের স্ত্রী ভাবী, তার বোন ও জামাই সব জানলেও মেয়েকে কোনও প্রকার শাসন করেননি বরং আরও মেয়েকে উৎসাহ দিয়ে থাকেন তারা।
কিছুদিন থাকার পরে রাবেয়া আবার কোথায় যেন পালিয়ে চলে যায়।এদিকে রোজার ঈদের ২দিন আগে রাবেয়া তার বাবার বাড়ি এসেছে শুনতে পেয়ে অলিউল্লাহ তার ছোট সন্তানকে নিয়ে আমার ভাইয়ের বাড়ি মানে অলিউল্লাহর শ্বশুর বাড়ি আসে। আমরা পরিবার সহ ঢাকাতে থাকায় আমার বড় ভাই, ছোট ভাই ও আমার বাবা ও মার সাথে যোগাযোগ রাখি এবং অলিউল্লাহ কে দেখে রাখার জন্য বলি। অলিউল্লাহ ঈদের দুইদিন পরে সোমবার রাত ১২টার দিকে আমার সাথে ফোন দিয়ে কথা বলেছে।কিন্তু রাত গিয়ে সকাল হতেই একদম ভোর বেলা আমার ছোট ভাই কাদের মোল্লা আমাকে ফোন দিয়ে বলে অলিউল্লাহ অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাড়াতাড়ি যেন আমরা ঢাকা থেকে গ্রামে চলে আসি।
তাই দেরি না করে এসে শুনি আমার অলিউল্লাহ নাকি আত্মহত্যা করেছে। লাশ থানায় নিয়ে গেছে।আমরা থানায় গিয়ে শুনি লাশ পোস্টমর্টেম করার জন্য পটুয়াখালী পাঠিয়ে দিয়েছে।ওই রাক্ষসী ডাইনি পরকিয়া করতো যা আমার অলিউল্লাহ জেনে ফেলেছে। আমার অলিউল্লাহ আত্মহত্যা করেনি, তাকে রাবেয়া সহ ওর পরিবার রাতের গভীরে হত্যা করে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছে। আমার অবুঝ ছোট নাতিটাকে এতিম করে ফেলেছে।আমি বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছি।আমি আমার ছেলে অলিউল্লাহকে হত্যার বিচার চাই।
বাবা কালাম হাওলাদার বলেন, আমার ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে না, রাবেয়ার মা,খালা-খালু মিলে হত্যা করেছে।রাবেয়া পরকিয়া করতো, যার লিড দিতো ওর মা, খালা,খালু ও তার বোন। উক্ত ঘটনা আমার ছেলে জেনে ফেলায় তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।নিহত অলিউল্লাহর ছোট ভাই সহ তার এলাকার লোকজন জানান, অলিউল্লাহ ছোট থেকে তার মামা বাড়ি বড় হয়েছে এবং সেখানে থেকেই পড়াশোনা করেছে।অলিউল্লাহ মামাতো বোনের সাথে সম্পর্ক করে এবল বিয়ে সাদী হয়। পরে আমরা শুনতে পাই ওই মেয়ে নাকি পরকিয়া করতো।
সেজন্যই বারবার স্বামী সন্তান রেখে পালিয়ে চলে যেত। তবে আমরা নিশ্চিত অলিউল্লাহ আত্মহত্যা করেনি তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। যার একাধিক প্রমাণ পড়ে আছে। আমরাও দাবি করছি প্রশাসনের কাছে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনা হোক।এদিকে অলিউল্লাহ আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে সেই দিকে নজর রেখে প্রতিবেদক অনুসন্ধান চালান।ঘটনার পর থেকেই  তাদের ঘর তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।
এব্যাপারে ইসমাঈল মোল্লার বাবা আলী মোল্লা বলেন, ঘটনার পর থেকেই তারা কোথায় যেন চলে গেছে ঘরে তালা দিয়ে। আর অলিউল্লাহ আমার মেয়ের ঘরের বড় নাতি। ছোট থেকে আমার বাড়িতে বড় হয়েছে। ইসমাঈল মোল্লা আমার বড় ছেলে। সে রাস্তার পাশে ঘর করায় সেখানেই তার পরিবার নিয়ে বসবাস করতো, আর আমি আমার পুরান বাড়িতেই থাকি। তবে অলিউল্লাহ আত্মহত্যা করতে পারে না। কিছু একটা হয়েছে, কোনও রহস্য রয়েছে।স্থানীয় লোকজন জানান, অলিউল্লাহ ছোট থেকেই ভদ্র শান্ত ছিল,আমাদের মাঝেই বড় হয়েছে।
অলিউল্লাহ মামাতো বোনকে বিয়ে করেছে ভালোই ছিল দেখেছি।তবে অলিউল্লাহর শ্বশুর, শাশুড়ী, স্ত্রী ,খালা-খালু, বোন যা বলে যে অলিউল্লাহ আত্মহত্যা করেছে তা আমাদের বিশ্বাস হয় না। এরমধ্যে নিশ্চিত কোন  কিন্তু আছে। প্রশাসনের সঠিক তদন্ত করা উচিৎ  তাহলেই বের হয়ে আসবে মূল রহস্য।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়,যে রাতে এঘটনা ঘটে সেই সোমবার রাতে অলিউল্লাহর স্ত্রী রাবেয়া, শ্বশুর শাশুড়ী, বোন, জামাই ও খালা-খালু ঘরোয়া ভাবে পিকনিকের আয়োজন করে খাওয়া দাওয়া সেরে ঘরের মাঝখানের রুমে অলিউল্লাহ সন্তান সহ তার স্ত্রী রাবেয়া কে নিয়ে ঘুমাতে যান।
পাশের রুমে শ্বশুর শাশুড়ী। কিন্তু সেই রুমেই ফ্যানের সাথে অলিউল্লাহর ঝুলন্ত লাশ কেন? সাথে স্ত্রী থাকা সত্যেও বা পাশের রুমে শ্বশুর,শাশুড়ী থাকায় অলিউল্লাহ কিভাবে আত্মহত্যা করতে পারে? এটা হত্যা করা হয়েছে।আরও জানা যায়, ওই রাতের গভীরেই স্ত্রী রাবেয়া ও শাশুড়ী কর্তৃক অলিউল্লাহকে মারধর করা হয়েছে।উল্লেখ্য: গত মঙ্গলবার (২৫ -৫-২০২৩খ্রিঃ) সকাল‌ নয়টার দিকে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের নিমদী তাঁতেরকাঠি নানা আঃ আলী মোল্লার ছেলে ইসমাঈল মোল্লার ঘর থেকে মেয়ে জামাই মোঃ অলিউল্লাহর ফ্যানের সাথে রশি দেওয়া ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এঘটনায় অলিউল্লাহর মা আসমা বেগম পরেরদিনই হত্যার অভিযোগ এনে থানায় মামলকরতে গেলে বাউফল থানার ওসি এটিএম আরিচুল হক মামলা না নিলে গত ৩০ এপ্রিল-২০২৩ পটুয়াখালী বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আমলী আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যাহার মামলা নং ৩০৬/২০২৩

Leave a Reply

Your email address will not be published.