খন্দকার নজরুল ইসলাম মিলন, মাগুরা প্রতিনিধি: মাগুরার বিভিন্ন অঞ্চলে কদর বাড়ছে পাটকাঠির। আবহমান কাল থেকে রান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া, পানের বরজ, গৃহস্থালী সামগ্রীসহ বিভিন্ন সৌখিন পাটজাত পণ্য তৈরীর কাজে পাটকাঠির জুড়ি নেই। বর্তমানে বিভিন্ন পার্টিকেল বোর্ড তৈরিতে পাটকাঠি ব্যবহার হচ্ছে যার ফলে পাটকাঠির মূল্য ক্রমশ বেড়েই চলেছে। একসময় শুধুমাত্র জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হতো পাটকাঠি।
এখন পাটকাঠির বহুমুখী ব্যবহারের কারণে কদর বেড়েছে কয়েক গুন। সোনালী আঁশের রূপালী কাঠিতে আশার আলো দেখছেন পাটচাষীরা। কথিত রয়েছে পাটকাঠির ছাই বাসন মাজা, দাত মাজার জন্য অন্যতম নিয়ামক। বিভিন্ন কলকারখানায় পাটকাঠির বেশ কদর রয়েছে। গঙ্গারামপুর বুনাগাতি, বরইচারা, ধনেশ্বরগাতিসহ বিভিন্ন নদী বিধৌত অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার দুপাশ দিয়ে পাটকাঠি শুকাতে দেওয়া হয়েছে। রান্নার কাজের জ্বালানি সংগ্রহ করার জন্য কাক ডাকা ভোরবেলায় বিভিন্ন এলাকার মহিলারা পাট চাষীদেরকে কাছ থেকে পাট চেয়ে আঁশ ছাড়াতে সহায়তা করছেন বিনিময়ে নিচ্ছেন পাটকাঠি।
উপজেলা সদর আড়পাড়া ইউনিয়নের বরইচারা গ্রাম ঘুরে দেখা যায় খাল, বিল ও নদীর ধার দিয়ে শত শত মহিলারা পাট থেকে আঁশ ছাড়াচ্ছেন। দিনশেষে মজুরি হিসেবে পাটকাঠি নিচ্ছেন যা ভ্যানে করে বয়ে নিচ্ছেন তাদের বাড়িতে। এমনি একজন মহিলা মনোয়ারা খাতুন তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বাড়িতে জ্বালানি সংকট থাকার কারণে তিনি পাট বাছতে এসেছেন বিনিময়ে পাটকাঠি সংগ্রহ করছেন। অপর একজন মহিলা পান্না খাতুন, তিনি জানান পাটকাঠি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানাবিধ কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে তাই তিনি পাট থেকে আঁশ ছাড়ানোর বিনিময়ে পাটকাঠি সংগ্রহ করতে এসেছেন।
বরইচারা গ্রামের সুদীপ বিশ্বাস বলেন, আমি ৫ জায়গা পাট জাগ দিয়েছি সব জায়গায় পাটের আঁশ ছাড়াতে অসংখ্য মহিলারা কাজ করছেন যাদেরকে কাজের বিনিময়ে দেওয়া হচ্ছে পাটকাঠি। এতে করে পাটে চাষে বিনিয়োগকৃত অর্থ অনেকটাই উঠে আসছে বলেও জানান তিনি। পাটের আঁশ ছাড়াতে অর্থের বিপরীতে পাটকাঠি দিচ্ছেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে পুকুরিয়া গ্রামের তোবারেক মোল্যা বলেন, পাট চাষের ব্যয় লাঘব করতে পাটের আঁশ এড়াতে আসা কৃষানদের অর্থ না দিয়ে পাটকাঠি দেওয়া হচ্ছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, যেখানেই পাট জাগ দেওয়া হয়েছে সেখানেই ভিড় জমাচ্ছেন বিভিন্ন এলাকার গৃহিনীরা। চেয়ে নিচ্ছেন পাট, ছাড়িয়ে দিচ্ছেন আঁশ বিনিময়ে নিচ্ছেন পাটকাঠি। দেখে মনে হচ্ছে, পাটকাঠি পাটচাষিদের কাছে বোঝা হলেও তাদের কাছে(গৃহিণী) অতিব দামি। এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পঁচাডোবা পুকুরে, খাল-বিলেই পাট জাগ দিয়ে পাটের রং খারাপ হওয়ার পাশাপাশি পাটকাঠিরও মান খারাপ হয়েছে।
এদিকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চল থেকে পাটকাঠি ব্যাবসায়িরা পাটচাষিদের কাছ থেকে স্বল্প মূল্যে পাটকাঠি ক্রয় করে ভ্যান যোগে পাশ্ববর্তী শহরে নিয়ে বিক্রয় করছেন চড়া দামে। প্রতিদিনই বেশ কিছু টাকা আয় করছেন তারা। এমনই একজন পাটকাঠি ব্যবসায়ী রফিক মোল্যা, তিনি বলেন এখন পাটকাঠি বিক্রয়ের মৌসুম তাই আমরা পাট চাষীদের কাছ থেকে ৮/১০ টাকা মুঠোপ্রতি ক্রয় করে শহরে গিয়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি করছি। এতে করে ভ্যান প্রতি আমাদের ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা আয় হয়। শালিখা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে এবছর ৩৯ শত ৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে যা গত বছরের তুলনাই ১৫ হেক্টর বেশি। পাশাপাশি হেক্টর প্রতি ১৫ বেল পাট উৎপাদন হয়েছে।
শালিখায় পাটকাঠির ভূত ও ভবিষ্যৎ কি এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রী ইন্দ্রনীল গবেষণা এসোসিয়েটস এর প্রধান সংগঠক শিক্ষক ও গবেষক ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, পাট এমন একটি কৃষিপণ্য যার কোনো অংশই অব্যবহার্য থাকেনা, তাই পাটচাষ বৃদ্ধি পেলে পাটকাঠি অবশ্যই কৃষকদের বিনিয়োগকৃত অর্থ উপার্জন পূর্বক অতিরিক্ত অর্থ আয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎস হতে পারে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলমগীর হোসেন বলেন, পাট চাষীদের জন্য একটি অর্থকরি ফসল তাই পাটের আঁশের সাথে পাটকাঠিও কৃষকদের আর্থিক সমর্থন দিতে পারে এছাড়াও পাটকাঠি আর্থিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কৃষকদের নানাবিধ কাজে লাগে তাই পাট জাগ দেওয়ার ব্যাপারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাটের রং ও পাটকাঠির মানের বিষয়ে নজর রাখা প্রয়োজন।