মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ডাক্তার জয়ন্ত কুন্ডুর অন্যায় রাজত্ব আর কতদিন চলবে

মাগুরা প্রতিনিধি, খন্দকার নজরুল ইসলাম মিলন : অবিশ্বাস্য হলেও সত্য একজন মেডিকেল অফিসার দীর্ঘ ২৪ বছর যাবৎ একই হাসপাতালে চাকুরী করছেন। শিশু রোগ কনসালটেন্ট না হয়েও দখল করেছেন শিশু বিভাগের প্রধান পদটি। এখানেই শেষ নয়,তিনি কেবল মাত্র রাজনৈতিক ক্ষমতা ও তদবীর বলে বিএমএ মাগুরা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের পদটিও হাসিল  করে রেখেছেন। তিনি এতটাই প্রভাবশালী যে ,সিভিল সার্জন বা হাসপাতাল সুপারের ধার ধারেন না। নিজের ইচ্ছা খুশি মত হাসপাতালে আসেন ও যান। সব ডাক্তারদের অফিস টাইম থাকলেও তার কোন অফিস টাইম নেই। তিনি ইচ্ছে হলেই ভারতের কোলকাতায় থাকা স্ত্রী-কন্যার কাছে ছুঁটে যান।
এ ক্ষেত্রে ছুঁটি বা উর্ধতন কর্মকর্তাদের অনুমতির ধার ধারেন না। এ যেন মগের মুল্লুক কান্ড! সরকারের অনুমোদন বা ছুঁটি ছাড়াই বছরে অন্তত: ১০/১৫ বার তিনি কোলকাতায় আসা যাওয়া করেন। শোনা যায় তার নাকি দুটি পাসপোর্ট রয়েছে। অনেক সময় বিনা পাসপোর্টেও তিনি ভারতে আসা যাওয়া করেন। হুন্ডি মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করে তিনি ভারতের কোলকাতায় বাড়ী তৈরী করছেন বলেও শোনা যাচ্ছে।
সৌভাগ্যবান এই ডাক্তারের নাম ডা: জয়ন্ত কুমার কুন্ডু। তিনি মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ ও হাপাতালে দীর্ঘ ২৪ বছর মেডিকেল অফিসার পদে কর্মরত আছেন। বিএমএ মাগুরা জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অভিজ্ঞ একজন শিশু কনসালটেন্টকে সরিয়ে দখল করেছেন শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান বা কনসালটেন্ট এর পদ। তিনি এখন গোটা হাসপাতালটিকেই তার বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করেছেন। তার কথার অবাধ্য হলেই তাকে বদলীর হুমকি দেন। হাসপাতালে কর্মরত জুনিয়র ডাক্তার ,নার্স ,ওয়ার্ডবয় , ক্লিনার ও আয়াদের সাথে সব সময় প্রভুর মত আচরণ করেন। সবাইকে তিনি গোলাম বানিয়ে রেখেছেন।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মাগুরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের একাধিক ডাক্তার,নার্স,কর্মকর্তা ও কর্মচারির সাথে কথা বলে জানাগেছে, ডা: জয়ন্ত কুমার কুন্ডুই এখন এই হাসপাতালের সর্বেসর্বা। তার হুকুমেই চলে সব কিছু। দীর্ঘ ২৪ বছর একই কর্মস্থলে থাকায় তিনি এই হাসপাতালটিকে নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করেন। হাসপাতালের শিশু বিভাগে ভর্তি থাকা ও চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগীর অভিভাবকের সাথে কথা বললে তারা অভিযোগ করেন যে, শিশু বিভাগের ডাক্তার ডা: জয়ন্ত কুমার কুন্ডু তাদের সাথে খুবই খারাপ আচরণ করেন। হাসপাতালে কোন শিশু রোগী ভর্তি হতে হলে আগে তার প্রাইভেট চেম্বারে দেখাতে হবে বলে অলিখিত আইন জারি করেছেন। কোন শিশু রোগীকে তার প্রাইভেট চেম্বারে না দেখালে সেই রোগীকে তিনি হাসপাতালে ভর্তি না করে ফরিদপুর ও ঢাকায় রিফার্ট করে দেন। আর ডিউটির সময়ে তাকে বেশিরভাগ সময়ই হাসপাতালে পাওয়া যায়না। প্রায় সময়ই তিনি নিজের অফিস কক্ষে না থেকে সিভিল সার্জন অফিস অথবা নিজের প্রাইভেট চেম্বারে ব্যস্ত থাকেন।
ডাক্তার জয়ন্ত কুমার কুন্ডু ঢাকার মিরপুর বাংলা কলেজের পাশে ২ টি প্ল্যাট কিনে ভাড়া দিয়েছেন বলেও মোনা যায়। এছাড়া মাগুরা শহরেও তিনি বাড়ী নির্মাণ করেছেন। ভারতের কোলকাতায় তার স্ত্রী ও কন্যা স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। সেখানেও তিনি বাড়ী নির্মাণ করছেন এমন কথা শোনা যাচ্ছে।
ডাক্তার জয়ন্ত কুমার কুন্ডুর বিরুদ্ধে সব থেকে গুরুতর অভিযোগ হলো: তিনি প্রকল্পের ডাক্তার হয়েও একাধারে ২৪ বছর একই কর্মস্থলে রয়েছেন। শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ বা কনসালটেন্ট না হয়েও হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান পদটি দখল করেছেন। ডিউটি ফাঁকি দিয়ে অফিস টাইমেও ব্যক্তিগত প্রাকটিস করেন। অবৈধ পথে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন। সরকারি অনুমোদন বা ছুঁটি ছাড়াই তিনি ঘনঘন ভারতের কোলকাতায় তার স্ত্রী ও সন্তানের কাছে আসা যাওয়া করেন। ভারত ও বাংলাদেশের দুটি পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছেন যা প্রায় সময়ই তিনি বহন করেন। বিএমএ মাগুরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকের ক্ষমতার অপব্যবহার করে গোটা স্বাস্থ্য বিভাগে দাদাগিরি করেন। হাসপাতালের ওষুধ গায়েব থেকে শুরু করে সার্টিফিকেট বেচাকেনায় মুখ্য ভুমিকা পালন করেন। তার ক্ষমতাবাজীর ভয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা সব সময় তটস্থ থাকেন। তিনি মাগুরা জেলা শহরের বেশ কিছু গুন্ডা ও মাস্তান লালন করেন। যারা সব সময় তার হয়ে কথা বলে এবং সুরক্ষা দেয়। রাতের আঁধারে তিনি প্রায় একদল অচেনা লোক নিয়ে গোপন সভা করেন। ওই সব লোকেরা এ দেশের নাগরিক নয় বলে অনেকে মনে করেন।
এ সব বিষয়ে কথা বললে ডাক্তার জয়ন্ত কুমার কুন্ডু বলেন, এ সবই ভিত্তিহীন অভিযোগ। আমি সম্পূর্ণ স্বচ্ছভাবে চাকুরী করি। আমার কোন অবৈধ সম্পদ নেই। ভারতের কোলকাতায় তার স্ত্রী কন্যা থাকেন বলে তিনি স্বীকার করেন।
মাগুরাবাসীর দাবী এ রিপোর্ট সংগ্রহকালে মাগুরা জেলার সর্বস্তরের মানুষের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা সকলেই প্রায় একই সুরে বলেন, মাগুরা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ ও হাপাতালে চিকিৎসা বলে কিছু নেই। আছে কেবল জনভোগান্তি আর অনিয়ম-দুর্নীতি। আর ডাক্তার জয়ন্ত কুমার কুন্ডুতো সবার মাথা। তার ইশারা ছাড়া হাসপাতালের একটি কাগজও নড়ে না। তিনি শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বা কনসালটেন্ট না হয়েও শিশু বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন কিভাবে? কেন তার বদলী হয়না ? ২৪ বছর কি কোন কর্মকর্তা একই কর্মস্থলে থাকতে পারেন ? তিনি কিভাবে ঘনঘন ভারতে আসা যাওয়া করেন? কত সম্পদের মালিক তিনি ? চাকুরীর আঁড়ালে আর কি অবৈধ কারবার করেন তিনি তা খতিয়ে দেখবে কে? এ বিষয়ে তারা রাষ্ট্রীয় গোযেন্দা সংস্থা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনের পদক্ষেপ কামনা করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.