রুমায় সড়ক দুর্ঘটনার কারণ *চালক অতিদ্রুত গাড়ি চালাচ্ছিল*

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবানঃ ঢালুতে নামানি রাস্তা। পিছন থেকে ট্রাকটি খুব দ্রুত আসছিল। ট্রাকে থাকা অন্যরা বলে আমাদের পিছনে ট্রাক দোলে ঢেয়ে আসছে। সহযাত্রীদের কথা শুনে পিছনে দিকে দেখি, ওই ট্রাকটি উড়ে যাওয়ার মতো আমাদের দিকে নামছিল। তখন আমি ট্রাকে ডান দিকে দাড়িয়ে ডালা ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। চোখের এক পলকে কি হয়ে গেল, কিছুই বুঝতে পারিনি। রাতে হাসপাতালে জানতে পারি, আমার নিকটীয়সহ ছয়জন আর নেই। এই কথা বলেছিলেন লালখোঙাই বম (৪০) তিনি বৃহস্পতিবার (২৩মার্চ) দুপুরে আহত ব্যক্তি হিসেবে রুমা জোন থেকে আর্থিক সহায়তা নিতে আসছিলেন। তখন রুমা জোনের মাল্টিমিডিয়া সেন্টারে বসে খোলামেলা আলাপ চারিতায় এসব কথা বলেছেন লালখো ঙাই বম।

তিনি বলেন নিজ পাড়া থেকে সবাই পায়ে হেঁটে আসছিলাম। প্রায় আড়াই ঘন্টা পর বগালেকে পৌঁছান। বগালেকে পৌছে আর্মি ক্যাম্পের দুইটি ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। একটি ট্রাকে আমরা সবাই ওঠে গেলাম- প্রায় ২০ জন হবে। বেশির ভাগ যাত্রীই নারী। আরকটি আমাদের না পেয়ে খালি ট্রাকটি আমাদের আগেই চলে যায়।

প্রথমে আমাদের গাড়ি পিছনে ছিল এবং আসতে করে যাচ্ছিল। বগালেক ক্যাম্প থেকে এক বাক যাওয়ার পর আমাদের গাড়িকে সাইট দিয়ে দেয়। আমাদের গাড়ি যাত্রী নিয়ে আস্তে আস্তে নামতেছি।

লালখো ঙাই বম বলেন পাহাড়ে ঢালু রাস্তায় অর্ধেকের কাছাকাছি পৌঁছাতেই পিছনের গাড়ি ঢাকায় এই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
তিনি বলেন জ্ঞান ফিরে দেখি আমাকে ধরে গাড়িতে তুলতেছে সহযাত্রীরা। তখন তেমন কথা বলতে পারিনি। বুক আর মাথাসহ পুরো শরীর ব্যথা অনুভব করছিল। দম মাঝে মাঝে বন্ধ হবার অবস্থা ছিল। ঈশ্বর আশীর্বাদ মরিনি আমি।

প্রসঙ্গত; গত ২০মার্চ রুমা- বগালেকে পাহাড়ি ঢালু রাস্তায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় মা-মেয়েসহ পাঁচজন নারী ও এক শ্রমিকসহ ছয়জনের প্রাণ হারায়।

এঘটনায় আহত হন ১৪জন। তার মধ্যে গুরুত্বর আহত আশংকাজনক অবস্থায় চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও পাঁচজনকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে বান্দরবান সদর হাসপাতালে থাকা ওই পাঁচজনকেও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়। বর্তমানে আহত ওই নয়জন চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।

এদিকে বান্দরবান রিজিয়নের আর্থিক সহায়তায় রুমা জোনের টহল দল রুমার রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের
দূর্গম থাইক্ষ্যং পাড়াবাসিন্দা নিহত মা-মেয়ে সহ পাঁচ জনের পরিবার সদস্যদের মাঝে নগদ ২০হাজার করে আর্থিক অনুদান প্রদান করেন।

আহতদের ২৩মার্চ দুপুরে রুমা জোনে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত পরিবারকে ১০ হাজার করে এবং নিহত শ্রমিক পরিবারের স্বজনেনর হাতে ২০ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। নিহত আহত স্বজনদের হাতে নগদ অর্থ তুলে দেন রুমা জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল শাহরিয়ার ইকবাল। এসময় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান থাংখাম লিয়ান বম, রুমা প্রেস ক্লাবের সভাপতি শৈহ্লাচিং মারমা ও পাইন্দু ইউনিয়নের দাব্রুক্ষ্যং মৌজা হেডম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি লাললিয়ানসম ওরফে পালিয়ান বম।

অন্যদিকে এ প্রতিবেদক বুধবার দুপুরে সড়ক দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে দেখতে পান, পর্যটন স্পট বগালেক থেকে আনুমানিক দেড় কিলোমিটার দুরে পাহাড়ি ঢালু রাস্তার ধারে সম্প্রসারকৃ মাটি স্থানে দুইটি ট্রাক দেখতে পাওয়া যায়। একটি আরেকটি দুরত্ব প্রায় ৩০ফুট। দুইটি ট্রাকে কোনোটিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত নাম্বার নাই। তবে একটি ট্রাকে ছোট্ট একটি প্লেটে লেখা আছে- লট-৬২, সেই এই গাড়ি যে ট্রাকে সজোরে ধাক্কায় মা- মেয়ে পাঁচ নারী ও শ্রমিকসহ ছয়জন নিহত ও ১৪ জন আহত হন।

সড়ক দুর্ঘটনার সাথে সাথে দুই চালক গা ঢাকা দিয়েছে।
রুমা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ঘটনার পর চালক দুইজন পালিয়ে গেছে। ট্রাকের প্রকৃত মালিক কে জানা যাচ্ছে না এখনো। তবে চালকের ঠিকানা চন্দনাইশ বলে জানা গেছে।

রুমা- বগালেকের সড়ক দুর্ঘটনা নিহত শ্রমিকের নাম হ্লাগ্যপ্রু খিয়াং। তাঁর নিকট এক আত্মীয় অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য মংশৈপ্রু বলেন ওই ঘাতক ট্রাক চালক ও কোম্পানির নাম খুঁজে পেয়েছেন।

তাঁর দেয়া তথ্যমতে, যে ট্র্যাক আরেক ট্রাকে ধাক্কা দিয়েছিল, সেই চালকের নাম আব্দুর কাকিম। লট নং ৬৪। বিআরটিএ’ এর কোনো অনুমোদিত নাম্বার নেই। ট্যাক মালিকের নাম মো. মাহম্মদ আলী কোম্পানি।

সড়ক দুর্ঘটনাস্থল থেকে দেড় কিলোমিটার দুরে অবস্থিত বগালেক পাড়ার অবস্থান। এপাড়া প্রধান রিয়ালমুন থন বম।
তার ভাষ্যমতে, ট্রাক চালক হাকিম বেশি তাড়াতাড়ি গাড়ি চালায়। তার জন্য এ সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষগুলো মারা গেছে। এটা শাস্তি পাওয়া উচিত মনে করেন তিনি।

এদিকে লালখো ঙাই আরো বলেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে স্থানীয় মেম্বারের মাধ্যমে ভিজিডি’র জমাকৃত৷ সঞ্চয় টাকা ফেরত নিতে রুমা সদরে যেতে বলা হয়েছিল। তাই দল বেধে ভিজিডি উপকারভোগী নারী ২০মার্চ রুমা সদরে যাচ্ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.