সীতাকুণ্ডের কৃষকদের মধ্যে সচেতনা,বিষমুক্ত শাঁক সবজি উৎপাদনে ঝুঁকছেন

রাফি চৌধুরী, সীতাকুণ্ড প্রতিনিধিঃ সীতাকুণ্ডের কৃষকদের মধ্যে সচেতনা দেখা দিয়েছে,বিষমুক্ত শাঁক-সবজি চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। খরচ ও রোগবালাই কম হওয়ায় কৃষকরা সবজি চাষে বেশি ফলন পাচ্ছেন।

বাজারে বিষমুক্ত সবজির ব্যাপক চাহি দা থাকায় ভালো দামে বিক্রি করতে পারছেন। তা ছাড়া দিন দিন সবজি চাষে চাহিদা বাড়ছে স্হানীয় বাজারে ওপাইকারদের মধ্যে। সীতাকুণ্ডে বিভিন্ন প্রত্যান্ত গ্রাম গুলোতে ঘুরে জানা যায়, কৃষিতে আধুনিকায়নের প্রতিফলন ঘটাতে বিষমুক্ত সবজি চাষ করছেন সীতাকুণ্ডের বাশঁবাড়িয়া,বাড়বকুণ্ড,মুরাদপুর,সৈয়দপুর,টেরিয়াইল, ধর্মপুর, বারৈয়াঢালা ও লালানগরের কৃষকরা। সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব, রাসায়নিক সার ও বালাইনাশক ছাড়া সবজি আবাদ করছেন তারা। প্রথম পর্যায়ে বেশ সফলতা পেয়েছেনও।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ হাবিবুল্লাহ জানায়, চলতি রবি মৌসুমে ৩ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন শীতকালীন সবজির চাষাবাদ করার লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ সবজি উৎপাদনে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। এ ছাড়া আইপিএম পদ্ধতির এ কার্যক্রমে পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ও টেরিয়াইল, ধর্মপুর, বারৈয়াঢালা ও লালানগর এলাকায় এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছে কৃষকরা। পরবর্তীতে বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত করা হবে। এই কার্যক্রমে সফল করার জন্য উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাবিবুল্লাহর নেতৃত্বে একটি টিম গঠন করা হয়। এ টিমে কাজ করছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শামসুল আলম, মো. শাহ আলম ও পিপাস কান্তি চৌধুরী। আইপিএম পদ্ধতিতে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদন করা যায়।

এতে করে বিষ ও কীটনাশকের ব্যবহারও কমেছে এবং নিরাপদ সবজি সংগ্রহ করতে পেরে খুশি ভোক্তারাও। বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে রোগ সহনশীল আধুনিক জাত ব্যবহারসহ আধুনিক পদ্ধতিতে যেমন মালচিং পদ্ধতি, নেট হাউজের মাধ্যমে সবজি চাষাবাদ করা হচ্ছে। রোগ ও পোকামাকড় দমনের জন্য বিভিন্ন যান্ত্রিক পদ্ধতি যেমন হলুদ, নীল ও সাদা আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে ফেরোমন ফাঁদও পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যবহার করা হচ্ছে জমিতে। আর এসব পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে পোকামাকড় দমন না হলে বিভিন্ন ধরনের জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে।

তারপরেও রোগবালাই দমন না হলে অনুমোদিত মাত্রায় কেমিক্যাল পেস্টিসাইড ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া কেমিক্যাল পেস্টিসাইড ব্যবহার করলে কৃষকদের পোস্ট হারভেস্ট ইন্টারভেল মেনে চলার জন্যও উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল ব্লকের কৃষক মুজিবুল হক বলেন, চলতি বছরে ২০ শতক জমিতে ফুলকপি চাষ করেছি। এতে আমার খরচ হয়েছিল প্রায় ১২ হাজার টাকা।

ইতিমধ্যে আমি বাজারে পাইকারিতে ফুলকপি বিক্রি করেছি ৪০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, আইপিএম পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদনে এবার পোকার আক্রমণ দেখা যায়নি। ফলে সবজি উৎপাদনে আগের চেয়ে অনেকগুণ বেশি লাভবান হয়েছি। উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ হাবিবুল্লাহ আরো জানান, বর্তমানে রবি মৌসুমে সীতাকুণ্ডে ৩ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন শীতকালীন সবজি চাষাবাদ হয়েছে।

তার মধ্যে শুধু বারৈয়াঢালা আইপিএম মডেল ইউনিয়নে ১০০ একর জমিতে নিরাপদ সবজি উৎপাদন প্রায় ১ হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে। তা ছাড়া পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের ৫০০ কৃষককে হাতেকলমে পদ্ধতিতে নিরাপদ সবজি উৎপাদন শেখানো হচ্ছে বলে জানান তিনি। এদিকে সীতাকুন্ডের এনজিও সংস্হা ইপসা বিষমুক্ত শাক- সবজি স্হানী ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিতে সীতাকুন্ড বাজারে সবজি সরবরাহ কেন্দ্র চালু করেছেন,বিষমুক্ত শাক- সবজি উৎপাদিত কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেন ইপসা।এতে স্হানীয় ভাবে ইপসা বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.