জানা যায়, গত বছরের ১ অক্টোবর (মঙ্গলবার) ভোর রাতে জাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় নৈশ প্রহরী আরমানকে হত্যা করা হয়। নিহত আরমান হোসেন স্থানীয় বাসিন্দা লোকমান হেকিমের ছেলে।
আরমান হত্যার ঘটনার দিন রাতেই তার মা শামসুন্নাহার ঝরনা বাদি হয়ে ৬ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওইদিনই আরমান হত্যার প্রধান আসামী মাসুদকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ আটকের কিছুদিন পরই আসামী মাসুদ ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দিনের সহযোগিতায় উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আসেন। বাদীর অভিযোগ মাসুদ গ্রাম পুলিশ হওয়ায় জামিনে আসার পর ওসি ওবায়দুর রহমানের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে মামলাটি ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মামলা তুলে নেয়ার জন্য বাদীকে নানা হুমকী দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গত ১২ ফেব্রæয়ারি বুধবার থানার ওসি ওবায়দুর রহমানের নির্দেশে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই নজরুল ইসলাম এলাকায় হঠাৎ রাতের বেলা অভিযান চালিয়ে আরিফ বিল্লাহ বাচ্চু, রিফাতুল ইসলাম শাহীন, বাবুল মিয়া ও রোমান মিয়া নামের চার জনকে থানায় নিয়ে আসে। জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাদের উপর চালানো হয় অমানষিক নির্যাতন। এক পর্যায়ে আটককৃতদের পরিবারের কাছে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। অন্যথায় আরমান হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। আটক কিশোর বাবুলের পিতা মোনায়েম মিয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র নেতা আরাফাতকে সঙ্গে নিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নজরুলের সাথে রফা করে ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। পরদিন রাতে আটককৃতদের থানা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী রিফাতুল ইসলাম শাহীন জানান, ওসি সাহেব কথা বলবেন বলে রাত ২টার দিকে তাকে বাড়ি থেকে ধরে এনে তাকে এবং রোমানকে হ্যান্ডকাপসহ ঝুলিয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এসময় তাদের আরমান হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়।
বাবুল মিয়া জানান, আগের দিন রাতে আটকের পরদিন মুক্তি দেওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে বেধড়ক লাঠিপেটা করা হয়। এক পর্যায়ে তার বাবার সাথে এসআই নজরুলের ৬০হাজার টাকার রফা হলে তাকেসহ আটক চারজনকে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তি দেওয়ার আগে সাদা কাগজে স্বাক্ষরসহ তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়নি কিংবা কোন প্রকার নির্যাতন করা হয়নি মর্মে কথ্য ভিডিও রের্কড করে রাখা হয়।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দীনের মুঠোফোনে বারবার কল করার পরও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নজরুল ইসলাম বলেন, মামলা তদন্তের স্বার্থে চার জনকে থানায় আনা হয়েছিলো। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জিডি মুলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। টাকা নেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ওবায়দুর রহমান বলেন, হত্যা মামলাটির তদন্তের জন্য চার জনকে আনা হয়েছিলো। পরে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জিডি মুলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নজরুল ইসলামকে সরিয়ে অন্য জনকে দেওয়া হয়েছে।