প্রধান উপদেষ্টা ও বৃটিশ হাই কমিশনের সহযোগিতা কামনা সিলেট চা শিল্পের বাজারে সিন্ডিকেটের দখলদারিত্ব দিন-দিন বাড়ছে

আবুল কাশেম রুমন সিলেট প্রতিনিধি : সিলেট জুড়ে চা বাগান গুলোতে সময় সময় নানা খাতে সংকট বেড়ে চলেচে। নিলাম ব্যবস্থার ফাঁদ, সিন্ডিকেটের দখলদারিত্ব,ভারতীয় সস্তা চায়ের আগ্রাসন, ঋণের অভাব ও সরকারের নীরবতায় সিলেটে একের পর এক চা বাগান বন্ধ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, প্রবাসী বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত সিলেটের বুরজান ও ফুলতলা চা বাগানের অচলাবস্থা নিরসনে প্রধান উপদেষ্টা ও বৃটিশ হাইকমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বিনিয়োগকারীরা।
চা শিল্পের সাথে কয়েকটি সূত্রের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চা নিলাম ব্যবস্থাটি এখনো ব্রিটিশ আমলের পুরনো কাঠামোর মধ্যে পরিচালিত হচ্ছে। উৎপাদন হয় এক জায়গায়, আর নিলাম হয় আরেক জায়গায়। এই ব্যবস্থায় চা শিল্পের জন্য এক ধরনের ফাঁদ তৈরি হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, বাজারে সিন্ডিকেটের দখলদারিত্ব দিন-দিন বাড়ছে, যা প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থাকে ব্যাহত করছে। তৃতীয়ত, ভারতীয় সস্তা চায়ের আগ্রাসন দেশীয় শিল্পকে চরম ভাবে চাপে ফেলেছে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এসব সমস্যার মুখে সরকারের নীরবতা। ফলে আগ্রাসন ও সংকট ক্রমশ গভীর  থেকে গভীর হচ্ছে।
নর্থ সিলেট ভ্যালি টি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট নোমান হায়দার চৌধুরী সম্প্রতি এক ভার্চুয়াল আলোচনায় জানান, চা শিল্পের প্রধান সমস্যা গুলো বর্তমানে অত্যন্ত জটিল আকার ধারণ করেছে। একের পর এক বাগান বন্ধ হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা অনেকটা উৎকণ্ঠায়।
প্রধান উপদেষ্টা ও বৃটিশ হাই কমিশনের সহযোগিতা কামনা : এদিকে, সিলেটের বুরজান ও ফুলতলা চা বাগানের অচলাবস্থা নিরসনে প্রধান উপদেষ্টা ও বৃটিশ হাই কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
এ দুটি চা বাগানের পরিচালক যুক্তরাজ্য প্রবাসী রেবেকা রফিক টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের নিকট লেখা এক চিঠির উল্লেখ করেন, তার বাবা চেয়ারম্যান মুহম্মদ রফিক ও ভাই এমডি জামিল রফিক ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত। বাবা ও ভাইকে দেখা শোনার জন্য তিনি এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সফর করতে পারছেন না। এমনকি টি বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের সাথে তারা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে পারছেন না। এ কারণে সংকট আরো বেড়ে চলেছে। পরিচালক রেবেকা রফিক টি বোর্ডের কাছে আবেদন করেছেন, ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতা পেলেই তারা শ্রমিকদের মজুরি মিটিয়ে দেবেন-এই জন্যে পরিচালনা বোর্ডকে পর্যাপ্ত সময় দেয়ার জন্যে ও তিনি আবেদন করেছেন।
ফুলতলা ও বুরজান চা বাগান দুটির মালিক মোহাম্মদ রফিক লন্ডন প্রবাসী। ৪০ বছর আগে তিনি বিদেশী মুদ্রা দিয়ে জেমস ফিনলের নিকট থেকে বুরজান,জাফলং ও ফুলতলা বাগান তিনটি ক্রয় কওে ছিলেন। গত ৪০ বছর ধরে তার নিজস্ব অর্থায়নে ফুলতলা ও বুরজানের উন্নয়ন তিনি করে যাচ্ছেন। মুহম্মদ রফিকের ছেলে পরিচালক জামিল রফিক ও মেয়ে পরিচালক রেবেকা রফিক ও বাগানের পরিচালনা বোর্ডে রয়েছেন।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশের চা শিল্পের সমস্যা নতুন সমস্যা নয়, ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে চা শিল্পের সমস্যা নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু বিগত সরকার এ ব্যাপারে নজর না দেয়ায় বর্তমানে সিলেটের অর্ধ শতাধিক বাগান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই চা শিল্পের সমস্যা সমাধানের কোন সুদূর প্রসারি উদ্যোগ না থাকায় চা শিল্প মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এর মধ্যে লন্ডন প্রবাসি মুহম্মদ রফিক বিনিয়োগকৃত বুরজান ও ফুলতলা চা বাগানের পরিস্থিতি খুবই  শোচনীয়। বুরজান এবং ফুলতলা চা বাগানের অচলাবস্থা নিরসনে টি বোর্ড এবং জেলা প্রশাসনের উদ্যোগের প্রশংসা করে তারা বলেন, এই সাময়িক ব্যবস্থা স্থায়ী কোন সমাধানের পথ নয়।
গত ৪ মে সিলেটের বুরজান, ছড়াগাঙ ও কালাগুলের চা শ্রমিকরা তাদের বকেয়া মজুরীর দাবিতে সিলেট এয়ারপোর্ট রোড অবরোধ করে। জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকরা ফিওে গেলে টি বোর্ড ও  জেলা প্রশাসন অচলাবস্থা নিরসনের জন্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। টি বোর্ড ও জেলা প্রশাসন ফুলতলা চা বাগানের অচলাবস্থা নিরসনের জন্যে তাদের প্রতিনিধি নিয়োগ করেছেন। প্রশংসনীয় এই প্রক্রিয়ার সাথে মালিক পক্ষের প্রতিনিধিকে জড়িত রাখলে ভালো হত বলে চা শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। টি বোর্ড ও জেলা প্রশাসন বিষয়টি নজরে আনবেন বলে তাদের প্রত্যাশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *