ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে ইউরোপীয় সংগঠনগুলোর চিঠি: ইউনূস-সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার আহ্বান

হাকিকুল ইসলাম খোকন, প্রতিনিধি আমেরিকাঃ গত ১০ই জুন ২০২৫: ইউরোপীয় বাংলাদেশ ফোরাম (ইবিএফ), সাউথ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরাম (বেলজিয়াম), ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশ (জার্মানি) এবং আর্থ সিভিলাইজেশন নেটওয়ার্ক (তুরস্ক) যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক না রাখার জন্য জরুরি আহ্বান জানিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, এই সরকার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পরিত্যাগ করেছে এবং ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত।

২০২৪ সালের আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে। এই সরকার চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছে এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জামায়াতে ইসলামীর মতো দলের নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়েছে। এছাড়া, সরকার-সমর্থিত ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) কর্তৃত্ববাদী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে বলে দাবি করা হয়েছে।

চিঠির সঙ্গে সংযুক্ত একটি বিস্তারিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১০ মাসে ৩,৫৯,৭৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ কর্মীও রয়েছেন। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৩৫৬টি হয়রানির ঘটনা, ১৪০টি মিথ্যা হত্যা মামলা এবং ১৬৭টি প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন বাতিলের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, ১,৫০০টিরও বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে, যা তালেবান ও আইএসআইএল-এর ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্য মুছে ফেলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের “জাতির পিতা” উপাধি বাতিল, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে তাঁর বাসভবন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ ধ্বংস, এবং বয়োজ্যেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধাদের কারাগারে বন্দী করার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২৫ সালের ১২ মে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি কেন্দ্রীয় শক্তি। এছাড়া, জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

মানবাধিকার কর্মী শাহরিয়ার কবির এবং ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের মতো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় কারাবাস ও হয়রানির ঘটনাও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দু, খ্রিস্টান, আহমদিয়া এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপর হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা চরমপন্থী ইসলামবাদী গোষ্ঠী এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ত্বরান্বিত হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ড. ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের যেকোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক এই সরকারের বৈধতা দেবে, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এই সরকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, এবং যুক্তরাজ্যের ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্স আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা পরিচালনা করছে।

সংগঠনগুলো যুক্তরাজ্যকে বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ড. ইউনূসের লন্ডন সফরের সময় (১০-১৩ জুন) চ্যাথাম হাউস এবং পার্লামেন্টের বাইরে বিক্ষোভের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

এই চিঠি এবং প্রতিবেদন বাংলাদেশের চলমান সংকট এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তিরা হলেন:
ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন, ইবিএফ কমিউনিকেশনস ডিরেক্টর, যুক্তরাজ্য (chris.blackburn25@btopenworld.com)
পাওলো কাসাকা, নির্বাহী পরিচালক, সাউথ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরাম, ব্রাসেলস (paulo@sadf.eu)
ক্লাউস স্ট্রেম্পেল, ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশ ইন লোয়ার স্যাক্সনি, জার্মানি (arbeitskreis-bangladesch@gmx.de)
তারিক গুনারসেল, কবি, নাট্যকার এবং আর্থ সিভিলাইজেশন নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা সমন্বয়ক, তুরস্ক (tgunersel@gmail.com)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *