ভারতে পাচার হওয়া ৩৬ জন শিশু কিশোর কিশোরী বেনাপোল চেকপোষ্ট দিয়ে বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যেমে দেশে ফিরেছে

মোঃ আনিছুর রহমান, বেনাপোল : ভালো কাজের প্রলোভনে দালালদের খপ্পরে পড়ে  ভারতে পাচার হওয়া এক নারী এবং ৩৫ জন  শিশু ও কিশোরী  কিশোর সহ ৩৬ জন ৬ মাস থেকে দেড় বছর জেল খেটে বেনাপোল চেকপোষ্ট দিয়ে দেশে ফিরেছে। এদেও মধ্যে ১৫ জন শিশু ও কিশোরী এবং ২০ জন শিশু ও কিশোর এবং ১ জন নারী। ভারতের পেট্রাপোল  ইমিগ্রেশন পুলিশ বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যেমে মঙ্গলবার বিকাল ৫ টার ( ২৭ মে) সময়   তাদের বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।তবে এসব শিশু কিশোরদের অনেকের পিতা মাতা এখনো ভারতের জেল খানায় আটক রয়েছে। এসময় শার্শা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) শওকাত মেহেদী সেতু উপস্থিত ছিলেন।

ফেরত আসারা হলেন:- যশোর জেলার চৌগাছা থানার শহিদুল ইসলামের মেয়ে আসমা খাতুন (১২) রাজশাহি জেলার গোদাগাড়ি থানার মাসুদ রানার ছেলে শহিদুল ইসলাম (১৫) নোয়াখালী জেলার হাতিয়া থানার বিকাশ চন্দ্রর মেয়ে বিউটি রানী (১৫) খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার তরুন সাহার মেয়ে রাখি সাহা (১০)  দিঘলিয়া থানার সেলিম রেজার মেয়ে রিমি খাতুন (১৫) মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার জাহাঙ্গীর হোসেন এর মেয়ে তহমিনা (১৭) বাগেরহাট জেলার মোরলগঞ্জ উপজেলার রহিম হাওলাদার এর ছেলে সাকিল হাওলাদার (৯) গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়া থানার সুধান গুপ্তর ছেলে সম্রাট গুপ্ত (১২) কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি থানার আশরাফুল আলম এর ছেলে আকাশ হক (১১) একই জেলার নাগেস্বরি উপজেলার রাসেল ইসলাম এর ছেলে শহিনুর আলম (১৩)  নাটোর জেলার লালপুর থানার হাশেম আলীর ছেলে আকাশ আলী (১২) দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলার নিশিকান্তর ছেলে দেবজিত রায় (১৬) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার জয়নাল এর ছেলে রাসেল বাবু (৯) ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানার ফিরোজ আলম এর ছেলে ইব্রাহীম (১৭) নড়াইল সদর উপজেলার সোয়েব শেখ এর ছেলে সফর সেখ (১৩) খুলনা জেলার পাইকগাছা থানার মীর হোসেনের ছেলে আব্দুর সবুর (৮) ও তার সহদর রহমত আলী (১৩) কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার সুরত আলী ছেলে  জিয়াউর রহমান (৮)  একই জেলার সফি উদ্দিন এর মেয়ে সাজেদা ইয়াসমিন (১৬)ঢাকা মিরপুর থানার আব্দুল মালেক এর ছেলে আব্দুল আলীম (১৩) নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর থানার অমর আলীর মেয়ে সালমা খাতুন (১৬) রংপুর জেলার তারাগঞ্জ থানার নজরুল ইসলাম এর মেয়ে নাজমা বেগম (৯) মাদারিপুর জেলার কোটালিপাড়া থানার ধ্রবমান বাড়ৈ এর ছেলে ধিমান বাড়ৈ (১১) নরসিংদী জেলার শিবপুর থানার আমজাদ হোসেন এর ছেলে শ্রাবন হোসেন (১০) যশোর সদর উপজেলার শিপন হোসেনের ছেলে সিফাত হোসেন (১৩) ঠাকুরগাঁও জেলার বালিধাগঞ্জ উপজেলার সুশেন চন্দর ছেলে আপন চন্দ্র (১২) দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার শ্যামল চন্দ্রর ছেলে রিদয় রায়(১৭) ঢাকা জেলার দারুস সালাম থানার নুর নবীর মেয়ে ফারিয়া খাতুন (১৬) লক্ষীপুর জেলার রায়পুর থানার মফিজুল ইসলাম এর মেয়ে জোহরা বেগম (১৪) চিটাগাং জেলার পটিয়া থানার ইয়াহিয়ার মেয়ে সুমাইয়া (৮) নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ থানার  মিহির কুমার দের ছেলে নিঝুম দে (১৬) মাদারিপুর থানার কালকিনি থানার রাজু মিয়ার মেয়ে মিলি আক্তার (৬) ঝালকাঠি সদর উপজেলার নয়ন রায় এর মেয়ে সাথি রায় (৮) পঞ্চগড় সদর উপজেলার জয়দেব রায় এর মেয়ে প্রিয়ন্তী রায় (১৫) ও ঝালকাঠি জেলার রুস্তম মিয়ার মেয়ে সুমাইয়া ইসলাম (২৫)  ।

এরা ভারতের সিএন সিপি গার্লস হোম, কোলকাতার লিলুয়া হোম আরকেভি হোম উত্তর ২৪ পরগান, সুভলয়া হোম বালিগঞ্জ, কিশালয় চিলড্রেন হোম,নবদিগন্ত হোম চব্বিশ পরগনা,নিউ ভারতী হোম কুচবিহার শেল্টার হোমে ছিলেন। একমাত্র সুমাইয়া ভারতের কর্নটকে আটক হয়ে একটি শেল্টার হোম থেকে দেড় বছর পর দেশে আসে ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যেমে।

পাচারের শিকার তাহমিনা বলেন, আমরা যারা আজ দেশে ফিরেছি আমাদের পিতা মাতারা এখনো অনেকে ভারতের জেল খানা সহ বিভিন্ন শেল্টার হোমে রয়েছে। আমরা দালালদের মাধ্যেমে বেনাপোল সহ বিভিন্ন সীমান্ত পথে অভিভাবকদের সাথে ভারতে গিয়ে আটক হই। এরপর আদালতের রায়ে আমরা জেল খানায় যাই। সেখানকার এনজিও সংস্থা আমাদের ছাড় করিয়ে বিভিন্ন শেল্টার হোমে রাখে। সেখানে ৬ মাস থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত থেকে আজ দেশে ফিরেছি।

বেনাপোল ইমিগ্রেশন এর উপ-পরিদর্শক সাহাদত হোসাইন বলেন, এরা বিভিন্ন সীমান্ত পথে পাচার হয়ে ভারতে যায়। এরপর সে দেশে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে জেল খানায় যায় আদালতের মাধ্যেমে। তারপর সেখান থেকে সেদেশের বিভিন্ন এনজিও তাদের ছাড় করিয়ে বিভিন্ন শেল্টার হোমে রাখে।  এরপর দুই দেশের চিঠি চালাচালির মাধ্যেমে তারা ছাড়া পেয়ে আজ বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যেমে বেনাপোল দিয়ে দেশে ফিরে আসে। আমরা ইমিগ্রেশন এর আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করব।

বেনাপোল পোর্ট থানা ওসি বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তাদের থানার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বেসরকারী এনজিও সংস্থা রাইটস যশোর, জাস্টিস এন্ড কেয়ার, যশোর মহিলা আইনজীবি সমিতি ও পাচারের শিকার মানব উদ্ধার ও শিশু সুরক্ষা সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

যশোর মহিলা আইনজীবি সমিতির এরিয়া কোয়াডিনেটর রেখা রানী বলেন, পাচার শিকার শিশু কিশোর ও কিশোরীদের আমরা সেদেশের সরকারের সাথে যোগাযোগ করে দেশে ফেরত এনেছি। এর মধ্যে আমরা ৭ জন, পাচারের শিকার মানব উদ্ধার ও শিশু সুরক্ষা সংস্থা ৬ জন যশোর রাইটস যশোর ১০ জন এবং জাস্টিস এন্ড কেয়ার ১৩ জনকে গ্রহন করেছি। আমরা যশোর নিজেদের শেল্টার হোমে রেখে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করব। এবং কেউ যদি আইনি সাহয্য নেয় তবে তাদের সহায়তা দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *