মোঃ মোকাররম হোসাইন, জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ কিছুদিন আগে বৃষ্টি হলেও ভরা বর্ষা মৌসুমে নেই বৃষ্টি । তিব্র রোদ ও তাপাদাহে মাঠের পর মাঠ গুলি এখন পানি শূন্য। শ্রাবণ মাসের ১৫ তারিখের পরে মোটামুটি ভাবে আমন ধান লাগানো শুরু করে। বৃষ্টির অপেক্ষায় তাকিয়ে থেকেও মিলছেনা বৃষ্টি। মাঠ পানি শুন্য হওয়ায় তৈরী জমি গুলোতে আগেভাগেই চারা রোপণ শুরু করেছে কৃষক। এদিকে বৃষ্টি না থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের আমন চাষিরা। পানি শুকিয়ে যাবার ফলে অনেকেই সেচ দিয়ে করছে হালচাষ। যার ফলে এ বছরও কৃষকদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
কবির কবিতা গুলি দিনদিন বদলে যাবার মতো। আষাঢ় শেষে শ্রাবণ এলো তবু নাহি বৃষ্টি হলো এরই মাঝে মনে পড়লো কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের আষাঢ় নামক কবিতা “নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে। ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে। বাদলের ধারা ঝরে ঝর ঝর আউশের ক্ষেত জলে ভরভর। কালি-মাখা মেঘে ওপারে আধাঁর ঘনিছে দেখ চাহি রে। শ্রাবণে যখন বৃষ্টির দেখা নাই তখন কৃষকের কপালে দেখাযায় চিন্তার ভাঁজ। ভরা বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টি না পাওয়াতে জয়পুরহাট কালাইয়ের কৃষকরা আমন ধান চাষ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। অনেকেই বৃষ্টির পানির জন্য অপেক্ষা না করে গভীর ও অ-গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচকার্য পরিচালনা করে জমিতে চারা রোপণ করছে। বর্ষা মাসেও যেন আকাশ থেকে আগুন ঝরছে। টানা তাপদাহে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে এখানকার জনজীবন। তীব্র গরমের দাপটে কৃষক মাঠে কাজ করতে গিয়ে হাফিয়ে উঠেছে। কৃষকরা বলছেন বৃষ্টি না হলে আমন ধান রোপণে খরচা দ্বিগুন বেড়ে যাবে। শুধু তাই নয় প্রখর এ তাপদাহে পেশা ও শ্রমজীবী মানুষের জনজীবন নাজেহাল হয়ে পড়েছে। সকালের রোদের আকৃতি দেখলেই মাঠে যেতে ভয় পায়। আর দুপুরের রোদে মনে হয় পিচ ঢালা রাস্তা দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে। চোখ-মুখে রোদের তাপে লাল হয়ে পুরে যাবার মত অবস্থা মাঠের কৃষকদের। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষগুলো এই রোদ আর গরমে ভোগান্তিতে পরেছে। তারপরেও জীবন চলার তাগিদে কষ্ট কে হাড় মানিয়ে মাঠে কাজ করতে হচ্ছে তাদের।
উপজেলার হাতিয়র গ্রামের কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আগের এ সময় এত খরা কোনদিন দেখিনি। সে সময়ে প্রচুর বৃষ্টি দেখেছি। জমিতে এক হাটু পানিতে থৈথৈ করত আর হালের পিছনে মাছ ধরা। বৃষ্টির প্রভাবে গায়ে-মাথায় কাগজ পড়ে জমিতে ধান লাগাইতাম। আর এখন প্রখর রোদে গা পুড়ে যাওয়ার মত অবস্থার মধ্যে দিয়ে জমিতে ধান লাগাচ্ছে ।
একই গ্রামের কৃষক আখতারুজামান বলেন, আগে বর্ষাকালে বৃষ্টির প্রভাবে বাড়িথেকে বেরোনো যায়নি আর এখন রোদের প্রভাবে বাড়ি থেকে বের হতে পারিনা।
জামুড়া গ্রামের কৃষক বায়জিদ বলেন, আমরা অনেক আগেই বীজ বোপন করেছি। বীজে ধানের বয়স দিন দিন বেশি হচ্ছে। বৃষ্টির জন্য অনেকদিন অপেক্ষা করে বৃষ্টি না হওয়াতে পরিশেষে গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ দিয়ে জমি রোপণ করছি।
তালখুর গ্রামের কৃষক মিলন বলেন, এখন আমন ধান রোপণের উত্তম সময়। ধানের চারার বয়স বেশি হচ্ছে। সময়মত চারা রোপণ করতে না পারলে ভাল ফলন আশা করা যায় না। তাছাড়া অনেকেই বৃষ্টির অপেক্ষা না করে সেচ দিয়ে জমিতে ধান লাগাচ্ছেন।
চেচুড়িয়া গ্রামের কৃষক মিলন বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় জমি তৈরি ও ধানের চারা লাগাতে পারছিলাম না। বাধ্য হয়ে ঘাস মারা ঔষধ দেওয়া পর্যন্ত প্রতি শতাংশ ১০ টাকা হারে খরচ করে পানি দিয়ে চারা রোপণ করেছি ।
বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শ্রমিকরা জানান, এই প্রখর রোদে কার সাধ্য আছে মাঠে কাজ করে। দুপুরের মধ্যে জমির পানি আগুনের মত হয়। আমাদের শ্রম দিয়ে পরিবার চালাতে হয়। এ দেশে কাজ করার জন্যই এসেছি তাই কষ্ট করে হলেও পরিবারের ভোরন-পোষন এর জন্য রোদে পুড়ে কাজ করতে হচ্ছে।
কালাই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, উপজেলায় এক ফসলি জমি রয়েছে ২১৮ হেক্টর, দুই ফসলি জমি রয়েছে ৪৭৭ হেক্টর, তিন ফসলি জমি ১১ হাজার ৬শ ৬২ হেক্টর, মোট ফসলি জমির পরিমান ১২ হাজার ৩শ’ ৫৭ হেক্টর। চলতি বছরে আমনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ হাজার ৯শ’ ১৭ হেক্টর। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আশা কৃষি বিভাগের।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অরুণ চন্দ্র রায় বলেন, চলতি আমন মৌসুমে এ উপজেলায় ১১ হাজার ৯শ’ ১৭ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন এ উপজেলার আমন চাষিরা। বৃষ্টিপাত হলে কৃষকদের আমনের চারা রোপন নিয়ে সমস্যা নিরসন হবে। বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকদের সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে আমনের চারা রোপণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।