সিরাজুল ইসলাম আপন, ক্রাইম রিপোর্টার (পাবনা): “শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড”। তাই কোন জাতিকে উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে হলে সেই জাতিকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। তাই বলা হয়ে থাকে ‘যদি কোন জাতিকে ধ্বংস করতে চাও, সর্বপ্রথম সে জাতির প্রাথমিক শিক্ষাকে ধ্বংস করে দাও। যদি কোন জাতিকে পিছিয়ে রাখতে চাও, সর্বপ্রথম সে জাতির প্রাথমিক শিক্ষকদের অবমূল্যায়ন করো। আর তাই আমাদের দেশের সরকারের কাছে এই প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়টিতে আলাদা গুরুত্ব থাকলেও পাবনার ভাঙ্গুড়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুইটি ভবনের একটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় একটি ভবনে চার শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে বিপাকে পরেছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০১৮ সালে বিদ্যালয়টির একটি ভবনের ৪ টি রুমের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে দেয়ালের ইট বের হয়ে যায়। এ অবস্থাতেই ২০২২ সাল পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে ভয়ে ক্লাস করেছে। ২ বছর যাবত ভবনটি পরিত্যাক্ত ঘোষনা করায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে বিপাকে পরেছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এমন করুণ দশা উপজেলার অষ্টমনিষা ইউনিয়নের অষ্টমনিষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
জানা গেছে, ১৯৩৭ সালে স্থানীয়দের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। পরে ১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয় এবং ১৯৯৩ চার টি রুম বিশিষ্ঠ একটি ভবন তৈরি হয়। পরে ২০০৩ সালে দোতলা বিশিষ্ঠ ৬ রুমের আরো একটি ভবন তৈরী হয়। স্থানীয় প্রায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়টিতে পড়াশোনা করছে।
রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রথম তৈরী ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। বেরিয়ে গেছে ভেতরের ইট। পিলারে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। এ ভবনের ৪টি শ্রেণিকক্ষই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভবনটি পরিত্যাক্ত ঘোষনা করেছেন উপজেলা প্রকৌশলি। ২০০৩ সালে দোতলা বিশিষ্ঠ ৬ রুমের একটি অফিস কক্ষ ও একটি স্টোর রুম করা হয়েছে। বাকী ৪ টি রুমে গাদাগাদি করে দুই শিফটে চার শতাধিক শিক্ষার্থীর ক্লাস নেয়া হচ্ছে।
বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস চলাকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হলে নুসরাত জাজান রিছি ও আল-আমিন জানায়, ভবনে ফাটল। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে। যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে তারা ভয়ে ভয়ে ২০২২ সাল পর্যন্ত ক্লাস করছে। পড়ে ভবনটি পরিত্যাক্ত ঘোষনা করায় আরেকটি ভবনে গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে। ফলে পাঠদানের সময় শিক্ষকদের আলোচনায় তারা মনোযোগ দিতে পারছে না। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বারবার তারা শিক্ষকদের অনুরোধ করেছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রায় চার শতাধিক। আগে দুইটি ভবন ছিল শিক্ষার্থীদের এক শিফটেই ক্লাস করানো যেত। একটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পরেও প্রায় পাঁচ বছর ওভাবেই ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস চালিয়েছি। কিন্তু এখন ঐ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পরিত্যাক্ত ঘোষনা করা হয়েছ। কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে আবেদন করেও কোনো ফল পাচ্ছি না। একাধিকবার সংশ্লিষ্ট বিভাগে অভিযোগ করেও কোনোও ব্যবস্থা না নেয়ায় গাদাগাদি করেই দুই শিফটে পরিচালিত হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম।
বিদ্যালয়টির সভাপতি মোছা: আছমা খাতুন বলেন, ক্লাস রুমের সংকটের কারণে শিক্ষকরা অনেক কষ্টে দুই শিফটে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছে। শিক্ষার্থীরাও অনেক কষ্টে গাদাগাদি করে ক্লাস করছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষর কাছে দ্বাবি করছি যেন দ্রুত বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের বরাদ্দ দেয়।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: আবুল কালাম জানান, বিদ্যালয়টির একটি ভবন পরিত্যাক্ত ঘোষনা করা হয়েছে। হয়তো চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসেই পরিত্যাক্ত ভবনটি নিলামে দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে শিগগিরই পাকা নতুন ভবনের বরাদ্দ দেয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মাদ নাহিদ হাসান খান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নয়। তবে খোঁজ নিচ্ছি। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে আমি দূরত্বই সরোজমিনে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা প্রহণ করব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশল মোছা: আফরোজা খাতুন বলেন, নতুন ভবনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষর কাছে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ আসলেই বিদ্যালয়টিতে নতুন ভবন তৈরি করে দেয়া হবে।