মোঃ মোকাররম হোসাইন, জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ জয়পুরহাটের কালাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে দেয়া বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য বরাদ্দকৃত অনেক ঘর মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া দিয়ে চলছে রমরমা বাণিজ্য। অনেকেই বরাদ্দকৃত ঘরে না থেকে নিজের বাড়িতে বসবাস করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কেউ কেউ ঘর ভাড়াও দিয়েছেন। প্রকৃত ভূমিহীন বাছাই করতে না পারা, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি এবং সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মত অনেকের।
তবে প্রশাসন বলছে, যেসব ঘরে তালা ঝুলছে এবং ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর বরাদ্দ বাতিল করে প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে এসব ঘর শনাক্ত ও নতুনভাবে বরাদ্দের কাজ শুরু হয়েছে। ইউএনওর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চার ধাপে এ উপজেলায় ১৭৮ পরিবারের মধ্যে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি পরিবার ২ শতাংশ জমির দলিল পেয়েছে।
এসব ঘর নির্মাণের পর সুবিধাভোগীদের বরাদ্দ দেয় কালাই উপজেলা প্রশাসন। সম্প্রতি উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের মেরেরপুকুর ও কাঁটাহার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ৬২টি ঘরের মধ্যে ৪২টিতে বসবাস করছেন সুবিধাভোগী ও তাদের আত্মীয়স্বজন। পাঁচটি ঘরে ভাড়াটিয়া আলু ও ধান রেখেছেন। ১৫টি ঘর তালাবদ্ধ রয়েছে। অনেকেই নিজস্ব বাড়িতে বসবাস করে বরাদ্দ পাওয়া ঘরে লাকড়ি রেখেছেন।
কাঁটাহার আবাসনে একটি ঘর বরাদ্দ পান শামীম হোসেন। সে ঘর ভাড়া নিয়ে আলু ও ধান রেখেছেন স্থানীয় বাসিন্দা মাসুম মিয়া। তিনি বলেন, শামীম ঘর ভাড়া দিয়ে নিজের বাড়িতে বসবাস করেন। মাসিক ভাড়ায় তিনি এ ঘর ব্যবহার করছেন।
আবাসনের বাসিন্দা আব্দুস সামাদ বলেন, ১৩ থেকে ১৪টি ঘরে একদিনও বসবাস করেননি বরাদ্দপ্রাপ্তরা। যাদের নামে ঘর বরাদ্দ হয়েছে, তাদের অনেকের নিজস্ব ঘরবাড়ি ও জমিজমা আছে। সে কারণে তারা এখানে থাকেন না।
মেরেরপুকুর আবাসনের একটি ঘর বরাদ্দ পান কেরামত আলী। কিন্তু অর্ধ কিলোমিটার দক্ষিণে মাত্রাই গ্রামে নিজস্ব জায়গায় তাঁর বড় একটি বাড়ি রয়েছে। তিনি সেখানে বসবাস করেন। কেরামত আলী বলেন, তাঁর নিজস্ব বাড়ি থাকলেও ছেলের থাকার ঘর নেই। সে জন্য সরকারি ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন। চেয়ারম্যানকে নাম দিতে বলেছিলেন। পরে বরাদ্দ আসে। ঘরে না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
একই আবাসনে আরেকটি ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন ফেরদৌস আলী। তাঁরও নিজস্ব জায়গায় বাড়ি আছে। তিনি সেখানেই বসবাস করেন। ঘর বরাদ্দ নিয়ে না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ নেই বলে থাকেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুটি আবাসনে ৬২টি ঘরের মধ্যে ১৫ থেকে ১৬টি ঘর তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। অন্য আবাসনেও সুবিধাভোগীরা বরাদ্দ পাওয়ার পর অনেক ঘরে বসবাস করছেন না। ভাড়া বা বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে মাত্রাই ইউপি চেয়ারম্যান আ ন ম শওকত হাবীব তালুকদার লজিক বলেন, অনেক ক্ষেত্রে ইউএনওরা সুবিধাভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা নেন না। এ কারণে প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন বাছাই করা যায়নি। তিনি বেশ কয়েকজনের নাম দিয়েছেন। কিন্তু সবাই পায়নি। যারা পেয়েছে, সবাই গৃহহীন।
উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও হাতিয়র বহুমুখী কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম বলেন, যারা ঘর বরাদ্দের তালিকা প্রস্তুতের কাজে জড়িত ছিলেন, তারা সঠিক ও প্রকৃত ভূমিহীন বাছাই করতে পারেনি। একদিকে স্বজনপ্রীতি ছিল, সঠিক পরিকল্পনাও ছিল না। ফলে ঘরগুলোতে তালা ঝুলছে। এসব ঘর প্রকৃত ভূমিহীনদের বরাদ্দ দিতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জান্নাত আরা তিথি বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ আসছে এবং কিছু সত্যতাও পাওয়া গেছে। বরাদ্দ বাতিল এবং নতুন করে বরাদ্দের কাজ চলছে।