মোঃ মোকাররম হোসাইন, জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
তিনি উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী নিয়োগে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন। তাছাড়া ওই নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী এবং এনটিআরসিএ কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অনলাইনে এমপিও ফাইল অগ্রায়ন করতে জন প্রতি ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেন এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি সেই টাকা গুলো সরাসরি এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল বিকাশ একাউন্টের মাধ্যমে নিয়ে থাকেন। সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এনটিআরসিএ কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের হয়রানি বন্ধে একটি পত্র জারি করা করে। তিনি সেই পত্রকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দেদারসে ঘুষ বাণিজ্য চালাচ্ছেন। ঘুষ লেনদেনের একাধিক
অডিও ফোনালাপ এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সত্যানুসন্ধানে জানা গেছে, পার্শ্ববতী বগুড়া জেলার দুপচঁচাচিয়া উপজেলা থেকে চলতি বছরের ৭ মে মো. শফিকুল ইসলাম এই উপজেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হিসাবে যোগদান করেন। নিয়োগ গুলোতে তিনি প্রতিষ্ঠান ভেদে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। পরবর্তী তাদের এবং এনটিআরসিএ
কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের থেকেও এমপিও আবেদন অনলাইনে পাঠাতে জন প্রতি ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন।এনটিআরসিএ’র সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারী শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ৪র্থ গণ বিজ্ঞপ্তির আওতায় এই উপজেলায় ৩১ জন শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন। এনটিআরসিএ থেকে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকদের হয়রানি বন্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর গত ০৯ অক্টোবর ওএম/৭৪/ম/১৪-৩১২৩ নং স্মারকে একটি পত্র জারি করে। সেই পত্রে বলা হয়েছে, উপজেলা পর্যায় হতে অনলাইনে এমপিও সংশ্লিষ্ট আবেদন অগ্রায়ণের ক্ষেত্রেও কোন ধরণের হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রযোজ্য বিধি বিধানের আলোকে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। সেই পত্রটিকেও উপেক্ষা করে তিনি রমরমা ঘুষ বাণিজ্য চালাচ্ছেন বলে শিক্ষকরা জানিয়েছেন।শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্কুলে কর্মচারী নিয়োগ বোর্ডে সদস্য হিসেবে থাকেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার। স্কুলের কর্মচারী নিয়োগে মো. শফিকুল ইসলামের ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন।এদিকে নিয়োগ বোর্ডে একদফা টাকা আদায়ের পর এমপিওর জন্য অনলাইনে ফাইল পাঠানোর সময় আরেক দফা টাকা নেন শফিকুল ইসলাম। এমনকি এনটিআরসিএথেকে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের বেতন ভাতার ফাইল পাঠাতেও তাকে ২ হাজার থেকে ঊর্ধ্বে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়।
এর আগে তার পূর্বের কর্মস্থল বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার থাকা কালীনও তিনি বিভিন্ন অবৈধ আর্থিক লেনদেন করেছেন বলে জনশ্রুতি আছে।উপজেলার আরকেএম দাখিল মাদ্রাসার সুপার গোলাম আযম বলেন, ‘সম্প্রতি আমার প্রতিষ্ঠানে একজন কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে। সেই নিয়োগে তিনি ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। পরে নিয়োগ প্রাপ্ত প্রার্থীর অনলাইনে এমপিও আবেদন ফাইল পাঠানোর জন্য ৫ হাজার টাকা দাবি করেন এবং সেই টাকা বিকাশে দিতে বলেন। পরবতর্ীতে প্রার্থীর তাকে ৩ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে দিয়েছে ।আক্কেলপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মোমিন বলেন, এনটিআরসিএ’র ৪র্থ গণ বিজ্ঞপ্তির সুপারিশে আমার প্রতিষ্ঠানে ৩ জন শিক্ষক যোগদান করে তারা অনলাইনে এমপিও আবেদন করেন। তিনি তার অফিসে আমাকে ডেকে নিয়ে তিনজনের ফাইল অনলাইনে পাঠাতে ৬ হাজার টাকা দাবি করেন। দিনটি বৃহস্পতিবার হওয়াই তিনি বিকাশের মাধ্যমে টাকা দিতে বলেন’। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম অভিযোগ গুলো স্বীকার করে বলেন,‘ অনলাইনে এমপিও ফাইল পাঠাতে অফিস চলাকালীন সময়ের বাইরেও অনেক পরিশ্রম করতে হয়। এটি এক প্রকার পারিশ্রমিক হিসেবে নেওয়া হয়। তবে কর্মচারী নিয়োগের বিষয়ে কোন টাকা নেওয়া হয়নি। আমরা নিয়োগের সময়ে প্রতিষ্ঠানে গেলে তারা আমাদের কিছু সম্মানী দেয় ’।
জয়পুরহাট জেলা শিক্ষা অফিসার শিশির কুমার উপাধ্যায় মুঠোফোনে বলেন,‘ এমপিও ফাইল পাঠানো তার কাজের মধ্যে পড়ে। তার এসকল বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।অডিও রেকর্ড গুলো কাউকে দিবেন না। প্রমান হিসাবে রাখবেন।