বদলগাছী মাত্র ৩০ গজ দুরত্বে পাশাপাশি দুটি গভীর নলকূপ দিয়ে একই জমিতে সেচকাজ, বড় ধরণের সংঘাতে প্রাণহানীর আশঙ্কা

মো. এমদাদুল হক দুলু, বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি ঃ  নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার কোলা ইউনিয়নে শ্যামাহার ফসলি মাঠের একটি গভীর নলকূপের মাত্র ৩০ গজ দূরত্বে আরেকটি গভীর নলকুপ সেচ কাজ শুরু করেছে। দুটি গভীর নলকূপ একই জমিতে সেচ কাজ করছে। এতে দ্বন্দ- সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বদলগাছির ইউএনও তৃপ্তি কণা মন্ডল দ্বন্দ- সংঘাত এড়াতে গত বছর স্থাপনকৃত ব্যক্তিগত গভীর নলকূপের সেচ কার্যক্রম বন্ধ রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে থানার ওসিকে চিঠি দিয়েছেন। তিনি ১৭ জানুয়ারি থানার ওসিকে এ চিঠিটি দেন। গত ৩ দিনেও পূর্বে স্থাপনকৃত ব্যক্তিগত গভীর নলকূপ সেচ কার্যক্রম বন্ধের ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।

জানতে চাইলে বদলগাছি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান শনিবার বিকেলে বলেন, একটি গভীর নলকূপের সেচ কার্যক্রম বন্ধের জন্য ইউএনও স্যার আমাকে চিঠি দিয়েছেন। ছুটিতে থাকায় এখনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। গভীর নলকূপের মালিক সুজাউল ইসলামের উপজেলা সেচ কমিটি দেওয়া লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮২ সালে শ্যামাহার মাঠে বিএডিসির একটি গভীর স্থাপন করা হয়েছে। কেশাইল গ্রামের হাসেম রেজা চৌধুরী ওরফে টগর গভীর নলকূপটি পরিচালনা করতেন। ১৯৯৪ সালে শ্যামাহার মাঠের একটি দিঘী দখল নিয়ে প্রতিপক্ষের গুলিতে হাসেম রেজা চৌধুরী মারা যান। এরপর হাসেম রেজা চৌধুরীর ভাই আবুল হাসনাত চৌধুরী নলকূপটি দেখভাল করছিলেন। ২০০৬ সালের কৃষকদের কথা চিন্তা না করে গোপনে নলকূপের হাউজিং বিক্রি করা হয়। পরে ক্রেতা হাউজিং নিয়ে চলে যান। তখন সেচ অভাবে মাঠের অনেক জমি অনাবাদি থাকত। বিত্তশালী কৃষকেরা ছোট-ছোট ডিজেলচালিত শ্যালোমেশিন দিয়ে তাঁদের জমি চাষাবাদ করতেন। ২০১৩ সালে কোলা গ্রামের বাসিন্দা সুজাউল ইসলাম শ্যামাহার মাঠের জমির মালিক ও কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করে ডিজেলচালিত একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করেন। এরপর থেকে প্রতি বছর নিয়মিত মাঠের ৬০ একর জমিতে সেচকাজ করছিলেন। হঠাৎ করেই কেশাইল গ্রামের আবুল হাসনাত চৌধুরী, কোলা ইউপির সাবেক মেম্বার ফারুক হোসেন ও দোলন হোসেন গত বছরে সুজাউলের গভীর নলকূপের মাত্র ৩০ গজ দূরত্বে আরও একটি ডিজেলচালিত গভীর নলকূপ স্থাপন করেন। শুরু হওয়া চলতি বোরো মৌসুমে নতুন গভীর নলকূপ থেকে সুজাউল ইসলামের স্ক্রীমের জমিতে সেচকাজ করছে। সুজাউল ইসলামও শুক্রবার থেকে সেচকাজ শুরু করেছেন। স্ক্রীমের নিয়ন্ত্রণ নিতে দুইপক্ষই লোকজন নিয়ে মাঠে যাচ্ছেন। অভিযোগের প্রক্ষিতে বদলগাছির ইউএনও তৃপ্তি কণা মন্ডল গত বছর স্থাপিত আবুল হাসনাত চৌধুরীর গভীর নলকূপের সেচ কার্যক্রম বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য থানার ওসিকে পত্র দিয়ে জানিয়েছেন।

শুক্রবার বিকেলে শ্যামাহার ফসলি মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, পাশাপাশি দুটি গভীর নলকূপ। একটি মালিকানা সুজাউল ইসলাম অন্যটি আবুল হাসনাতদের। দুটি গভীর নলকূপের দূরত্ব আনুমানিক মাত্র ৩০ গজ। দুটি গভীর নলকূপে একই জমিতে সেচকাজ করছিল। ফসলি মাঠের ১০-১২ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্ক্রীমের একক দখল নিতে দুটি গভীর নলকূপের মালিকদের মধ্য দ্বন্দ শুরু হয়েছে।

দুটি গভীর নলকূপের আশপাশে দিনে ও রাতে বহিরাগত লোকজন আসা-যাওয়া করছে। যে কোন সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রাণহানীর আশঙ্কা রয়েছে। তাঁরা বলেন, আমরা দীর্ঘ ৮-১০ বছর ধরে সুজাউল গভীর নলকূপের পানিতে মাঠের জমির সেচ কাজ করছি। সুজাউলের ছাড়া মাঠে অন্য কোন গভীর নলকূপ ছিল না। হঠাৎ করেই আবুল হাসনাত চৌধুরী, সাবেক মেম্বার ফারুক ও দোলন হোসেন যৌথভাবে আরেকটি গভীর নলকূপ চালু করে সেচকাজ করছেন। আবার সুজাউলের গভীর নলকূপের সেচকাজ করছে। দুটি গভীর নলকূপ একই জমিতে সেচ কাজ করছে। এতে আমরা বেকায়দায় পড়েছি। এ ব্যপারে স্থানীয় প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।

গভীর নলকূপের মালিক সুজাউল ইসলাম বলেন, আমি দীর্ঘ দশ বছর আগে শ্যামাহার ফসলি মাঠে গভীর নলকূপ স্থাপন করেছি। তখন আমার স্ক্রীমের এলাকায় অন্য কোন গভীর নলকূপ ছিল না। আমি প্রতি বছর নিয়মিত সেচকাজ করে আসছি। এবার হঠাৎ করেই কেশাইল গ্রামের প্রভাবশালী আবু হাসনাত চৌধুরী, কোলা ইউপির সাবেক মেম্বার ফারুক হোসেন ও দোলন হোসেন আমার গভীর নলকূপের খুবই কাছে নতুন করে আরেকটি গভীর নলকূপ বসিয়ে আমার স্ক্রীমের জমিতে জোর করে সেচকাজ করছে। এতে বাঁধা দেওয়ায় তাঁরা আমাকে ও আমার ড্রেনম্যানকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। প্রতিকার চেয়ে ইউএনওসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু অবৈধভাবে চালু করা গভীর নলকূপের সেচকাজ বন্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

আবুল হাসনাত চৌধুরী বলেন, আমি নতুন করে গভীর নলকূপ স্থাপন করিনি। অনেক আগে থেকেই শ্যমাহার মাঠে আমাদের গভীর নলকূপ ছিল। পাইপ নষ্টের কারণে গভীর নলকূপটি কয়েক বছর ধরে বন্ধ রাখা হয়েছিল। তখন মাঠে ৪-৫ টি অগভীর নলকূপ দিয়ে সেচকাজ চালু রাখা হয়েছিল। সুজাউল এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে গভীর নলকূপ স্থাপন করেছিল। সুজাউল কৃষকের কাছ থেকে সেচের টাকা বেশি নিচ্ছিল। আবার কৃষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছিলেন একারণে আমরা গত বছরে গভীর নলকূপটি ঠিকঠাক করেছি। এবার গভীর নলকূপে মাঠের ফসলি জমিতে সেচকাজ করছি।

বদলগাছি উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও ইউএনও তৃপ্তি কণা মন্ডল আজ রোববার সকালে বলেন, উপজেলা সেচ কমিটির অনুমতি ছাড়া অবৈধভাবে আবুল হাসনাত চৌধুরী নতুন করে গভীর নলকূপ স্থাপন করেছেন। সেচ নীতিমালায় যে দুরত্ব রয়েছে সেটিও মানা হয়নি। খবুই কাছাকাছি গভীর নলকূপ স্থাপন করেছেন। এতে কোন্দল সৃষ্টি হচ্ছে। গভীর নলকুপের সেচ কার্যক্রম বন্ধের জন্য থানায় ওসিকে অনুরোধ জানিয়ে গত বুধবার একটি পত্র দিয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.