বদলগাছীতে ফসলি জমিতে পকুর খনন ও এলজিডির রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত

প্রতিনিধি বদলগাছী(নওগাঁ):- নওগাঁর বদলগাছীতে যত্রতত্র ভাবে ফসলি জমিতে চলছে পুকুর কাটার হিরিক।সরকারি গেজেটে প্রকাশিত মাটির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও হ্রাসকরণ ২০১৩ সালের ৫৯ নং আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি ইট প্রস্তত করার উদ্দেশ্যে কৃষি জমি হতে মাটি কাটা বা সংগ্রহ করে ইটের কাচামাল হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে না।
তবে রহস্যজনক ভাবে প্রসাশন নিরব ভুমিকা পালন করছে। সচেতন মহলের অভিযোগ ভূমি অফিসে জানানোর পরও  মাটিকাটা বন্ধ হচ্ছে না।
জানাযায়,বদলগাছী উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ভাটা মালিক ও এক শ্রেনীর মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কৌসুলে বাধ্য করছে ফসলি জমিতে পুকুর কাটতেও ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রি করতে। মাটি বহনকারী অবৈধ টাক্টরের বেপরোয়া চলাকালে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীন রাস্তাঘাট। এ ব‍্যপারে ভূমি অফিসকে জানানোর পরও ব‍্যবস্থা নেওয়া হয়না বলে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার মিঠাপুর ইউনিয়নের পারোরা গ্রামের একটি মাঠে ড্রেজার (ভেকু) মিশিন দিয়ে ট্রাক্টর লাগিয়ে মাটি কাটার দূশ্য। আর এই মাটি বহনকারী ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলের কারণে ধুলোবালি উড়ে রাস্তা ঘাটে চলাচল করা পথচারিরা হুমকীর মূখে পড়ছে।
একই ভাবে মথরাপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামে ফসলি জমিতে ভিকু লাগিয়ে পুকুর খনন চলছে। পাহাড়পুর ইউপির বামনপাড়াতে পকুর সংস্কারের মাটিতে আঞ্চলিক সড়কের উপর মাটির স্তর পরেছে, বিলাসবাড়ী ইউপির তাজপুর ও নাজিরপুর পাকা রাস্তার উপর পুকুর খননের মাটি পরে নষ্ট হচ্ছে  রাস্তা। আর মিঠাপুর ইউপির কসবা গ্রামের পাকা ও কাচা রাস্তা যেন মাটি বহণকারী গাড়ীর মাটি পরে  মাটির স্তর পরে গেছে, তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। এছাড়াও   পুরাতন পুকুর সংস্কারের নামে মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। মাটি বহণকারী অবৈধ টাক্টরগুলোর বেপরোয়া চলাচলে বাড়ছে দূর্ঘটনা এবং নষ্ট হচ্ছে রাস্তা।
অন্যদিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত বা ইউনিয়ন বা গ্রামীন সড়ক ব্যবহার করিয়া কোন ব্যক্তি ভারি যানবাহন দ্বারা ইট বা ইটের কাচাঁমাল পরিবহন করিতে পারিবেন না। যদি কোন ব্যক্তি আইনের এই ধারা লঙ্ঘন করেন তা হইলে তিনি ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। এসব আইন থাকার পরও ভূমিদস্যুরা আইনের তোয়াক্কা না করে স্থানীয় প্রশাসন চোখের সামনে এসব কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করার পরও প্রশাসনের এই নিরব ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এলাকাবাসীর মনে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভূমি আইন উপেক্ষা করে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। অনেকে আবার বাগানের জমির মাটি কেটে সেখানে পুকুর খনন করছেন। এছাড়া আইনের তোয়াক্কা না করেই নদী সংলগ্ন পাড়ের মাটিও কেটে নিচ্ছেন কিছু অসাধু ব্যক্তি। ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে মাটি ব্যবসায়ীরা সপ্তাহের বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত আবার রাতের বেলায়  নির্বিঘ্নে খনন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, কোন এলাকায় এস্কেভেটর (ভেকুমেশিন) আবার কোন এলাকায় শ্রমিক লাগিয়ে মাটি কেটে ট্রাক্টরের সাহায্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মাটি। এসব মাটি খননে কোন অনুমোদন নেয়া হয়নি। জমির মালিককে অর্থের লোভ দেখিয়ে কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে টপসয়েল। দিনের বেলায় বন্ধ থাকলেও রাতের আঁধারে চুটিয়ে চলছে খনন কাজ। এতে করে দিন দিন কমছে ফসলি জমির পরিমাণ। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে শস্যভাণ্ডারের উপাধি হারাবে এ উপজেলা।
এলাকাবাসী বলেন, খাদাইল বাজারের পূর্ব পার্শ্বে সরকার ব্রিক্স সহ নতুন ৩টি ইটভাটা নির্মান করা হয়েছে। মিঠাপুর বাজারের পশ্চিম পাশের্ব রয়েছে এন.আর.বি ব্রিক্স। এছাড়া অন্যান্য ইটভাটার মাটি বহনকারী ট্রাক্টর বেপরোয়া ভাবে চলাচল করছে। একই রাস্তাদিয়ে শত শত ট্রাক্টর চলাচলের কারণে গ্রামীণপাকা সড়কগুলো ভেঙে পড়েছে এবং ধুলোবালিতে সড়কের উপর ধুলোর স্তর পড়েছে।
কসবা গ্রামের কৃষক আব্দুর লতিফ বলেন, আমার সামান্য জমি সেখানে আমি ফসল করি কিন্ত এ বছর আমার জমির দুপার্শে জমির মালিক মাটি বিক্রি করেছে , সে কারনে বাধ্য হয়ে আমাকেও মাটি ব‍্যবসায়ীর কাছে জমির মাটি বিক্রয় করতে হলো। সেখানের ফসলি জমির মাটি ভাটায়  নিয়ে যাচ্ছে।
রহিমপুর গ্রামের  চাদ মিয়া, সহ স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরা মিঠাপুর ভূমি অফিস সহ বিভিন্ন যায়গায় ম্যানেজ করে মাটির ব্যবসা করি।
বদলগাছী কৃষি অফিসার সাবাব ফারহান জানান,  কলকারখানা,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,বসতবাড়ী,রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন কারণে দেশে প্রতিবছর এমনিতেই ১% হারে ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। এছাড়া ফসলি জমির উপরিভাগের ৬ ইঞ্চি পরিমাণ মাটিতে জৈব পদার্থ থাকায় একে টপসয়েল বলা হয়ে থাকে। জমির এই অংশ কোনভাবেই কেটে নেয়া উচিত নয়। তিনি আরও বলেন, কৃষি জমির টপসয়েল কেটে নেয়া হলে ওই জমিতে আর কাক্সিক্ষত ফসল উৎপাদন হবে না। এতে ফসল উৎপাদনের পরিমাণ কমে যাবে। আমাদের কে এ ব‍্যপারে জানালেও আমাদের কিছুই করার না থাকায় আমরা বিষয়টি সহকারী ভূমি কমিশনার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানোর জন‍্য বলি।গ্রামীন সড়ক নষ্টের ব‍্যপারে উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মোখলেছূর রহমান বলেন, প্রতিনিয়ত মাটি বহণকারী টাক্টরের চলাচলের ফলে পাহাড়পুর,মথরাপুর ও মিঠাপুর বেশিরভাগ রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। এ ব‍্যপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ব‍্যবস্থা নিতে পারে।
এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী ম্যাজিষ্ট্রেট (ভূমি) মো. আতিয়া খাতুন বলেন, আমার কাছে লিখিত অভিযোগ না দিলে ব‍্যবস্থা নেওয়া হয় না। রাস্তা নষ্ট হওয়ার ব‍্যপারে বললে তিনি বলেন,এ ব‍্যপারে এলজিইডি ব‍্যবস্থা গ্রহন করতে পারে।এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী অফিসার আলপনা ইয়াসমিন  বলেন, যে গুলো রাস্তা নষ্ট হচ্ছে সেসব রাস্তার প্রসিকিউশন দিলে আমারা মোবাইল কোর্ট   করব।

Leave a Reply

Your email address will not be published.