কালাইয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে বিদ্যালয়, বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বিদ্যালয়ে শিক্ষাও অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ

মোঃ মোকাররম হোসাইন, জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি:
 জয়পুরহাটের কালাইয়ে ৫৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সবগুলো ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ ৪ বছর আগে উত্তীর্ণ হলেও কমিটি না করার অভিযোগ রয়েছে বিদ্যালয় কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
ফলে কোনো বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি না থাকায় দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা এবং কোথাও কোথাও কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছেন শিক্ষকরা। আবার কোথাও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সদস্যরা শিক্ষকদের সঙ্গে করছেন অসৌজন্যমূলক আচরণ । ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ।
সূত্র জানায়,উপজেলার ৫৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ ৪-৫ বছর আগেই শেষে হয়ে গেছে। ফলে সেসব বিদ্যালয়ে কমিটি গঠন নিয়ে প্রধান শিক্ষকদের স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই কমিটি গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না। সেজন্য বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে চলছে শিক্ষকদের সঙ্গে ম্যানেজিং কমিটির বিরোধ। বিঘ্ন ঘটছে পড়ালেখাসহ দৈনন্দিন কাজের। ৩ বছর মেয়াদী ম্যানেজিং কমিটির সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালের নভেম্বরে।
সরেজমিনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ১১ সদস্য বিশিষ্ট ম্যানেজিং কমিটি গঠনের কথা থাকলেও উপজেলা শিক্ষা অফিসের কোনো উদ্যোগ নেননি। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে বিদ্যালয়গুলোর ব্যবস্থাপনা পরিষদ। যার ফলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিজের ইচ্ছেমত সরকারী বরাদ্দের টাকা তুলে করছেন নয়ছয়। সরকারি কর্মকাণ্ড নিয়ে করেন টালবাহানা। যা বিধি বহির্ভূত কর্মকাণ্ড। তাদের মধ্যে অনেক বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি রয়েছেন অষ্টম শ্রেণি, এসএসসি বা এইচএসসি পাশ। কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হতে ন্যুনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগবে স্নাতক ডিগ্রি। শিক্ষানুরাগী ২ সদস্যের শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগবে এসএসসি পাস। কোনো বিদ্যালয়ে যুক্তিসঙ্গত কারণে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা না গেলে সর্বোচ্চ ৬ মাসের জন্য অ্যাডহক কমিটি গঠন করা যেতে পারে। ৬ মাসের মধ্যে নিয়মিত কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু এসব নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছেন না বিদ্যালয় কতৃপক্ষ।
স্থানীয় অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, ‘উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো এখনও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রধান শিক্ষকরা নিজ দায়িত্ব পালনে হয়ে পড়েছেন অনেকটাই উদাসীন। বিদ্যালয় চলাকালে নিজ খেয়াল-খুশিমত ব্যক্তিগত কাজে সময় ব্যয় করেন তারা। প্রায় প্রতিদিন কাজে-অকাজে উপজেলা শিক্ষা অফিসে ধরনা দেন বিভিন্ন তদবিরের আশায়। বিদ্যালয়গুলোতে সরকারিভাবে বিভিন্ন বরাদ্দের ওপর তারা করেন খবরদারি। এ জন্য হয়তো তারা নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি গঠন করতে চান না।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে কোনো ম্যানেজিং কমিটি নেই সেই তথ্য আমাদের কাছে আছে। প্রধান শিক্ষকদের ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনে তাগাদা দিলে তাদেরকে এমপির মনোনীত দুজন শিক্ষানুরাগী সদস্যের নাম না পাওয়ায় নিয়মিত কমিটি করতে পারছি না। তবে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত একটা কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হায়াত বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। যদি ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে থাকে তাহলে কমিটি গঠনে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.