মাগুরা মোহাম্মদপুরে আদালতের নিষেধাজ্ঞ অমান্য করে জমি জবরদখলের চেষ্টা

মাগুরা প্রতিনিধি, খন্দকার নজরুল ইসলাম মিলন : মাগুরা মহম্মদপুর উপজেলায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অন্যের জমি জোরপুর্বক দখল করে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে ছিরু মোল্লা ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ছিরু মোল্লা উপজেলার সিন্দাইন গ্রামের মৃত আমান মোল্লার ছেলে। ছিরু মোল্লা ও তার সমর্থকদের হামলায় গুরুতর আহতে হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায় মো. হিরু মিয়া।

জমির ভোগ দখলকারী সৈয়দ দাউদ আলী জানান, মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলার সিন্দাইন মৌজার ০১ নং প্লটের ১৪ শতক জমি তিনি এবং তার অপর তিন ভাই ক্রয় সূত্রে মালিক। কিন্তু ভাইদের সাথে এওয়াজ বদল সূত্রে বিগত ৩০ বছর যাবৎ উক্ত জমি তিনি ভোগ দখল করে আসছেন। ইতিমধ্যে তিনি উক্ত জমিতে একটা পুকুর খনন করেছেন। তার দাবি, গত ১৯/০৪/ ২০২৪ ইং তারিখ সকালে তার প্রতিবেশী ছিরু মোল্যা (৬০), হারুন মোল্লা(৫০), লুৎফর রহমান (৫০), ফুল মিয়া (৫৫), আবুল হোসেন (৪৮), রিহাবুর রশিদ হৃদয় (২৫), শাহরিয়ার হোসেন অপু (২০), মোঃ আশিকুর রহমান আশিক (১৯),ইমরুল হাসান সজীব (২০), রফিকুল ইসলাম(৪০)সহ ২০-২৫ জনের একটি দল উক্ত জমির উপর মাটি ফেলে রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা করেন। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি মোবাইল ফোনে স্থানীয় মোহাম্মদপুর থানায় অবহিত করেন এবং সহযোগিতা চাইলে মোহাম্মদপুর থানার উপ পরিদর্শক আব্দুল জব্বার ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেন এবং দুপক্ষকে ডেকে আইনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কোন কাজ না করা এবং সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ করার নির্দেশনা দেন। পরবর্তীতে ২১/৪/২০২৪ ইং তারিখে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উক্ত জমিতে সমস্ত কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন। আদালত উক্ত জমির উপর ১৪৪ ধারা জারি করে যা আগামী ৩০-৫-২০২৪ ইং তারিখ পর্যন্ত বলবত থাকবে বলে আদেশ দেয়। কিন্তু প্রতিপক্ষ ছিরু মোল্লা এবং তার লোকজন আদালতের আদেশ অমান্য করে বিভিন্ন সময় জোরপূর্বক জমির উপর মাটি ফেলে রাস্তা তৈরি করে দখল করার চেষ্টা করে।
একই এলাকার কলেজশিক্ষক সৈয়দ সাজেদুল ইসলাম দৈনিক সোনালী বার্তাকে জানান, ছিরু মিয়াসহ ২০-২৫ জন উক্ত জমির উপর বালি ফেলে রাস্তা নির্মাণ চেষ্টা করলে দাউদ আলী স্থানীয় থানায় ফোন করে পুলিশের সহযোগিতা চাইলে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে রাস্তা নির্মাণের কাজ স্থগিত করে দেন। কিন্তু ঘটনার একদিন পরেই পুনরায় তারা বালু ফেলে রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা করেন। এ সময় দাউদ মিয়ার লোকজন বাধা দিতে গেলে দু পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। পরে আনুমানিক বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১ টার দিকে সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদপুর থানা মোঃ বোরহানুল ইসলাম ঘঠনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং দুই পক্ষের সাথে কথা বলে আগামী ২৩/০৫/২৪ ইং তারিখে দুপক্ষকে মোহাম্মদপুর থানায় ডেকে চলমান বিবাদ মীমাংসা করার ব্যাপারে অফিসার ইন সার্চ মোহাম্মদপুর কে নির্দেশনা দেন সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান।
দীঘা ইউনিয়ন পরিষদের ০৬ নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ ওলিয়ার রহমানে নিকট মুঠো ফোনে ঘটনার বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান উক্ত জমির উপর ১৪৪ ধারা জারি করা রয়েছে সে বিষয়ে তিনি অবগত আছেন এবং ছিরু মোল্যা এবং তার লোকজনদেরকে বিষয়টা জানানো হয়েছে। কিন্তু তারপরেও তারা আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে উক্ত জমিতে রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা করেছে। এই বিষয়কে কেন্দ্র করেই দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
একই এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ রহমত আলীর জানান, ঘটনার দিন আনুমানিক বেলা ১ টার দিকে মসজিদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে ছিরু মোল্লার বাড়ির সামনে পৌছালে একই গ্রামের ছিরু মিয়া, আশিক, সজীব, আবু, আলতা সহ ১০-১২ জন ঢাল সর্কি, রামদা, চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল সহ অন্যান্য দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে তাকে গুরুতর আহত করেন এ সময় তিনি কোনরকম প্রাণ বাঁচিয়ে মসজিদের ভিতরে আশ্রয় নেন।
ছিরু মোল্লা ও তার বাহিনীর হামলায় আহত হিরু মিয়ার বড় ভাই লিয়াকত আলী জানান, রহমত আলীকে মারধর করার সময় তার ছেলে আবু জাফর এবং ভাই হিরু মিয়া বাধা দিতে গেলে সন্ত্রাসীরা তাদের উপর চড়াও হয় এবং তাদেরকে ধাওয়া করে। ভিকটিমদ্বয় পালানোর চেষ্টা করার একপর্যায়ে তাদেরকে ধরে পিটিয়ে এবং চাইনিজ কুড়াল, রামদাসহ বিভিন্ন দেশিয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুতর জখম করে ছিরু মিয়া এবং তার লোকজন । গুরুতর আহত হিরু মিয়া এবং আবু জাফরকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে মোহাম্মদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। অবস্থা গুরুতর বিবেচনা করে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। তারা এখন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পরে লিয়াকত আলী বাদী হয়ে তার ভাই এবং ছেলেকে আক্রমণ করে গুরুতর আহত করার অভিযোগ এনে মোঃ রিহাবুর রশিদ হৃদয়(২৫),মোঃ শাহরিয়ার হোসেন অপু(২০),মোঃ আশিকুর রহমান আশিক(১৯), ইমরুল হাসান সজীব(২০),মোঃ হারুনুর রশিদ(৪৫), মোঃ আবুল হোসেন (৪২), মোঃ ছিরু মিয়া(৬৫) ও মোঃ রফিকুল ইসলাম সহ মোট ০৮ জনকে আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় একটা হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেছেন।
এজহারে উল্লেখিত ৭ নাম্বার আসামি ছিরু মিয়ার কাছে অভিযোগের ভিতরে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উক্ত জমি তিনি এবং তার ভাইয়েরা মিলে দলিল মূলে জমির মালিক সৈয়দ আহমদ আলী এবং সৈয়দ ইউনুস আলীর নিকট থেকে ক্রয় করেছেন। এবং দলিলে উল্লেখিত জমির দক্ষিণ পাশে রাস্তা নির্মাণ করেছেন। তিনি আরোও জানান, প্রতিবেশী হিরু মিয়ার উপর তিনি বা তার লোকজন কোনরকম আক্রমণ করেননি। তাদের নিজের ভাইদের সাথে ঝামেলা থাকায় নিজেরাই হিরু কে পিটিয়ে আহত করে তাদের উপর দোষ চাপাচ্ছে।
ছিরু মিয়ার আরেক ভাই আকরাম মিয়া জানান, ঘটনার দিন তাদের বাড়িতে তেমন কোন পুরুষ লোক না থাকায় অভিযোগ করীরা দলবল নিয়ে এসে তাদের বাড়ির মহিলাদেরকে আক্রমণ করে এবং তাদের বাড়িঘর কুপিয়ে নষ্ট করে।
এজহারেরে উল্লেখিত ০৩ নং আসামি আশিকুর রহমান আশিকের মা শাবানা বেগম জানান, এই ঘটনার সাথে তার ছেলে আশিকের কোন সম্পৃক্ততা নেই তাকে বিনা কারণে তার ছেলেকে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তার দাবি, প্রতিপক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে তার ভাসুরের ছেলে সাগরকে আক্রমণ করলে সাগরের মা তার ছেলেকে বাঁচাতে গেলে আক্রমণকারীরা তার উপরও চড়াও হয় এবং তাদেরকে পিটিয়ে আহত করে
 মহম্মদপুর থানায় একটা মামলা দায়ের হয়েছে, ০২ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, ০৩ জন জামিনে আছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এবং মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.