শৈহ্লাচিং মার্মা রুমা প্রতিনিধি ঃবান্দরবানে রুমায় অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলোতে চলছে- লক্কর-ঝক্কর ফিটনেস বিহীন গাড়ি। বেশিরভাগ জিব গাড়ি, বি-সেভেনটি ও ল্যান্ড ক্রোজার গাড়ি-ই রাস্তায় চলাচলের নবায়নযোগ্য সনদ কিংবা ফিটনেস লাইসেন্স নেই। একইভাবে ওইসব গাড়ি চালকদেরও নেই- চালকের হালনাগাদ বৈধ কাগজপত্র। দীর্ঘদিন ধরে রুমা উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কেগুলোতে অবাধে চলছে। ওইসব ফিটনেস বিহীন গাড়ি ও অদক্ষ চালকের সড়কের দুর্ঘটনা সংঘটিত হলেও দায়সারা হয়ে পার পেয়ে যায়। এ অবস্থায় বাড়ছে- সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি।
গত মঙ্গলবার (১৮ফেব্রুয়ারী) রুমা বাজারে বাসের ধাক্কায় নয় বছর বয়সী মরি ত্রিপুরা নামে এক শিশু শিক্ষার্থী মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার পর এইসব কথা এখন সবার মুখে মুখে।
স্থানীয়রা জানায়, বান্দরবান রুমা সড়কে বাস সার্ভিস ছাড়াও রুমা উপজেলার মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রাস্তায় জিপ গাড়ি দিয়ে যাত্রী ও বাগানসহ পাহাড়ি জুমে উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষি পণ্যসহ নানা জিনিস পত্র আনা-নেয়া করে থাকে।
যান্ত্রিক বাহনযোগে মালামাল পরিবহন ও যাত্রী আনা-নেয়া সুবিধা বৃদ্ধি পেলেও বেড়েছে- সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা।
রুমা সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার জনমনি ত্রিপুরা বলেছেন, অতি সম্প্রতি রুমা-বগালেক রাস্তা, বেথেলপাড়া হতে চাইরাগ্র, আরথাহ্ , বাসাত্লাং, মুননুয়াম ও মুলপি রাস্তায় জিপ গাড়ি চলাচলের প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও রুমা-বগালেক-কেওক্রাডং রাস্তায় ট্রাক ও জিপ গাড়ির আলাদা আলাদা সড়ক দুর্ঘটনায় পর্যটক এবং স্থানীয় নারীদের প্রাণহানির উল্লেখযোগ্য সংখ্যা আমাদের অবর্ণনীয় ব্যথিত করে। রুমা সদর ইউনিয়নের পলিকা- সামাখাল পাড়ার রাস্তায় জিপ গাড়ির অদক্ষ চালকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সংঘটিত দুর্ঘটনায় এক নারীর তাজা প্রাণ হারান এবং বেশ কয়েকজন গুরুত্বর আহত হন।
এসব নিরাপদ সড়ক, সুষ্ঠু গাড়ি পরিচালনা ও ব্যস্থাপনার অভাবে এসব দুর্ঘটনা হচ্ছে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন।
রুমা বাজারে কসমেটিক ব্যবসায়ী পলাশ চৌধুরী বলেন, লক্কর-ঝক্কর ও ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলোকে অদক্ষ চালক এর মাধ্যমে গাড়ি চালাতে দেয়ায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।
এতে অকালে শিশুসহ প্রাণ হারিয়েছেন- অনেকেই।
অদক্ষ চালকদের দিয়ে গাড়ি চালাতে দেয়া উচিত নয় বলে মনে করেন পলাশ চৌধুরী।
রুমা বাজারে প্রধান সড়কে কসমেটিক দোকান করেন এমন আরেকজন ব্যবসায়ীর নাম- লিটন চক্রবর্তী। তিনি বলেছেন, হাটের দিনে রাস্তা দুই ধারে বসে পাহাড়ী মেয়েরা শাকসবজি ও তরি-তরকারি বিক্রি করে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ইসিবি’র বিভিন্ন রাস্তার উন্নয়ন কাজ করছে। মালামাল নিয়ে বড় বড় ট্রাক চলাচল করে- বাজার মাঝখানে দিয়ে। এতেও যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। এসব বড় বড় ট্রাক হাটের দিন অর্থাৎ প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার চলাচল না করতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া গেলে বিশেষ করে বাজারে সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে উপকারে আসবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
ফিটনেস বিহীন গাড়ি রাস্তায়্য সার্ভিস দেয়ার ব্যাপারে
রুমা বাজার ব্যবসায়ী সমিতি সভাপতি ও জিপ মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি মোঃ খলিলুর রহমান বলেছেন, এখানে জিপ ও ল্যান্ডক্রোজার মিলে আগে প্রায় ৬০টির কোনোটি-ই গাড়ির লাইসেন্স থাকবে না। গাড়িগুলো অধিকাংশ কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে নিলামে কিনে নেয়া। মালিক পক্ষ থেকে এর মধ্যে সবাই বসে চালক ও গাড়িগুলোর লাইসেন্স করে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
তবে গাড়ির বৈধ কাগজপত্র না থাকলেও নিলামে ক্রয় করার বৈধ কাগজ আছে বলে দাবি করেন সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দস্তগীর।
বৈধ কাগজপত্র বিহীন অদক্ষ চালক বিষয়ে জানতে চাইলে রুমা গাড়ি চালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ হাসান বাবু বলেছেন, সব চালকের বৈধ কাগজপত্র হাতে না থাকলেও ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা আছে। হেল্পারদের গাড়ি চালাতে দেয়া হয় না বলে জানালেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবু।
এদিকে গাড়ি ও চালকের বৈধ কাগজপত্র ব্যাপারে স্থানীয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রুমা থানা অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দিয়েছেন- বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার এসপি মোঃ শহিদুল্লাহ কাওছার পিপিএম। মঙ্গলবার (১৯ফেব্রুয়ারী) দুপুরে রুমা বাজার শেডে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় স্থানীযরা বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার এই নির্দেশ দেন।