মাগুরার শ্রীপুরে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে মাটি ও পাটকাঠির ঘরে অসহায় জীবনযাপন করছেন হাশেম শেখ

খন্দকার নজরুল ইসলাম মিলন  মাগুরা প্রতিনিধি: মাটি ও পাটকাঠির ঘরে ১০ বছর ধরে অসহায়ভাবে বসবাস করছেন স্ত্রী ও দুই সন্তানের জনক মোঃ হাশেম শেখ। শীতসহ ঝড়-বৃষ্টি সবই তাদের সইতে হয় নিদারুণ কষ্টে। দীর্ঘ ২০ বছরের সংসার জীবনে একটি ছোট্ট ঘর তুলতে পারেননি টাকার অভাবে।

হাশেম শেখের বাড়ি মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার সব্দালপুর ইউনিয়নের তারাউজিয়াল গ্রামে। মোঃ হাশেম শেখ জানান, বিবাহের পরে শ্বশুরবাড়িতে ঘরজামাই থেকেছেন আট বছর। দুই বছর থেকেছেন সরকারি রাস্তার ধারে ছাপড়া ঘরে। কিন্তু রাস্তা উন্নয়নের পর বাধ্য হয়ে ঘর ভেঙ্গে ফেলতে হয়। এরপর চলে আসেন বড়ো ভাই আব্দুর রশিদ শেখের বাড়িতে। সেখানে তিন শতক জায়গা দেন এক প্রতিবেশী। সেই জায়গায় মাটি ও পাটকাঠি দিয়ে তৈরি ঘরে বসবাস করছেন দীর্ঘ ১০ বছর। বসবাসের উপযোগী ভালো মানের টিনের ঘর নির্মাণের জন্য কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি, সরকারি চাকুরিজীবী, কিংবা কোনও প্রতিষ্ঠান যদি সহায়তা করেন তাহলে অনেক উপকৃত হবো।
তিনি আরও বলেন, মাটি ও পাটকাঠির ঘরের মধ্যে থাকতে অনেক সমস্যা হয়। বিশেষ করে বৃষ্টির সময় ভেতর ও চারপাশ স্যাঁতসেঁতে থাকে। মাটির ভেতর থেকে পোকা-মাকড় বেরিয়ে পড়ে। জীবনযাপনের জন্য যে দু-চারটি আসবাবপত্র রয়েছে সেসব নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া শীতে ভীষণ কষ্ট হয়। আমাদের মাথার ছিদ্রিত টিন। শীত নিবারণের তেমন গরম কাপড়ও নেই। এসব কথা বলার সময় কেঁদে হাশেম শেখ ও তার স্ত্রী। তার স্ত্রী বলেন, আমি প্রতিবেশীদের বাড়িতে কাজ করি। সংসারের চিন্তায় তার স্বামী হাশেম শেখের অসুখ বিসুখ লেগেই থাকে।
এরপরও দিনমজুরি করেন। কিন্তু একজনের সামান্য রোজগারের টাকায় চারজনের সংসার চালানো অসম্ভব। অভাবের তাড়নায় দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারি না। তিনি বলেন, দুই ছেলে পড়ালেখায় ভালো। বড়ো ছেলে চতুর্থ শ্রেণিতে ও ছোটো ছেলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে নোহাটা উওর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সমাজের বিত্তবানদের মধ্যে কেউ ছেলেদের পড়ালেখার ব্যয়ভার বহন করার দায়িত্ব নিলে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারত। মঙ্গলবার (৭-ফেব্রুয়ারী) সরেজমিনে দেখা যায়, মাটি ও পাটকাঠির ঘর বানিয়ে সেই ঘরের মধ্যে রয়েছেন হাশেম শেখ, তার স্ত্রী ও দুই ছেলে। ঘরের ওপর ছিদ্রিত টিন ও বারান্দার ওপর তাল পাতা দিয়ে রেখেছেন। কনকনে ঠান্ডা বাতাস থেকে বাঁচতে ঘরের কিছু জায়গায় তালপাতা দিয়ে রেখেছেন। বাড়িতে উঠান নেই বললেই চলে। নেই মানসম্মত টয়লেট ও টিউবওয়েল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হাশেম শেখ ও তার স্ত্রী খুব অসহায় এক দম্পতি। তাদের কোনো ঘর নেই। এরা প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেলে গোটা গ্রামবাসী খুশি হতো।

Leave a Reply

Your email address will not be published.