কালের সংবাদ ডেস্কঃ এই দেশের প্রথম নারী ব্যাংক ম্যানেজার, নারী উদ্যোক্তা, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রোকিয়া আফজাল রহমান মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)। বুধবার রাতে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
আজ সন্ধ্যায় তার মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে মহিলা ও শিশু, শ্রম ও কর্মসংস্থান, সমাজকল্যাণ এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন রোকিয়া আফজাল রহমান। সর্বশেষ তিনি মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেড বাংলাদেশের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। রোকিয়া আফজালের জন্ম ১৯৪১ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর কলকাতায়। বাবা ব্যারিস্টার খোন্দকার আলী আফজাল ছিলেন বঙ্গীয় আইন পরিষদ বা বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সচিব, মা সাদিয়া আফজাল ছিলেন শিক্ষানুরাগী।
কলকাতা ও করাচিতে লেখাপড়া শেষ করে রোকিয়ার কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬২ সালে করাচিতে মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকে। দুই বছরের মধ্যে তিনি ব্যাংকটির তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান শাখার ব্যবস্থাপক হন। দেশে প্রথম কোনো নারীর ব্যাংক ম্যানেজার হওয়ার ঘটনা সে সময় আলোচনার জন্ম দেয়। পরে তিনি মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেডের উদ্যোক্তা পরিচালক এবং রিলায়েন্স ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের পরিচালক হন।
বোর্ড সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিন বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের। ১৯৮০ সালে নিজেই কৃষিভিত্তিক ব্যবসা শুরু করেন রোকিয়া, গড়ে তোলেন আর আর কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড। পরে আরলিংকস লিমিটেডেও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। দেশের অন্যতম নারী উদ্যোক্তা রোকিয়া আফজাল আরিস হোল্ডিংস, ইমান কোল্ড স্টোরেজেও বিনিয়োগ করেন। তিনি ডেইলি স্টারের মূল কোম্পানি মিডিয়াওয়ার্ল্ড লিমিটেডের চেয়ারপারসন এবং প্রথম আলো’র মূল কোম্পানি মিডিয়া স্টারের পরিচালক ছিলেন। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও এশিয়ান উইম্যান ইউনির্ভাসিটির চেয়ারম্যান ছিলেন রোকিয়া আফজাল। বাংলাদেশ নারী উদ্যোক্তা ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন রোকিয়া আফজাল। এ ছাড়াও মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ছিলেন কয়েকবার। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের সহ-সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্র্যাক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টান্যাশনাল, বাংলাদেশ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে ২ মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন রোকিয়া আফজাল রহমান।