কালের সংবাদ ডেস্কঃ ইউজিসি ক্রমান্বয়ে পেপারলেস সার্টিফিকেটের দিকে যেতে চায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এই গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আয়োজনে প্রধান ভূমিকা পালন করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইতিমধ্যে গুচ্ছের পর একক ভর্তি পরীক্ষার দিকে এগুচ্ছে ইউজিসি। এই পরীক্ষা আয়োজন করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে আগামী বছর থেকে। আবার এই একক ভর্তি পরীক্ষা সুচারুভাবে পালনের জন্য ক্রমান্বয়ে গঠন করা হবে ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ)। এসব পরিকল্পনার মাঝে নতুন করে আলোচনায় এসেছে পেপারলেস সার্টিফিকেট।
কী এই পেপারলেস সার্টিফিকেট? পেপারলেস সার্টিফিকেট হচ্ছে, কাগজ ছাড়া অনলাইনে সার্টিফিকেট প্রদান। কাগজের মাধ্যমে যেভাবে শিক্ষার্থীর তথ্য সংরক্ষিত থাকে ঠিক একইভাবে এই তথ্যগুলো অনলাইনে সংরক্ষিত থাকবে। কাগজের সার্টিফিকেট হারিয়ে যেতে পারে, হতে পারে নষ্ট। এই কাগজের সার্টিফিকেট কপি সংশ্লিষ্ট অফিস থেকেও হারিয়ে যেতে পারে।
ডিজিটালি সার্টিফিকেট প্রদানের মাধ্যমে এটি হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে না। তবে অনলাইনে এই সার্টিফিকেট কপি সংরক্ষণ করতে হবে খুবই গুরুত্ব সহকারে এবং রাখতে হবে একাধিক ব্যাকআপ।
পেপারলেস সার্টিফিকেটের মোটাদাগে কয়েকটি উপকার হলো-
সময় বাঁচায়: অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়ন শেষ হওয়ার পর সার্টিফিকেট পেতে শিক্ষার্থীদের দেরি হয়ে যায়। যার কারণে চাকরিতে প্রবেশ, বিদেশ গমন কিংবা বিভিন্ন কাজে কালক্ষেপণ হয়। অনেক শিক্ষার্থীকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বার বার তাড়া দিতে হয়, অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘদিন। পেপারলেস সার্টিফিকেট হলে এই সময়ক্ষেপণের বিষয়টি আর থাকবে না।
দ্রুত তথ্য আদান: পেপারলেস সার্টিফিকেটের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর সার্বিক ফল খুব সহজেই অনলাইনের মাধ্যমে দেখা যাবে। ফলে সার্টিফিকেটের ফটোকপি বা মূল কপির জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। বিশেষ করে চাকরির ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট কপি জমা দেয়া কিংবা ভুয়া সার্টিফিকেট প্রদানের বিষয়টি থেকে মুক্তি মিলবে।
পরিবেশবান্ধব: পেপারলেস সার্টিফিকেট পরিবেশবান্ধব। এর কারণে কাগজের ব্যবহার কমে আসবে। এক সার্টিফিকেট বার বার ফটোকপি করে জমা দেয়ার বিষয়টি আর থাকবে না। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠানে গাদা গাদা বছরের পর বছর ধরে পুরনো কাগজ সংরক্ষণ করতে হবে না।
হারিয়ে যাওয়ার ভয়: সার্টিফিকেট হারিয়ে যাওয়ার ভয় সবসময় থাকে সকলের মধ্যে। আছে পুড়ে যাওয়ার ভয়ও। এ ছাড়াও আছে বছরের পর বছর সংরক্ষণের ঝামেলা। ডিজিটালি পেপারলেস সার্টিফিকেট হলে থাকবে না এসব ভয়।
সংশোধন: সার্টিফিকেট সংশোধনের সমস্যায় ভোগেন অনেক শিক্ষার্থী। নাম কিংবা কোনো তথ্য ভুল থাকলে এটি নিয়ে দৌড়াতে হয় এক টেবিল থেকে আরেক টেবিল। পেপারলেস সার্টিফিকেট হলে জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো সহজেই মিলবে সংশোধনী।
অর্থের অপচয় রোধ: সর্বোপরি পেপারলেস সার্টিফিকেট বাস্তবায়ন হলে প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে কমে আসবে অর্থ ব্যয়ের বোঝা।
দীর্ঘদিন ধরেই ইউজিসি ডিজিটালাইজেশনের কথা বলে আসছে। সেইসঙ্গে পরিকল্পনা করে আসছে শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়নের। এরই মধ্যে গুচ্ছ ভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সমালোচনা থাকলেও সুফল নিয়ে দ্বিমত করেনি কেউ। আবার সামনের বছর থেকে একক ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করতে যাচ্ছে ইউজিসি। পরিকল্পনায় রয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) আদলে এনটিএ গঠনের। এরইমধ্যে একাধিকবার ইউজিসি কর্তা ব্যক্তিদের মুখে শোনা গেছে পেপারলেস সার্টিফিকেটের কথা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমরা সব বিশ্ববিদ্যালয়কে অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসতে চাই। সেইসঙ্গে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটও অটোমেশনের মাধ্যমে আনতে চাই এক আমব্রেলার নিচে। এই কারণে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে পেপারলেস সার্টিফিকেট বিতরণ করার। আমরা আমাদের প্রজেক্ট সরকারকে দিয়েছি। অর্থ মিললেই এই কাজ শুরু করবো। আমাদের লক্ষ্য ২০২৪ সাল থেকেই কার্যক্রম শুরু করার। এর মাধ্যমে সার্টিফিকেট সহজেই সবার কাছে পৌঁছানো যাবে এবং শিক্ষার্থীরা পূর্বের থেকে আরও অধিক হারে মূল্যায়িত হবেন।